৩১

শান্তিনিকেতন।

 নাঃ, তোমার সঙ্গে পার্‌লুম না—হার মান্‌লুম। তুমি-যে ইস্কুলে যেতে যেতে একেবারে রাস্তার মাঝখানে গাড়ি সুদ্ধ, একগাড়ি মেয়ে সুদ্ধ, তোমাদের মোটা দিদিমণি সুদ্ধ একেবারে উল্টে কাৎ হ’য়ে প’ড়্‌বে,—এত বড়ো ভয়ঙ্কর মজা ক’রবে, এ কী ক’রে জান্‌বো, বলো? তা’রপরে আর-এক ভদ্রলোককে বেচারার এক্কা-গাড়ি থেকে নামিয়ে তা’র গাড়িতে চ’ড়ে ব’স্‌বে; এত মজাতেও সন্তুষ্ট নও, আবার একপাটি জুতো রাস্তার মাঝখানে ফেলে আস্‌বে আর সেই জুতোর পিছনে কাশীবাসী ভদ্রলোকটিকে দৌড় করাবে—তারো উপরে আবার ইস্কুলে পৌঁচে কান্না—কি মজা! যদি সেই জুতো-শিকারী বেচারা ভদ্রলোকটি কাঁদতো তা হ’লেও বুঝ্‌তুম—কিন্তু তুমি! বিনা ভাড়ায় পরের এক্কাগাড়িতে চ’ড়ে, বিনা আয়াসে পরকে দিয়ে হারানো চটিজুতো খুঁজিয়ে নিয়ে—তা’রপরে কিনা কান্না! একেই না বলে লঙ্কাকাণ্ডের পরেও আবার উত্তরকাণ্ড! তুমি লিখেচো, আমিও যদি তোমাদের গাড়ির মধ্যে থাক তুম আর হাত, পা, মাথা, বুদ্ধি-সুদ্ধি সমস্ত একেবারে উল্টে-পাল্টে যেতো তা হ’লে তোমাদের মতোই বাবারে ম’র লুমরে ক’রে চীৎকার ক’র তুম। এ কথা আমি কিছুতেই স্বীকার ক’র বো না—নিশ্চয়ই পা দুটো উপরে আর মাথাটা নীচে ক’রে আমি তানানানা শব্দে কানাড়া রাগিণীতে গান ধ’র তুম।

হায়রে হায়, সারে গামা পাধা নিসা!
(আমার) গাড়ির হ’লো উল্টো মতি,
কোথায় হবে আমার গতি—
খুঁজে আমি না পাই দিশা!
সারে গামা পাধা নিসা!

 যখন কাশীতে যাবো, আমার গাড়িটা উল্টে দিয়ে বরঞ্চ পরীক্ষা ক’রে দেখো। ইস্কুলে গিয়ে কাঁদ বো না, তোমার মাথার সাম নে দাঁড়িয়ে হাত-পা নেড়ে তান লাগিয়ে দেবো—

যদিও আঘাত গায়ে লাগেনি
তবুও করুণ সুরে,

দেবো আমি গান জুড়ে’
ঝাঁপতালে ভৈরবী রাগিণী।
শোনো সবে দিদিমণি, মামা,
সারে সারে সারে গারে গামা!

 এই তো গেল মজার কথা! এইবার কাজের কথা। পরশু চল্লুম মৈসুরে, মাদ্রাজে, মাদুরায় এবং মদনাপল্লীতে। ফির্‌তে বোধ হয় জানুয়ারি কাবার হ’য়ে ফেব্রুয়ারি সুরু হবে—ইতিমধ্যে ঐ দুটো গানের সুর বসিয়ে এস্‌রাজে অভ্যাস ক’রে নিয়ো। আবার যদি বিশ্বেশ্বরের গোরু, গাড়ি উল্টে দিয়ে নন্দী-ভৃঙ্গীর গোয়ালের দিকে দৌড় মারে তা হ’লে পথের মাঝখানে কাজে লাগাতে পার্‌বে। আর যে-ব্যক্তি তোমার একপাটি চটিজুতো নিয়ে আস্‌বে তাকে উচ্চৈঃস্বরে তানে, মানে, লয়ে চমৎকৃত ক’রে দিতে পার্‌বে। ততদিন কিন্তু ডাকঘরের পালা বন্ধ। আমার চিঠি ফুরোলো, নটে শাকটি মুড়োলো ইত্যাদি। ১৯শে পৌষ, ১৩২৫।