বেল্লিক রামায়ণ/দণ্ডবিধি কথন

অথ দণ্ডবিধি কথন।

অতি মাতৃভক্ত হয় শ্রীদর্পনারাণ।
বিশ্বাস জন্মাতে শুন তাহার প্রমাণ॥
একদিন পত্নী তার চুলোমুখী নামে।
কোন্দল করিল তার জননীর সনে॥
শুনায় বহুৎ কথা কোন্দলের মুখে।
জননী তাহার তাই কান্দে মনোদুঃখে॥
অভিমানভরে রহে শুয়ে বিছানায়।
হেনকালে দর্পবাবু আগত তথায়॥
দেখেন জননী তাঁর আছেন শুইয়া।
ফুলিয়াছে চক্ষু তাঁর কাঁদিয়া কাঁদিয়া॥
জিজ্ঞাসা করেন মায়ে, “কহ গাে জননি।
কি হেতু সহসা আজি হেরি গো এমনি॥
আনত-আননে শুয়ে মেঝের উপর।
ঝরিছে নয়নে জল লুটে কলেবর॥
সঘনে নিশ্বাস টান-ঝড় যেন বয়।
কি মনোদুঃখেতে মা গাে হেনখানা হয়॥
কিছু ত বুঝিতে নারি কি হলো ব্যাপার।
কি হেন যন্ত্রণা উঠে হৃদয়ে তােমার॥
অপার যন্ত্রণা এ যে কি তাহে সংশয়।
সামান্য আঘাতে কভু গিরি কি কাঁপয়॥

বল গো মা শীঘ্র বল কি হলো কি হলো।
দেখিয়ে দুর্গতি তব প্রাণ যে ফাটিল॥
স্বর্গ হতে গরীয়সী তুমি মা আমার।
আমি কি দেখিতে পারি দুর্গতি তোমার॥
প্রাণ যদি যায় মম তব দুঃখনাশে।
অবশ্য করিব তাহা কহি তব পাশে॥
সাধিতে তোমার কাজ প্রস্তুত সতত।
আছি আমি সুনিশ্চয় জানিও গো মাত॥
বল কে করিল ও মা এ দুর্গতি তব।
এখনি উচিত শিক্ষা তাহারে যে দিব॥
হলেও জগৎছাড়া সেই জন গো মা।
কিছুতে না ছাড়ি তারে—করি কিম্বা ক্ষমা॥
ছলে বলে কৌশলে যেমনে তায় পারি।
অবশ্য বধিব তারে যেহেতু সে অরি॥
প্রাণ হতে প্রিয় যেই তব বধূমাতা।
সেও যদি হয় তবু তাহে না মমতা॥
মস্তক ছেদন তার করিব এখনি।
কি ঘটনা ঘটিয়াছে বল মাতা শুনি॥”
শুনি মাথাকাটা কথা জননী তখন।
চমকিত হয়ে কহে যত বিবরণ॥
এতক্ষণ অভিমানে ছিলেন মানিনী।
বাহির করেননিক একটিও বাণী॥

বধূর উপরে চটি সুতেও বিমুখ।
তেঁই সে খেদেতে নাহি তুলিলেন মুখ॥
যখন সন্তান কিন্তু বলেন এমন।
“কাটিব মস্তক, হেন করেছে যে জন॥
হােক্ না সে পত্নী মম, তারে ও না গণি।
স্বহস্তে মস্তক তার কাটিব এখনি॥”
তখন না কহি বাণী নারেন থাকিতে।
ধীরে ধীরে তেঁই এবে লাগেন কহিতে॥
“ওরে বাবা এ কি কথা কহিলি রে তুই।
তোর কথা শুনে আরো দুঃখিতা যে মুই॥
মুখে কি শাসন নাই, না কাটিয়ে মাথা।
শুনিনি ত কভু হেন সৃষ্টিছাড়া কথা॥
করিয়াছে অপরাধ বধূ বটে সেই।
রাগ যে করেছি আমি, তার উপরেই॥
হেন হতচ্ছাড়ী ছুঁড়ী দেখিনিক আর।
শাশুড়ীর ঝগড়া তবু সহিত আমার॥
কুঁদুলে যে হয় তার না যায় স্বভাব।
সদাই কোন্দল চেষ্টা নাহি অন্য ভাব॥
কিসে সুখী হবে সেই আমার ভাবনা।
সে কি না সতত করে আমারে তাড়না॥
এ বুড়া বয়সে আর কত বল সয়।
বাঁচি রে এক্ষণে যদি মৃত্যু মম হয়॥

