ভারতে অলিকসন্দর/প্রথম ভাগ/ষষ্ঠ অধ্যায়

ষষ্ঠ অধ্যায়

 এসিয়া মাইনরের সামুদ্রিক প্রদেশ, গ্রীক উপনিবেশে অধ্যুষিত ছিল। এসকল স্থানের গ্রীকগণ, অনেক সময় পারস্যপতির সহিত যুদ্ধ করিয়া, নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিত। আবার অনেক সময়, বৈতসবৃত্তি অবলম্বন করিয়া, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করিয়া প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য সুযোগের অপেক্ষা করিত। গ্রেণিকসে, অলিকসন্দরের জয়লাভের সহিত, ঔপনিবেশিক গ্রীকদিগের চিত্তচাঞ্চল্য উপস্থিত হইল। তাহারা প্রথম সুযোগে বিদেশী অধীনতা পাশ দূরে নিক্ষেপ করিয়া, স্বদেশবাসীর সহিত মিলিত হইল। অলিকসন্দর স্বয়ং শীঘ্রগতিতে লিডিয়া অভিমুখে গমন করিতে লাগিলেন। তাঁহার অন্যতম সেনানী পারমিনিওকে নিকটবর্ত্তী প্রদেশ ও দুর্গ সকল জয় করিবার জন্য প্রেরণ করেন। তিনি অল্প আয়াসে বিপক্ষদিগের দুর্গ জয় করিয়া অলিকসন্দরের নামের বিভীষিকা শত্রুগণের হৃদয়ে বদ্ধমূল করেন।

 অলিকসন্দর, লিডিয়ার রাজধানী সারডিসের ৭০ ষ্টেড অর্থাৎ সাড়ে চার ক্রোশ দূরে উপস্থিত হইলে, তথাকার দুর্গাধ্যক্ষ এবং প্রধান প্রধান নাগরিকগণ তাঁহার হস্তে ধনাদির সহিত দুর্গ এবং নগর সমর্পণ করেন। মানুষের হৃদয়ে একবার বিজাতীয় বিভীষিকা প্রবেশ করিলে তাহাকে কর্ত্তব্য ভ্রষ্ট করিয়া ফেলে, বিভীষিকাগ্রস্ত ব্যক্তি কোনরূপ কুৎসিত কার্য্য করিতে সঙ্কুচিত হয় না। পারসীক দুর্গাধ্যক্ষ নিজের সম্মান, বা নিজের রাজার দিকে না দেখিয়া অলিকসন্দরের পদতলে লুণ্ঠিত হইল। বালকবীর, দুর্গাধিপকে সম্ভ্রমের সহিত গ্রহণ করিয়া নাগরিকগণকে যথাবিধ সৎকার করিলেন। তাঁহারা, তাঁহাদের প্রাচীন প্রথা অনুসারে শাসন অধিকার লাভ এবং পারস্যপতিকে যেরূপ ভাবে রাজস্ব প্রদান করিতেন, সেইরূপ তাঁহাকেও প্রদান করিয়া নিষ্কৃতি লাভ করেন। অলিকসন্দর এ স্থানের সুদৃঢ় দুর্গ অধিকার করিয়া, তাহাতে স্বীয় সৈন্য রক্ষা এবং রাজস্ব সংগ্রহ বিষয়ক ব্যবস্থা বিধিবদ্ধ করিয়া ইফিসুস্ অভিমুখে যাত্রা করেন।

 অলিকসন্দরের জয়ের কথা শুনিয়া, ইফিসুসের পারসীক কর্ম্মচারী এবং অলিকসন্দরদ্বেষী গ্রীকগণ এস্থান পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করে। পারসীকদের গমনের পর, যে সকল গ্রীক, পারসীক শাসনের পক্ষপাতী ছিল, তাহাদের উপর অন্য গ্রীকেরা যথেষ্ট অত্যাচার করিতে আরম্ভ করিল। অলিকসন্দর, ইফিসে আগমন করিয়া অত্যাচারের স্রোতরোধ করিয়া দিলেন, আসন্ন মৃত্যু হইতে তাহারা রক্ষা পাইল। তাঁহার সদয় ব্যবহারে শত্রু ও মিত্র সকলেই তাঁহার অনুরক্ত হইল। অলিকসন্দর, ইফিসবাসীকে সাধারণতন্ত্র অনুসারে শাসিত হইবার অধিকার প্রদানকরেন।

