বেল্লিক রামায়ণ/বেল্লিকের ভাইগুলির ছাপাখানায় কার্য্যগ্রহণ
বেল্লিকের কনিষ্ঠ ভাইগুলির ছাপাখানায়
প্রবেশ ও কার্য্যগ্রহণ।
এদিকে দুঃখিনী পুত্রগণেরে লইয়ে।
যায় একদিকে চলে, অতি ক্ষুণ্ণ হয়ে॥
কি করিবে, কোথা যাবে, নাহি ভেবে পায়।
কেবলি কাঁদিছে আর করে হায় হায়॥
কেমনে উদর-অন্ন হইবে সংস্থান।
সেই চিন্তা শুধু সনে যতেক সন্তান॥
কিছুদূর যায় দেখে এক ছাপাখানা।
মনে ভাবে হেথা কিছু লভ্য হয় কি না॥
যদি এই শিশুগুলি কাজ কিছু করে।
দেয় কি না দেয় খেতে এরা এ সবারে॥
দাসী হয়ে কোন ব্রাহ্মণের বাড়ী গিয়ে।
করিব চাকুরী আমি মাথা নোয়াইয়ে॥
দুইটা পেটের ভাত, তাও কি দিবে না।
কোনমতে উদরান্ন করিব ক’জনা॥
ভাবি এইরূপ সেই ছাপাখানা-দ্বারে।
অতি সকাতরভাবে যায় ধীরে ধীরে॥
সম্মুখে বসিয়া তথা ছিল একজন।
সে ছাপাখানার কর্ত্তা সেই ব্যক্তি হন॥
জিজ্ঞাসেন তিনি “কিবা হয় অভিপ্রায়?
কে তুমি কাহার নারী এসেছ হেথায়॥”
কহিল দুঃখিনী তবে সকলি স্বরূপ।
বেল্লিকের রামায়ণ অতি অপরূপ॥
ছাপাখানা-অধিকারী সকল শুনিয়া।
দিলেন কিঞ্চিৎ স্থান সদয় হইয়া॥
নিকটেই বাড়ী তাঁর সেই সে বাড়ীতে।
দিলেন তাঁহারে পুত্র সনেতে থাকিতে॥
ভাড়া না প্রত্যাশা করি শুধু দয়াবশে।
দিলেন থাকিতে সবে সেই সে প্রদেশে॥
শিশুগণে ছপাখানা-করম শিখাতে।
দু দু-টাকা মাহিনায় নিলেন কাজেতে॥
কেহ কালি দেয় কেহ তুলে সে কাগজ।
কেহ করে আর কিছু, কেহ বা কম্পােজ॥
দুঃখিনীর উদরান্ন দেয় দশে মিলে।
কোনমতে গোছেগাছে দিন যায় চলে॥
হতভাগা বেল্লিকের তাহে কিবা ব্যথা।
শ্বশুরের দত্ত ধনে রাজ্য করে সেথা॥
তােফা মজা মারে মিলে পাঁচটী ইয়ার।
যে যা বলে বলুক গে ডু নট্ কেয়ার॥
শ্বশুর তাঁহার কিছু জানিতে না পারে।
জামাতা তাঁহার হেথা কত বুদ্ধি ধরে॥
তাড়ায়েছে জননীরে আর ভ্রাতাগণে।
এক বর্ণ তার নাহি পশে তাঁর কাণে॥
এলে পাশ ক্রমে সেই বেল্লিক যে দিল।
শ্বশুরো তাহার কিছু খরচ বাড়াইল॥
নগদ পঞ্চাশ টাকা করেন প্রেরণ।
উড়ায় বেল্লিক মজা কত সে এখন॥
এক কথা বলে যে এমন কেহ নাই।
যাহা ইচ্ছা মনে, করে বেল্লিক সদাই॥
আরো ক্রমে এক পাশ দিল অতঃপর।
বিদ্যায় নহেক মন্দ বেল্লিকপ্রবর॥
ধন্য কলিকাল, হেন বিদ্বান্ যে জন।
