বেল্লিক রামায়ণ/চূড়ান্ত চটক

সপ্তম কাণ্ড।

চূড়ান্ত চটক।

এদিকেতে শ্রীবেল্লিক পত্র লিখে স্ত্রীরে।
উত্তর না পায় কিন্তু দিনেকের তরে॥
যত পত্র আসে তার না মিলে উত্তর।
ব্যাকুল হইল বড় পরাণ-ভিতর॥
কি যে কাণ্ড-কারখানা নারেন বুঝিতে।
শীঘ্রগতি আসিলেন চলিয়ে বাড়ীতে॥
কিন্তু হায় কোথা তার পত্নী অভাগিনী।
শূন্য ঘর মাত্র পোড়ে দিবস রজনী॥
জিজ্ঞাসেন এরে ওরে কে কিন্তু বলিবে।
কে ছিল কোথাকে গেল কেবা তা জানিবে॥
অথবা যদ্যপি কেহ থাকিত এমন।
জানিত যে ঘুণাক্ষরে কিছু বিবরণ॥
সেও কি বলিত কভু নিরেটের ভয়ে।
কেবা না অন্তর-মাঝে উঠিত কাঁপিয়ে॥
অতি ভয়ানক লােক সে নিরেটরাম।
ছােট বড় সর্ব্বজন কাঁপে শুনিলাম॥

“হায় হায় কি হইবে” সদা চিন্তা মনে।
নাহিক কিঞ্চিৎ সুখ শয়নে স্বপনে॥
জিজ্ঞাসয় মোহিনীরে “কহ ত মোহিনী।
কি করি এখন আমি কোথা সে রমণী?
হায় হায় যত কিছু আমারি দোষেতে।
নিশ্চয় হরিল দর্প তারে কোনমতে॥”
কহিল মোহিনী “কি বা অসাধ্য তাহার।
কিন্তু এক কথা সে ত গেছে কারাগার॥
কারাগার হতে লোক বাহিরিতে নারে।
কেমনে হরণ তবে করিল তাহারে?”
ভাবিল বেল্লিক “তাও সত্য কথা বটে।
যাই হোক, কে বা তবে হরিল কপটে?”
হেথা সেথা করি নিত্য খুঁজিতে লাগিল।
উদ্দেশ কিছুতে কই নাহি ত হইল॥
এ গলি ও গলি করি কত গলি ফেরে।
কিন্তু পাঁচ ছয় মাস গত হেন কোরে॥
কিছুতে উদ্দেশ নাহি হয় ত তাহার।
সদাই বেল্লিকরাম করে হাহাকার॥
ক্রমে আরো ছয়মাস অতীত হইল।
কিছুতে সন্ধান তার নাহি ত ঘটিল॥
এদিকে নিরেটরাম সঙ্গে দর্প আর।
মুক্ত হয়ে আসে ক্রমে হতে কারাগার॥

দেখিল বেল্লিকরাম এসেছে এখানে।
ঝটিতি লুকাল তারে আরো সঙ্গোপনে॥
ঘটনাক্রমেতে যেথা রাখিয়া আসিল।
রাজার জানিত অতি সেই স্থান ছিল॥
রাজার শ্বশুরবাড়ী হয় সেই স্থানে।
একদিন পড়ে দর্প রাজার নয়নে॥
সংবাদ পাইল রাজা কেন হেথা আসে।
কাড়িয়া আনিল অভাগীরে নিজ বাসে॥
যেমন তাহারা তার মােহিনী হরিল।
তেমতি রাজাও অভাগীরে কাড়ি নিল॥
কাঁদিতে লাগিল কিন্তু সেই অভাগিনী।
রাজার চরণে পড়ি যােড় করি পাণি॥
বলিল “হে মহারাজ! তুমি দয়াময়।
অতি দুর্ভাগিনী আমি দাও হে অভয়॥
পতিব্রতা আমি কভু নাহি অন্যমনা।
স্বামী বিনে ত্রিজগতে কারেও জানি না॥
বটে মম স্বামী হয় অতি কদাচারী।
তােমার মােহিনী-ধনে করিয়াছে চুরি॥
দেছে দাগ অতিশয় ও কোমল-প্রাণে।
কিন্তু কোন্ দোষে দোষী আমি সে কারণে?
আমারে আটক রাখি হবে কিবা ফল।
বরঞ্চ মিলাও আনি সে মম সম্বল॥

ভিক্ষা দাও মােরে মাের স্বামীধনে আনি।
চিরদিন তব যশ গাহিবে অবনী॥
ঈশ্বর হবেন তুষ্ট তােমার উপর।
দুঃখিনীরে দয়া যদি কর নরবর।
আমিও ছিলাম বড় ধনীর নন্দিনী।
দুঃখ যে কেমন তাহা কখন না জানি।
পড়িনু কপালদোষে বানরের করে।
দুঃখের নাহিক শেষ তাই আঁখি ঝরে।
অতি গরীবের ছেলে ছিল মম পতি।
পেটে ভাত চলে হেন না ছিল সঙ্গতি॥
অর্থব্যয়ে বিদ্যা পিতা শিখালেন তারে।
বহু যত্নে মানুষ করেন অতঃপরে।
কত আশা করিয়ে করেন এ সকল।
ভস্মে কিন্তু ধৃত যেন ঢালা অবিরল।
কোন ফলােদয় নাহি হইল তাহার।
যেমন কপাল পােড়া লভ্য মাত্র ক্ষার।
যাই হােক, রাখ মান—কর রাজা দয়া।
আশ্রিত ভাবিয়ে মেরে দেহ পদছায়া॥
বনেদী ঘরেতে জন্ম হয়েছে তােমার।
বনেদীর মত কর এবে ব্যবহার।”
রাজা কহে, “ভাল ভাল, তাই সে করিব।
আনিয়া স্বামীরে তব মিলাইয়ে দিব।

কিন্তু এক নিবেদন বল দেখি শুনি।
বনেদীর মত ব্যবহার কিবা ধনি॥
বনেদী ও গর্‌বনেদী কি প্রকার হয়।
বুঝাও আমারে দয়া করি পরিচয়॥
শুনি তব শ্রীমুখেতে শীতলিব প্রাণ।
বেল্লিকের রামায়ণ অপূর্ব্ব আখ্যান॥
পাঠমাত্রে যত নর দিব্যজ্ঞান পায়।
এমন অমূল্য গ্রন্থ নাহিক ধরায়॥
বন্ধ্যা নারী পুত্র পায় শুনি এ কাহিনী।
মৃতবৎসা-পুত্র যত বাঁচয় তখনি॥
প্রদীপ-বর্জ্জিত গৃহে জ্বলে শত আলো।
ক্ষণেকে মুছিয়ে যায় অন্তরের কালো॥