না মরিলে সুনিশ্চয় নাহিক নিস্তার।
করিবেক অপমান কবে বা আবার॥
যায় প্রাণ যাক তাহে ক্ষতি নাহি গণি।
বউ করে অপমান না যায় সহনি॥
স্বামী গেছে যেই দিন নিয়াছি ত বুঝে।
এখন কেবলি অপমান বিশ্বমাঝে॥
তুমি পুত্র বটে ভাল, থাক বেঁচে বাপ।
কিন্তু তুমি ঘুচাইবে কিসে মনস্তাপ॥
হয়েছে যে বউ তব সাক্ষাৎ ডাকিনী।
খেয়ে না ফেলিলে হয় তােরে যাদুমণি॥
রেখেছে ময়না বুড়ী নাম সে আমার।
ঘৃণায় যে মরি এ কি দুর্গতি অপার॥
থাক বাছা সুখে সবে করি আশীর্ব্বাদ।
কি কাজ এ বৃদ্ধকালে বাড়ায়ে বিষাদ॥
দুটি ছেলে আছ বাপ্ তােমরা এক্ষণে।
পাঠাও আমায় কাশী, কিম্বা বৃন্দাবনে॥
সংসার বন্ধন আর কেন এতখানি।
ছেড়ে দিয়ে বাঁচাও রে মােরে যাদুমণি॥”
এইরূপ বলি কত কাঁদে সেই বুড়ী।
ক্রোধে দর্পবাবু তবে ফাটান্ সে বাড়ী॥
বলে “কি আস্পর্দ্ধা এতখানি হয় তার।
অপমান করে সেই মাতার আমার॥

আমার যে গুরুজন তারে অপমান।
কেমনে আমার কাছে বাঁচায় সে প্রাণ॥
উচিত প্রাণেতে মারা এখনি তাহারে।
নারীহত্যা পাপ তেঁই নাহি ফেলি মেরে॥
হাতেও প্রহার করা নহে ত উচিত।
ছােটলােকি ধরণে সে অতীব কুচ্ছিৎ॥
অতএব তাহাও না করিব ত আমি।
করিব যা এখনি তা দেখিবে গো তুমি॥
হাতে না মারিয়ে আমি মারিব ত ভাতে।
হেন শাস্তিদান আর নাহিক ভারতে॥
ক্ষুধায় আকুল হয়ে কাঁদিতে থাকিবে।
কত ধানে কত চাল তখন বুঝিবে॥
জানে না যে মাতৃভক্ত কতটা সে আমি।
উত্তম মধ্যম শাস্তি দিব ত এখনি॥
তুমি মাের জননী গো তোমার সাক্ষাতে।
বলিনু এ সার কথা, কিছু নহে মিথ্যে॥
প্রতিজ্ঞা আমার এই রহিল অটল
শ্রবণ মাত্রেতে দেহ করি দিবে জল॥
যতক্ষণ আজিকার এ দিন রহিবে।
ততক্ষণ ভাত নাহি খাইতে পাইবে॥
নামটি ভির্কুটবীচি—হয় এ ভাতের।
ভক্ষণ মাত্রেতে বাড়ে ভির্কুটি নরের॥