সে কি না মায়েরে দয়া না করে কখন॥
লেখাপড়াতেই হয় আত্মার উন্নতি।
তা না হয়ে হয় কি না আরো অবনতি॥
হায় বিদ্যা, তবে তব কিসের সম্মান।
কে তবে তোমারে হৃদে দিবে যত্নে স্থান॥
কিসের গুমর তব কিসের বা জারি।
তোমায় যে দেবী বলে কি ফল তাহারি॥
দেবী অধিষ্ঠান করে হৃদয়ে যাহার।
রহে কি চিত্তের কালি কখন তাহার॥
আরো বলি তোমারে হে দয়া নাম যার।
না জানি প্রকৃত স্থান কোথায় তোমার॥
দয়া যে পরম ধর্ম্ম, সকলেই কয়।
কিন্তু কেবা সে দয়ায় পূর্ণ বল হয়॥
কেবল মুখেই দয়া নামের প্রকাশ।
কাজে কিন্তু একটুও নাহিক বিকাশ॥
দাতা নামে হ’তে খ্যাত বাসনা সবারি।
সারাটি বিশ্বেতে দাতা কোথা কিন্তু হেরি?
মুখেতেই দাতা সব, কাজে দাতা নয়।
কেবল বচনে পটু সকলে নিশ্চয়॥
ধিক্ রে বাঙ্গালী তব বুদ্ধিজ্ঞান আর।
প্রকৃত মানুষ গণ্য কোথায় তোমার॥
বেল্লিকের রামায়ণ অতি সে অদ্ভুত।
চিত্রিতে বাঙ্গালী চিত্র বড়ই মজ্বুৎ॥
বেল্লিকজননী এইরূপে কিছু কাল।
রহেন তথায় লয়ে কয়টি ছাওয়াল॥
ছাপাখানা-অধিকারী বড় ভদ্র সেই।
মানুষ তেমন বিশ্বে বুঝি আর নেই॥
আপন মায়ের মত নিরখে তাঁহায়।
আপদ সে কোনরূপ নাহি তথা যায়॥
দেখিতে দেখিতে তথা দুইটি বৎসর।
হেনভাবে মনােমুখে কাটে অতঃপর॥
কোনই অভাব আর, নাহি কোন দুঃখ।
সদাই মনেতে পায়, দিব্য মনসুখ॥
কিন্তু যার কপালেতে দুঃখের লিখন।
কেমনেতে বেশী সুখ ভুঞ্জে সেই জন॥
আবার অদৃষ্টচক্র ফিরিয়া যে গেল।
আবার যে দুঃখহস্তে নিপতিত হ’ল॥
ছাপাখানা-অধিকারী সেই মহাজন।
শীঘ্রই রােগেতে পড়ি হারায় জীবন॥
তাঁহার মরণ যদি হইল এক্ষণে।
কে আর প্রস্তুত হবে তাঁদের রক্ষণে॥
সেই সে আশ্রয় শীঘ্র গেল যে ঘুচিয়া।
পুনঃ স্থানান্তরে তাই যাইল চলিয়া॥
শিখেছে কিঞ্চিৎ কাজ কয়টি সন্তানে।
পাইল অচিরে কোন কাজ দেখে শুনে॥
এখানেও একাক্রমে কাটে ছ-বৎসর।
বেল্লিক-জননী ক্রমে যায় লোকান্তর॥
সন্তান সকলে তবে হয়ে মাতৃহারা।
দিবানিশি মনখেদে কেঁদে হয় সারা॥
বেল্লিক এদিকে কিন্তু বেশ সুখে রয়।
অতঃপর লিখি কিছু তাহার বিষয়॥
বেল্লিকের নাম-গানে কত সুখ প্রাণে।
সার্থক বেল্লিক জন্ম নিল এ ভুবনে॥
হয়েছে বি-এল, পাশ এক্ষণে বেল্লিক।
যে না জানে এ কাহিনী ধিক তারে ধিক্॥