 ইফিসুসের আর্ত্তিমিস বা দিয়ান। বিশেষ বিখ্যাত। অলিকসন্দরের জন্মরাত্রে, হিরোস্ত্রাস নামক একজন ব্যক্তি চিরস্মরণীয় হইবার জন্য এখানকার মন্দির পোড়াইয়া দেয়। এই দিয়ানার মন্দির, পুরাকালের সপ্তমাশ্চর্য্য কীর্ত্তির মধ্যে একটি বলিয়া পরিগণিত হইত। দিয়ানা, অসতীর অগ্রগণ্যা হইলেও ইনি ইয়ুরোপীয় সতীত্বের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, ইঁহার প্রণয় পাত্র অনেকে হইলেও ইনি অবিবাহিতা। ইনি পুরুষের পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া ধনুর্ব্বাণ হস্তে কুকুর সঙ্গে লইয়া বনে বনে শিকার করিয়া বেড়ান! দেবীর মন্দিরের দুরাবস্থা দেখিয়া অলিকসন্দর মন্দির নির্ম্মাণ করিবার সমস্ত ব্যয় বহন করিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছিলেন। কিন্তু ইফিসুসের অধিবাসীরা “দেবতা কখন দেবতার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন না।” এই কথা কহিয়া অলিকসন্দরের তুষ্টি সাধন করিয়াছিলেন। অলিকসন্দর মনে করিয়াছিলেন, মন্দির গাত্রে স্বীয় নাম খোদিত করিয়া দিবেন, কিন্তু তিনি সে সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিয়া যাঁহার দ্বারা আলেকজেন্দ্রিয়া স্থাপন করিয়াছিলেন, সেই প্রসিদ্ধ শিল্পী ডিওক্রেটসের তত্ত্বাবধানে এখানকার মন্দির নির্ম্মাণ করাইয়া, অদ্ভুত পদার্থের মধ্যে পরিগণিত করেন। এসময়ের অলিকসন্দরের চরিত্র অনুশীলন করিলে দেখিতে পাওয়া যায় যে,এখনও তাঁহাতে বিশেষ কোন দুর্গুণ আশ্রয় করিতে সমর্থ হয় নাই। তাঁহার দুর্ব্বলতার মধ্যে এই যে, তাঁহাকে দেবতা বা দেবপুত্র বলিলে তিনি গলিয়া পড়িতেন, তাঁহার মাথা ঘুরিয়া যাইত। তিনি এরিষ্টটলের নিকট শিক্ষিত হইলেও এ দোষ হইতে মুক্ত ছিলেন না। দুষ্টের অত্যাচার হইতে নগর রক্ষা, সারেমাহের সহিত আর্ত্তিমিসের পূজা ইত্যাদি কার্য্যে তিনি সাধারণের শ্রদ্ধার পাত্র হন। এ অঞ্চলের অন্যান্য যে সকল নগর পারসীকদের অধিকার ভুক্ত ছিল—তাহার গ্রীক নাগরিকগণ, অলিকসন্দরের সমীপে উপস্থিত হইয়া নগর সমর্পণ করিতে লাগিলেন।

 অলিকসন্দর, ইফিসুসে অযথা বিলম্ব না করিয়া, মেলিটস অভিমুখে যাত্রা করিলেন। অলিকসন্দরের আগমন কথা শুনিয়া, এখানকার পারসীক কর্ম্মচারীর হৃৎকম্প উপস্থিত হইল। তিনি সকল সময়ে সর্ব্বত্র তাঁহার শত্রুর প্রতিমূর্ত্তি দেখিতে লাগিলেন।