অতএব ভাত আজ না দিব ত খেতে।
ভির্কুটির কমি নাহি হবে ত কিছুতে॥
হাতে না মারিয়ে ভাতে মারিতে যে চাই।
সুন্দর উপায় হেন দ্বিতীয় ত নাই॥
আদেশ রহিল মম এই ত এক্ষণে।
বড়ই ব্যথিত আমি তব অপমানে॥
তােমার সুখেই সুখ জানি ত আমার।
তােমার কষ্টেতে কষ্ট বাড়য় অপার॥
অতএব উচিত ত হয় প্রতীকারে।
নতুবা বড়ই বাড় উঠিবেক বেড়ে॥”
শুনিয়ে জননী তার গণয়ে প্রমাদ।
বলে, “এ যে আরো তুই বাড়ালি বিষাদ॥
ভাত না খাইতে দিবি, এ কেমন কথা।
বাঁচিবে কেমনে তবে, শুনে পাই ব্যথা॥
মুখেতে বকিলে কি রে হয় না’ক ঢের।
এ কি বিধি বিপরীত, ছাড়া জগতের॥”
বলে দর্প, “নহে দর্প ঘুচিবেক কিসে।
ভাতেতে বড়ই রস জানে সব দেশে॥
না মারিলে ভাতে রস যাবে না ত কমে।
অধিকন্তু এই ভাব বাড়িবেক ক্রমে॥
মুখেতে শুনায়ে দেছে আজিকে কেবল।
কালিকে প্রহার পারে হতে অবিরল॥

অতএব এই বেলা চেক্ করা চাই।
নতুবা দারুণ বৃদ্ধি হবে,—ভুল নাই॥”
বলে বুড়ী, “কিছুতে করিবি না’ক ক্ষমা?”
দর্প কহে, “ক্ষমা কথা বলো না বলো না॥”
অতঃপর ক্রোধভরে যায় দর্প চলে।
দুঃখেতে দুঃখিনী বুড়ী ভাসে আঁখিজলে॥
বলে, “হায় হায় এ কি হ’ল সর্ব্বনাশ।
সারাটি দিনটে বৌউ রবে উপবাস॥
আমি বা কেমনে তবে দিব অন্ন মুখে।
উপবাস আমার যে হইল আজিকে॥
দশমীর তিথি আজি কালি একাদশী।
সমগ্র কালিকে দিন রব উপবাসী॥
তার সঙ্গে আজি দিন মিলিত হইবে।
দুইটি দিবস উপবাসেতে যাইবে॥
কি করিব উপায় ত নাহিক ইহার।
এ দুঃখের কিছুতে ত নাহি প্রতীকার॥”
ভাবয়ে তখন বুড়ী, “কেন বা মরিতে।
বলিয়া দিলাম আমি ইহারি মধ্যেতে॥
আহারের পর সব বলিলেই হত।
তা হলে এতটা নাহি কিছুতে ঘটিত॥
বড়ই মুস্কিলে দেখি পড়িনু এখন।
কেমনে বা মুস্কিলের হয় নিবারণ॥”

এইরূপ নানা কথা ভাবিতে ভাবিতে।
সমগ্র দিনটে কেটে গেল কোনমতে॥
ক্রমে সন্ধ্যাকাল এসে হলো উপস্থিত।
শুইয়া পড়িল বুড়ী হইয়া ব্যথিত॥
ক্রমে আরাে দুই ঘণ্টা তিন ঘণ্টা যায়।
গৃহে দর্পবাবু উপস্থিত পুনরায়॥
দেখে উঁকি ঝুঁকি মেরে কোথায় জননী।
ঘুমায়ে বা আছে জেগে দেখে তা তখনি॥
দেখিল ভূমেতে পড়ি রয়েছে ঘুমায়ে।
তখন সে চুপি চুপি বাজারেতে গিয়ে॥
একটি টাকার নানাবিধ যে খাবার।
কিনিয়া আনিল শীঘ্র নিমিত্তে ভার্য্যার॥
উত্তম আলুরদম লুচি তর্‌কারী।
পানতুয়া মতিচুর জিলিপি কচুরি॥
সন্দেশ মােহনভােগ পেরাকী ও বুঁদে।
আনিল বৃহৎ এক রুমালেতে বেঁধে॥
চুপিচুপি নিজ গৃহদ্বারেতে আঘাত।
করয় সে ব্যস্ত হয়ে লাগাইয়ে হাত॥
মানিনী রমণী তার উঠে মানভরে।
খুলিয়া দিল যে দ্বার অতীব সত্বরে॥
পরে পুনরপি গিয়ে করয় শয়ন।
মহামানভরে মহা ক্রোধেতে তখন॥

