ভানুসিংহের পত্রাবলী/৪২
৪২
একটা বিষয়ে আমার মনে বড়ো খট্কা লেগেচে, তুমি চিঠিতে লিখেচো—আমি নিশ্চয়ই তোমার দিদির চেয়ে বেশি ইংরেজি জানি। এটা কি উচিৎ? তোমার জ্যেষ্ঠা সহোদরা, কলেজে পড়ে, তা’র ইংরেজি জ্ঞানের প্রতি এত বড়ো অবজ্ঞা প্রকাশ কি ভালো হ’য়েচে? সে যদি জান্তে পারে তা হ’লে তা’র মনে কত বড়ো আঘাত লাগ্বে—একবার ভেবে দেখো দেখি। আমার চিঠি পেয়েই তা’র কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা ক’রো।
তা’র মতো আমি যদি ইংরেজিতে পরীক্ষা পাশ ক’র্তে পার্তুম তা হ’লে কি এমন বেকার ব’সে থাক্তুম? তা হ’লে অন্ততঃ পুলিশের দারোগাগিরি জোগাড় ক’র্তে পার্তুম। চিরদিন স্কুল পালিয়ে কাটালুম, কুঁড়েমি ক’রেই এমন মানবজন্মের সাতাশটা বছর[১] বৃথা নষ্ট ক’র্লুম—এইজন্যে পাছে আমার কুদৃষ্টিতে তোমাদের হঠাৎ বানান-ভুলে পেয়ে বসে তাই তো সহর ছেড়ে তোমাদের কাছে থেকে দূরে দূরে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই। এবারকার মতো যা হবার তা হ’লো, আর জন্মে ম্যাট্রিকুলেশন যদি বা না পারি তো অন্ততঃ মাইনর্ ইস্কুলের ছাত্রবৃত্তি নিয়ে তবে ছাড়্বো। কিছু না হোক্, অন্ততঃ ত্রৈরাশিক পর্য্যন্ত অঙ্ক ক’ষবোই, আর ফার্ষ্ট সেকেণ্ড দুটো রীডার যদি শেষ ক’র্তে পারি তা হ’লে গাঁয়ের প্রাইমারি স্কুলের হেড্মাষ্টারি ক’র্তে পার্বো, আর তারি সঙ্গে সঙ্গে মাসিক সাড়ে আট টাকা বেতনে ব্রাঞ্চ পোষ্ট-আফিসের পোষ্টমাষ্টারি-পদটাও জোগাড় ক’রে নেবার চেষ্টা ক’র্বো। নেহাৎ না পাই যদি, তবে জমিদারবাবুর কনিষ্ঠ ছেলেটির প্রাইভেট টিউটরের কাজটা নিশ্চয় জুট্বে, ইতি ৭ই আশ্বিন, ১৩২৮।
- ↑ ভানুসিংহের বয়স-যে সাতাশ বছরে এসে চিরকালের মতো ঠেকে গেচে, বালিকার এই একটি স্বরচিত বয়ঃপঞ্জীর বিধান ছিল।