ভানুসিংহের পত্রাবলী/৪৩
৪৩
আজ বুধবার—আজ ছুটির দিনে আমার বারান্দার সেই কোণটায় ব’সে তোমাকে লিখ্চি। মাঘের দুপুরবেলাকার রৌদ্রে আমার ঐ আমলকী-বীথিকার মধ্যে দিনটি রমণীয় লাগচে। এইরকম দিনে কাজ ক’রতে ইচ্ছে করে না—আমার সমস্ত মনটি ঐ ডালের উপরে বসা ফিঙে পাখীটির মতো চুপ ক’রে রোদ পোহায়। আজ উত্তরে-হাওয়া থেকে থেকে উতলা হ’য়ে উঠ্চে—শালবনের পাতায় পাতায় কাঁপুনি ধ’রেচে—একটা মস্ত কালো ভ্রমর মাঝে মাঝে অকারণ আমার কাছে এসে গুন্গুনিয়ে আবার বেরিয়ে চ’লে যাচ্চে—একটা কাঠবিড়ালি এই বারান্দার কাঠের খুঁটি বেয়ে চালের কাছে উঠে কিসের ব্যর্থসন্ধানে চঞ্চল চক্ষে এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার তখনি পিঠের ওপর ল্যাজ তুলে দুড় দুড় ক’রে নেমে যাচ্চে। এই শীতের মধ্যাহ্নে যেন আজ কারো কিছু কাজ নেই।
আমি সমস্ত সপ্তাহ ধ’রে একটা নাটক লিখ্ছিলুম —শেষ হ’য়ে গেচে তাই আজ আমার ছুটি। এ নাটকটা “প্রায়শ্চিত্ত” নয়, এর নাম “পথ”। এতে কেবল প্রায়শ্চিত্ত-নাটকের সেই ধনঞ্জয় বৈরাগী আছে, আর কেউ নেই—সে গল্পের কিছু এতে নেই, সুরমাকে এতে পাবে না।
তুমি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত আছো—আমার এই কুঁড়েমির চিঠিতে পাছে তোমার জিওমেট্রির ধ্যান ভঙ্গ করে, এই ভয় আছে। ৪ঠা মাঘ, ১৩২৮।