 দারা (দারায়াস্) র কর্ম্মচারী, যে সময় অলিকসন্দরের হস্তে নগর সমর্পণ করিবার জন্য পত্র ব্যবহার করিতেছিলেন, সে সময় তিনি তাঁহার সাহায্যের জন্য চারশত পারসীক জাহাজের আগমন কথা অবগত হন। ইহাতে তিনি তাঁহার পূর্ব্ব সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিয়া যুদ্ধ করিতে প্রস্তুত হইলেন। অলিকসন্দরের সৈন্যগণ বাহিরের নগর অধিকার করিয়া, ভিতরের নগর অধিকার করিবার জন্য অবরোধ করিতে প্রবৃত্ত হইল। পারসীকেরা নৌবলে যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলেন। ফিনিসিয়ান, সাইপ্রিয়ান প্রভৃতি অভিজ্ঞ নাবিকগণ তাঁহাদের নৌকা সকল পরিচালনা করিত। ইহাদের আগমন কথা শুনিয়া দারার কর্ম্মচারীর হৃদয়ে শক্তি সঞ্চার হইল। পারসীক রণতরী আসিবার পূর্ব্বেই গ্রীক নৌ সেনানী ১৬০ খানা জাহাজ লইয়া মেলিটসের নিকটবর্ত্তী একটি দ্বীপ কধিকার করেন। অলিকসন্দর ও কিছু অশ্বারোহী তাহাদের সাহায্যের জন্য প্রেরণ করেন। পারসীকেরা যাহাতে মেলিটসের বন্দরে উপস্থিত হইতে না পারে তাহারা তাহার চেষ্টা করিতে লাগিল এসময় সেনানী পারমিনিও অলিকসন্দরকে, জলযুদ্ধ করিবার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি ইহার সমর্থনে বলেন, যদি জলযুদ্ধে জয়লাভকরা যায় তাহা হইলে তাঁহাদের যথেষ্ট লাভ হইবে। বিশেষতঃ যখন একটা চিল, (ঈগল) তাঁহাদের জাহাজের দিকে মুখ ফিরাইয়া সমুদ্রের তটে বসিয়া ছিল, তখন এই লক্ষণে বোধ হইতেছে যে তাঁহাদের জলযুদ্ধে জয়লাভ হইবে। অলিকসন্দর, ইহার প্রত্যুত্তরে বলেন, জলযুদ্ধে আমরা অনভ্যস্ত যদি আমরা ইহাতে পরাজিত হই, তাহা হইলে দক্ষিণ গ্রীসবাসীরা আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করিবে। আর চিলের কথা যাহা কথিত হইল, তাহাতে বোধ হইতেছে স্থলপথেই আমরা জয়যুক্ত হইব। ধীরে ধীরে আমরা পারসীকদের সামুদ্রিক নগর সকল হস্তগত করিতে পারিলে অগত্যা তাহারা হীনবল হইবে, খাদ্যাদি অভাবে তাহারা অবসন্ন হইবে, সুতরাং এই কএকখানি জাহাজ লইয়া পারসীকদের সম্মুখীন হওয়া আমি যুক্তিযুক্ত বোধ করিনা। অলিকসন্দরের কথা গৃহীত হইল। পারসীকরা, গ্রীকদিগকে লোভ দেখাইয়া একটু গভীর সমুদ্রে লইয়া যাইবার যথেষ্ট চেষ্টা করিল। গ্রীকেরা বুঝিয়াছিল এ লোভে তাহাদের মৃত্যু অনিবার্য্য তাই তাহারা প্রলোভনে মুগ্ধ না হইয়া পারসীক জাহাজের অনুসরণে প্রবৃত্ত হয় নাই। একদিন গ্রীক জাহাজের নাবিকগণ, যখন জাহাজ পরিত্যাগ করিয়া কাষ্ঠাদি সংগ্রহ জন্য স্থলে গমন করিয়াছিল, সেই অবকাশে, পারসীকরা পাঁচখানি জাহাজ, গ্রীকদিগকে আক্রমণ করিবার জন্য প্রেরণ করেন। অলিকসন্দর তাহাদের অভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া নিকটে যে সকল মাঝি মাল্লা ছিল, তাহাদিগকে সংগ্রহ করিয়া যুদ্ধ করিবার জন্য দশ খানা জাহাজ প্রেরণ করেন। গ্রীকদিগকে সতর্ক দেখিয়া পারসীকরা পলায়ণে প্রবৃত্ত হইল। গ্রীকদিগের অধিকতর দ্রুতগামী জাহাজ, পারসীকদের একখানি মন্থরগামী জাহাজ গ্রহণ করিয়া প্রত্যাগমন করে।

