ব্যায়াম শিক্ষা (প্রথম ভাগ, ১৮৭৩)/৬
দুর্ঘটনার চিকিৎসা।
উত্তম নিয়মবিশিষ্ট ব্যায়ামশালাতে দুর্ঘটনা প্রায় ঘটেনা। কিন্তু দৈবাৎ যদি কোন প্রকার দুর্ঘটনা উপস্থিত হয়, যথা হাত পা ভাঙ্গা, হাড় সরিয়া যাওয়া, চোট লাগা, স্থান বিশেষ মচ্কান, বেদনা যুক্ত বা ক্ষত ইত্যাদি হওয়া, তাহার জন্য শিক্ষক ও ছাত্রদিগের প্রস্তুত থাকা আবশ্যক। যদি কোন অঙ্গের হাড় ভাঙ্গিয়া যায়, বা স্বস্থান হইতে সরিয়া যায়, তাহা হইলে তৎক্ষণাৎ সে অঙ্গ সহজ ভাবে রাখিয়া, তাহার উপর নেকড়া শীতল জলে ভিজাইয়া আবৃত করিয়া, চিকিৎসক আনাইতে হইবেক।
অনুপদিষ্ট লোক দ্বারা চিকিৎসা না করাইয়া,বরং চিকিৎসকের প্রতীক্ষায় থাকা ভাল। যদি কোন স্থানে চোট লাগে, বা কোন স্থান মচ্কে যায়, অথবা ক্ষত হয়, তবে তৎক্ষণাৎ ব্যায়াম হইতে ক্ষান্ত হইয়া শীতল জলের পটী দিতে হইবে। ক্ষত স্থানে যদি ধুলা, বালি, সুরকি বা অন্য কোন বস্তু সংলগ্ন থাকে, তবে সে সমস্ত শীতল জলে পরিষ্কার করিতে হইবে।
সর্ব্বদা ব্যায়ামশালার নিকট শীতল জল রাখা আবশ্যক। শীতল জলই ব্যায়ামকারীর সকল পীড়ার এক প্রকার মহৌষধ। জলের এক নাম যে জীবন, তাহা ব্যায়ামশালায় প্রত্যক্ষ করা যায়। ছিন্ন বস্ত্র শীঘ্র না পাইলে, চাদর বা পরিধেয় ধুতির কিয়দংশ ছিন্ন করিয়া লইতে সঙ্কুচিত হওয়া উচিত নহে।
ব্যায়াম জন্য সকল পীড়াতে চক্ষে ও মুখে শীতল জল দিতে হইবে এবং কিঞ্চিৎ জল পান করাইলেও দৌর্ব্বল্য নিবারণ হইবে। যদি মস্তকে কোন আঘাত জন্য ব্যায়ামকারী মূর্চ্ছিত হয়, তাহা হইলে চক্ষে, মুখে এবং বুকে সজোরে পুনঃ২ জলের ছিটা দিতে হইবে, ও মস্তকে প্রথমে জোরে জলের ছিটা দিয়া ক্রমে আস্তে আস্তে জল ধারাণী করিতে হইবে। গাড়ুর নলে জল সেচন করা বিধেয়। গাড়ু অভাবে ঘটিতেও এক প্রকার চলিতে পারে। যে যে স্থানে জল পটীর ব্যবস্থা করা গিয়াছে, সেই সেই স্থানে প্রথমে জল সেচন করিয়া, পরে জল পটী দিলে একেবারে বেদনার লাঘব হইবে।
যদি অধিক কাল ব্যায়াম করিতে করিতে বুকের পার্শ্বে বেদনা বোধ হয়, তবে সে বেদনার স্থানে জল সেচন করিবার বা জল পটী দিবার আবশ্যকতা নাই। ব্যায়াম ক্ষান্ত দিলেই কিছু কাল পরে সে বেদনা আপনিই যাইবে।
জল পটি প্রস্তুত করা অতি সহজ। ছিন্ন বস্ত্র (নেকড়া) দুই ভাঁজ করিয়া জলে ভিজাইয়া পীড়ার স্থান ঢাকিয়া দিতে হইবে। যদি আঘাতের স্থানে অতিশয় বেদনা হয়,তবে এক পোয়া জলের সহিত ১ তোলা টিংচারআর্নিকা মিশাইয়া, তদভাবে চারি আনা ওজনে আফিঙ্গ, অর্দ্ধসের জলের সহিত ভাল রূপে গুলিয়া, সৈই জলে পটী ভিজাইয়া বেদনা স্থানে দিলে, বেদনা ক্রমে কমিয়া যাইবে।
ঔষধ সর্ব্বদা পাওয়া কঠিন, কিন্তু জল, সেচন ও পটী করিয়া দেওয়া অতি সহজ। জলের প্রতি যেন অবিশ্বাস ও হতাদর করা না হয়। মনোযোগ পূর্ব্বক জল সেচনও পটী দিলে পীড়ার অনেক লাঘব হইবে। পটী যেন শুষ্ক না হয়, সর্ব্বদাই যেন শীতল জলে আর্দ্র থাকে। এ বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ করা প্রয়োজন। যদি ঐ সমস্ত বেদনার জন্য জ্বর হয়, তবে যথা শাস্ত্র লঘু পথ্য, (খৈ বা মুড়ি, শাগু বা এরারুট বা বিস্কিট বা রুটী,) ব্যবহার করা এবং শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত। আরােগ্য না হওয়া পর্য্যন্ত অঙ্গ চালনা করা উচিত নহে। যদি মল বদ্ধ থাকে তবে কাষ্টরঅইল অর্থাৎ রেড়ির তৈল সেবন করিয়া কোষ্ট পরিষ্কার করা আবশ্যক।