দেখিয়ে বাবুর বড় করুণা সঞ্চার।
করযােড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করয় তাহার॥
বলে, “উঠ উঠ প্রিয়ে করো না’ক রাগ।
লইয়ে খাবার এই দেখাও অনুরাগ॥
সারাদিন খাওনিক কিছুই আজিকে।
নাহি জানি কত ব্যথা লাগিয়াছে বুকে॥
শীঘ্র উঠে খাও কিছু কর জলযােগ।
অকারণ কেন মিছে কর ক্লেশভোগ॥”
কহিছে মানিনী তবে, “কেন রস আর।
বােঝা গেছে ভালবাসা যতেক তোমার॥
ভাতেতে মারিবে মােরে বলিয়াছ তুমি।
কি সুখে জীবন আর ধরি তবে আমি॥
যেমনেতে পারি প্রাণ করিব ত বার।
অটল জানিও এই প্রতিজ্ঞা আমার॥
মানা করি তােমারে আর না বুঝাইবে।
কেন মিছে দশকথা এখনি শুনিবে॥
মারিবার সাধ যদি ফেল না মারিয়ে।
কি সুখ বা মাের তব হাতেতে পড়িয়ে॥
বিলক্ষণ পেনু সুখ পড়ি তব হাতে।
কি ভয় দেখাও আর বলিয়ে মরিতে॥
হবে না অধিক আর বলিতে তােমায়।
আপনি মরিব আমি জানিও ত্বরায়॥

বিষ খেয়ে, অথবা গলায় দিয়ে দড়ী।
অথবা জ্বলন্ত আগুনের মাঝে পড়ি॥
যেরূপেতে পারি প্রাণ বাহিরিব আমি।
মরিতে বিশেষ ভয় কি দেখাও তুমি॥”
কহে দর্পনারাণ তবে ত এই বাণী।
নিজ গুণে অপরাধ ক্ষম মােরে ধনি॥
কি করিব বল, আমি লােকরঞ্জনেতে।
অগত্যা কহেছি হেন, নাহি মিথ্যা ইথে॥
না কিছু করিলে লােকে কি মােরে বলিত।
অবােধ নহে ত তুমি কিছু বুদ্ধিযুত॥
আর এক কথা দেখ মারিব ভাতেতে।
এইমাত্র বলেছি ত নহে খাবারেতে॥
বাজারের খাদ্য দ্রব্য কেন না খাইবে।
ইহাতে ত সত্য মাের লঙঘন না হবে॥”
বুঝে দেখ পাঠক হে, কত বিবেচক।
এই দর্পনারাণটি জগতে একক॥
বিবেচনা-শক্তিতে এমন কেবা আর।
ত্রিভুবনে দ্বিতীয়টি নাহিক ইহার॥
বেল্লিকে যে ধরে ইনি বুদ্ধিদান দিতে।
অসঙ্গত নহে ইহা, পারেন ধরিতে॥
কেন না বুদ্ধিতে ইনি জাহাজ বিশেষ।
ইহাঁর বুদ্ধির নাহি আছয় ত শেষ॥

অতঃপর এ গল্পের বাকী যে রয়েছে।
এইস্থলে সংক্ষেপেতে বলা তা যেতেছে॥
তারপর বেল্লিকের পুনশ্চ কাহিনী।
করিব আরম্ভ, ধৈর্য্য ধর ওহে জ্ঞানী॥
দর্পের কনিষ্ঠ এক ছিল সহােদর।
বিশেষ বাহ্যিক দৃষ্টি মাতার উপর॥
ছিল না তাহার; কিন্তু অন্তরে অন্তরে।
বাসিত বিশেষ ভাল তাহার মাতারে॥
বলিত সকলে তায় অতীব বওয়াটে।
দর্পেরেই মাতৃভক্ত বলি, দশে রটে॥
সে এইদিনেতে ছিল বাড়ীতেই বসে।
মায়েরে খাবার তরে বুঝায় কত সে॥
মা কিন্তু শুনে না কথা কিছুতেই তার।
জানিয়ে নিশ্চিত ভালে নাহিক আহার॥
বলিল জননী তারে, “ওরে হাবা ছেলে।
কেমনেতে ভাত আজি আমি দিব গালে॥
খায়নিক বউ আজি ভাত সারাদিনে।
কেমনেতে দিব ভাত আমি ছার্-বদনে॥
কি বলিবে লােকে মােরে, দিবে না কি ঘৃণা।
তা ছাড়া প্রাণেতে মাের ব্যথা কি বাজে না॥
আমার ছেলের বউ, অন্য পর নয়।
সে রয়েছে উপবাসী, এ কি সহ্য হয়॥