 অলিকসন্দর দৃঢ়তা ও অধ্যবসায়ের সহিত নগর অবরোধে প্রবৃত্ত হইলে, মালিটসের অধিবাসীরা তাঁহাদের একজন বিশিষ্ট সন্ত্রান্ত অধিবাসীকে নগর সমর্পণের প্রস্তাব করিবার জন্য অলিকসন্দরের নিকট প্রেরণ করেন। অলিকসন্দর তাঁহাকে অবিলম্বে ফিরিয়া যাইতে কহিয়া কহিলেন যে, তিনি কল্য প্রাতঃকালে নগর আক্রমণ করিবেন, নগরবাসী যেন যথাশক্তি অনুসারে নগর রক্ষা করিতে প্রবৃত্ত হয়। পরদিবস প্রাতঃকালে প্রাচীর ধ্বংসী যন্ত্র সকল দুর্গ প্রাচীরের সমীপে নীত হইয়া, তাহা ধ্বংস করিতে আরম্ভ করিল। অলিকসন্দরকে নগর আক্রমণ করিতে দেখিয়া, জলপথে পারসীক জাহাজ যাহাতে নাগরিকগণকে সাহায্য করিতে সমর্থ না হয়, সে জন্য গ্রীক রণতরী সকল জলপথ অবরোধ করিয়া যুদ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হইল। জলে ও স্থলে উভয়দিক হইতে অবরুদ্ধ হইয়া নাগরিকগণ অত্যন্ত বিপন্ন হইয়া পড়িল। তাহারা যথেষ্ট যুদ্ধ করিয়াও কোনরূপে আত্মরক্ষা করিতে সুমর্থ হইল না। পারসীকপক্ষীয় গ্রীক সৈন্যগণ যুদ্ধে ভঙ্গ দিয়া পলায়ণ পর হইল। তাহাদের অধিকাংশই মাসিনদের হস্তে নিহত হইল, অবশিষ্ট কোনরূপে সাঁতার কাটিয়া প্রাণ লইয়া নিকটবর্ত্তী দ্বীপে গমন করিতে সমর্থ হইয়াছিল। অলিকসন্দর প্রাচীরের ভঙ্গ স্থান দিয়া গমন করিয়া নগর অধিকার করিলেন। যেসকল সৈন্য পলাইয়া গিয়াছিল, তাহাদিগকে অনুসরণ করিলে, তাহারা প্রাণপণ করিয়া পুনরায় যুদ্ধ করিতে আরম্ভ করিল। অলিকসন্দর তাহাদের স্বামিভক্তি ও বীরত্বে মুগ্ধ হইয়া তাহাদিগকে অভয়দান করেন। তাহারা অলিকসন্দরের অনুরোধে তাঁহার সৈন্যশ্রেণীভুক্ত হইয়া, মিত্ররূপে পরিণত হইয়াছিল। প্রায় দুই মাস পূর্ব্বে গ্রেণিকসে যে অপরাধে গ্রীক সৈন্য শৃঙ্খলিত হইয়াছিল, এক্ষণে সেই অপরাধে তাহারা কৃপালাভ করিল। অলিকসন্দর নগরবাসীকে স্বায়ত্ব শাসন প্রদান করিয়া তাহাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করিলেন। এখানে অবস্থান কালে অলিসন্দর তাঁহার রণতরী দ্বারা বিশেষ কোন কার্য্য হইবে না বিবেচনা করিয়া সে সমস্ত নষ্ট করিয়া ফেলেন। এ সময় তাঁহার অর্থাভাবও হইয়াছিল, ইহা ব্যতীত শক্তিশালী পারসীকগণকে তাঁহার এই ক্ষুদ্র নৌশক্তিদ্বারা কখনই পরাভব করিতে সমর্থ হইবেন না, আর তিনি যখন নিজে যুগপৎ জলে ও স্থলে থাকিতে সমর্থ হইবে না, তখন তাঁহার এ ক্ষুদ্র বহর না রাখাই যুক্তিযুক্ত বিবেচনা করেন। যদি আহার্য্য বা লোক সংগ্রহ বিষয়ে বাধা প্রদান করা যাইতে পারে, তাহা হইলে নৌশক্তি না থাকিলেও স্থল পথে বিশেষ প্রাধান্য লাভ করা হায়। লুটপাট করিয়া বোম্বেটেরা দুই চারি দিনের জন্য খাদ্য সংগ্রহ হইতে পারে, কিন্তু স্থলপথে যে শক্তি বদ্ধমূল হইয়াছে তাহাকে উৎপাঠন করা কেবলমাত্র নৌশক্তির সাধ্যের অতীত, এই সকল ভাবিয়া বোধ হয় বালকবীর স্থলপথে নিজের শক্তি সংস্থাপনে যত্নশীল হইয়াছিলেন।

