৪৪

 তুমি রোজ দুটো ক’রে ডিম খেয়ে একটিমাত্র ক্লাসে প’ড়্‌চো খবর পেয়েই খুসী হ’য়ে তোমাকে চিঠি লিখ্‌তে ব’সেচি। আমিও ঠিক দুটি করে ডিম খাই আর একটি মাত্র ক্লাসেও পড়িনে। সেইটেতে আমার মুস্কিল বেধেচে, কেন না, যদি আমার ক্লাস থাক্‌তো, যদি আমাকে নামতা মুখস্ত ক’র্‌তে হ’তো তা হ’লে সব সময়ই আমার কাছে লোক আনাগোনা ক’র্‌তে পার্‌তো না; আমি ব’ল্‌তে পার্‌তুম, আমার সময় নেই, আমাকে এক্‌জামিন্ দিতে হবে। তোমার ভারি সুবিধে—তোমার কাছে কইম্বাটুর থেকে ত্রিম্বাক্‌টু থেকে কাঞ্জিভ্যারাম থেকে কামস্কাটা থেকে মক্কা থেকে মদিনা মস্কট থেকে যখন-তখন নানালোক মানবজাতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে পরামর্শ নিতে আসেন না—তাঁরা জানেন-যে, মার্চ্চ মাসে তোমাকে ম্যাট্রিকুলেশন্ দিতে হবে। আমি তাই এক-একবার মনে করি—আমি ম্যাট্রিকুলেশন দেবো—দিলে নিশ্চয়ই ফেল্ ক’র্‌বো—ফেল করার সুবিধে এই-যে, ফি-বৎসরেই ম্যাট্রিকুলেশন্ দেওয়া যায় আর তা হ’লে ত্রিম্বাক্‌টু থেকে নিজনিনবগরড থেকে বেচুয়ানাল্যাণ্ড থেকে সদাসর্ব্বদা লোক-আসা বন্ধ হ’য়ে যেতে পারে।

 লেভি সাহেব আমার বন্ধু হ’য়েও তোমার কাছে হেমনলিনীর কথাটা ফাঁস করে দিয়েচেন, এতে আমি মনে বড়ো দুঃখ পেয়েচি—এ কথা সত্য-যে, আমি তা’রই সাধনায় প্রবৃত্ত আছি। কিন্তু সেই স্বর্ণশতদলের পাপ্‌ড়িগুলি হচ্ছে bank notes। সাধনায় বিশেষ-যে সিদ্ধিলাভ ক’র্‌তে পেরেচি—তা মনেও ক’রো না, তোমরা কামনা ক’রো এই হেমনলিনী যেন আমার পাণিগ্রহণ করেন। কিন্তু কপালক্রমে আমার পঞ্জিকায় অকাল প’ড়েচে—শুভলগ্ন আর আসেই না, তাই গান গাচ্চি—

ওগো হেমনলিনী
আমার দুঃখের কথা কারো কাছে বলিনি।
লক্ষ্মীর চরণতলে ফুটে আছো শতদলে
সে-পথ করিয়া লক্ষ্য কেন আমি চলিনি?

ইতি ১০ ফাল্গুন, ১৩২৮।