না হােক্ পেটের মেয়ে, তবু মেয়ে সম।
আমি কি হইতে পারি, এতটা নির্ম্মম॥
হায় রে অবােধ ছেলে দর্প রে আমার।
ঘটেতে কিছুই বুদ্ধি নাহি কি তােমার॥
আহা সে পরের বাছা কত কষ্ট পায়।
কেমনে আমার প্রাণে সহনে তা যায়॥”
তখন কনিষ্ঠ সেই তনয় তাহার।
বলে “মাতা, শুন তুমি বচন আমার॥
এখনি উঠিয়ে তুমি দাও কিছু পেটে।
কেন মিছে উপবাস সমস্ত দিনটে॥
তুমিই না খেয়ে শুধু মরিবে মা প্রাণে।
ব্যাঘাত না হবে কিছু বৌয়ের ভােজনে॥
সকালে উঠেই বাল্যভােগ ত করেছে।
দিনের উপসে কষ্ট কি তার হয়েছে॥
সন্ধ্যা হলে দাদা তারে খাওয়াবে এখন।
লাভে হতে তােমারি মা হবে না ভােজন॥
যত মাতৃভক্ত বলি ভাব মা দাদায়।
নিশ্চয় ততটা ভক্ত নন তিনি হায়॥
কেবল মুখেই ভক্তি, অন্তরেতে নয়।
নিশ্চয় জানিও মাতা, নিশ্চয় নিশ্চয়॥”
জননী কহেন তারে করি তিরস্কার।
“কহিতেছ তুমি, মন যেমন তােমার॥

জানি না কি তারে আমি, ধরেছি ত পেটে।
এতটা বয়স তারে আসিতেছি ঘেঁটে॥
তাহার চরিত্র মাের কি অজানা আছে।
অকারণ কেন মােরে বকাস্ রে মিছে॥”
সে তখন কহে, “ভাল, থাক তবে তুমি।
যার যা বুদ্ধির ফল কি করিব আমি॥
ভগবান্ করুন, দেখায়ে দিতে পারি।
তবেই মা ভেঙ্গে যায়, যার যত জারি॥”
এই বলি তথা হতে চলিয়ে সে যায়।
দাদার ঘরের পাশে ঘরেতে লুকায়॥
আসিল যখন দাদা, লইয়ে খাবার।
প্রবেশিল চুপি চুপি ঘরে আপনার॥
মিনতি করিয়ে স্ত্রীরে বলিতে লাগিল।
তখন মাতার কাছে কনিষ্ঠ যাইল॥
বলে “মাতা, শীঘ্র উঠ, নাহি করে দেরি।
বিপদ এদিকে দেখি হইল ত ভারি॥
বৌয়েরে বুঝিবা খুন করিলেক দাদা।
কি জানি কি হয় সেথা, লাগে বড় ধাঁদা॥
বুকেতে বসিয়া তার দাদাটী আমার।
টান দিয়ে জিহ্বা তার করিয়াছে বার॥”
মাতা কয়, “বলিস কি ওরে অলপ্পেয়ে।
কি সংবাদ দিলি তুই মাের মাথা খেয়ে॥

চল্ চল্ দেখি গিয়ে, কি হ’ল কি হ’ল।
পুত্র কয়, “চল মাতা, শীঘ্র চ’লে চল॥
এতক্ষণে প্রাণে বেঁচে বুঝি আর নাই।
নিশ্চয় বধূরে খুন করিয়াছে ভাই॥”
এই বলি, দাদার ঘরের পাশে গিয়ে।
চুপি চুপি দেখায় জানালা ফাঁক্ দিয়ে॥
বলে “মাতা, কি দেখিছ, করেনিক খুন।
বুঝে দেখদিকি, এইবার ওঁর গুণ॥”
অবাক হইয়ে মাতা গালে দেয় হাত।
কলির ছেলের সব(ই) আজবকা বাত॥