ভানুসিংহের পত্রাবলী/২৬
২৬
এখনও আমার কাজের ভিড় কিছুই কমেনি। সবাই মনে করে—আমি কবি মানুষ,দিনরাত্রি আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘের খেলা দেখি, হাওয়ার গান শুনি, চাঁদের আলোয় ডুব দিই, ফুলের গন্ধে মাতাল হই, পল্লব-মর্ম্মরে থর্ থর্ ক’রে কাঁপি, ভ্রমর-গুঞ্জনে ক্ষুধাতৃষ্ণা ভুলে যাই ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সব হ’লো হিংসের কথা। তা’রা জাঁক ক’রে ব’ল্তে চায়-যে, তা’রা কবিতা লেখে না বটে কিন্তু হপ্তায় সাতদিন ক’রে আফিসে যায় আদালত করে, খবরের কাগজ চালায়, বক্তৃতা দেয়, ব্যবসা করে, তা’রা এত বড়ো ভয়ঙ্কর কাজের লোক। আফিসের ছুটি নিয়ে তা’রা একবার এসে দেখে যাক্—আমি কাজ করি কিনা। আচ্ছা, তা’রা খুব কাজ ক’র্তে পারে—আমি না হয় মেনে নিলুম, কিন্তু খুব কাজ না ক’র্তে পারে এমন শক্তি কি তাদের আছে? যেই তাদের হাতে কাজ না থাকে অম্নি তা’রা হয় ঘুমোয়, নয় তাস খেলে, নয় মদ খায়, নয় পরের নিন্দে করে, কী ক’রে-যে সময় কাটাবে, ভেবেই পায় না। আমার সুবিধা এই-যে, যখন কাজ থাকে তখন রীতিমতো কাজ করি, আবার, যখন কাজ না থাকে তখন খুব ক’ষে কাজ না ক’র্তে পারি—তা’র কাছে কোথায় লাগে তোমার বাবার কমিটি-মীটিং। যখন কাজ না-করার ভিড় পড়ে তখন তা’র চাপে আমাকে একেবারে রোগা ক’রে দেয়। সম্প্রতি কিন্তু কাজ করাটাই আমার ঘাড়ে চেপেচে, তাই সেই নাটকটা আর এক অক্ষরও লিখ্তে পারিনি। এই গোলমালের মধ্যে যদি লিখ্তে যাই আর যদি তাতে গান বসাই তবে তা’র ছন্দ আর মিল অনেকটা তোমার শিশু-মহাভারতেরই মতো হ’য়ে উঠ্বে। চিঠিতে যে-ছবি এঁকেচো—খুব ভালো হ’য়েচে। মেয়েটিকে দেখে বোধ হ’চ্চে—ওর ইস্কুলে যাবার তাড়া নেই, ঘরকন্নার কাজের ভিড়ও বেশি আছে ব’লে মনে হ’চ্চে না; ওর চুলের সমস্ত কাঁটা রাস্তায় প’ড়ে গেছে, আর “গহনা ওয়ছনা” “চুনারি উনারি”র কোনোও ঠিকানা নেই। “কদু”র ভিতর থেকে-যে “দুল্হীন” বেরিয়ে এসেছিলো এ মেয়ে বোধ হয় সে নয়, এর নাম কী লিখে পাঠিয়ো। ইতি ৯ অগ্রহায়ণ, ১৩২৫।