 গ্রেণিকসের পরাজয় ও সেনানীগণের নিধনবার্ত্তা, দারার কাছে নীত হইলে, তিনি প্রসিদ্ধ গ্রীকবীর মেমনকে প্রধান সেনানী পদে নিযুক্ত করেন। মেমন, হেলিকারনেসস বা বর্ত্তমান দেবরুম নামক স্থানের দুর্গাদি সকল সংস্কার করিয়া আশু যুদ্ধের জন্য গ্রীক ও পারসীক সৈন্য সকল সংগ্রহ করিয়া প্রস্তুত হইতে ছিলেন। এ সংবাদ অলিসন্দরের কাছে নীত হইলে তিনি আমিষ লুব্ধ শ্যেনের ন্যায় শীঘ্র গতিতে তাহার উদ্যেশ্যে যাত্রা করিলেন।

 হেলিকারনেসস, কেরিয়া প্রদেশের রাজধানী। ইহা প্রাচীন ঐতিহাসিক হিরোডোটস এবং ডিওনিসিসের জন্মভূমি বলিয়া বিশেষরূপে প্রসিদ্ধ। এ স্থানের দুর্গ সুদৃঢ়, ও সমুদ্রতটে অবস্থিত। স্থলের দিকে বিস্তৃত ও গভীর পরিখা থাকায় ইহা বিপক্ষের পক্ষে অত্যন্ত দুর্গম, ইহার উপর নানাদেশীয় গ্রীকগণ কর্ত্তৃক সুরক্ষিত হওয়াতে ইহাকে অধিকতর দুর্গম করিয়াছিল। অলিকসন্দর ইহার ৫ ষ্টেড অর্থাৎ প্রায় অর্দ্ধমাইল দূরে শিবির সংস্থাপন করিয়া নগর অবরোধের আয়োজন করিতে লাগিলেন। অলিকসন্দর সর্ব্বপ্রথমে দুর্গের পরিখা মৃত্তিকাদ্বারা পরিপূর্ণ করিয়া ফেলিলেন। তদনন্তর কাষ্ঠময় মঞ্চ সকল প্রাচীরের নিকট লইয়া গিয়া তাহার উপর হইতে দুর্গ আক্রমণ করিতে লাগিলেন। দারার পক্ষীয় বীরেরা ও সময় সময়, নগর হইতে বহির্গত হইয়া দানব বিক্রমে অলিকসন্দরের সৈন্য মন্থন করিতে লাগিল। এই সকল শত্রুসেনানীর মধ্যে অলিকসন্দরের একজন স্বদেশ বাসী ও কতিপয় এথেন্সবাসী বিশেষ বীরত্ব দেখাইয়া যমলোকের অতিথি হইয়াছিলেন। অলিকসন্দরকে এ নগর অবরোধকালে বড় কম বেগ পাইতে হয় নাই। তিনি যে সকল কাষ্ঠমঞ্চ, দুর্গ আমক্রন, ও প্রাচীর ভাঙ্গিবার জন্য পাঠাইতে লাগিলেন, দুর্গবাসীরা উপর হইতে প্রস্তরাদি নিক্ষেপ এবং তাহাতে অগ্নিপ্রদান করিয়া ভূমিস্যাৎ করিতে লাগিল। উপর হইতে এরূপ ভাবে আক্রান্ত হইলে ও অলিকসন্দর ও তাঁহার সৈন্যগণের অধ্যবসায় ও পরাক্রমের কাছে, পারসীকদের সমস্ত উদ্যম বিফল হইয়া গেল। প্রবল আক্রমণে স্থানে স্থানে প্রাচীর ভাঙ্গিয়া গেল। পারসীকেরা বিপুল উদ্যমে ভঙ্গ সংস্কার করিলেও তাহারা মেসিদুনিয়ানদের গতিরোধ করিতে সমর্থ হইল না। ডিওডোরস বলেন, পারসীক সেনানীগণ যখন দেখিলেন নগররক্ষা অসম্ভব তখন একদিন প্রাতঃকালে দুর্গের দ্বার সকল উদ্ঘাটন পূর্ব্বক সমস্ত সৈন্য মিলিত হইয়া অলিকসন্দরের কাষ্ঠমঞ্চ সকল ধ্বংস করিবার জন্য বহির্গত হন। সম্মুখভাগে অবস্থিত অলিকসন্দারের অনভিজ্ঞ যুবক সৈন্য সকল ইহাদের ঘোরতর আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়ে, কিন্তু ফিলিপের অভিজ্ঞসৈন্য সকল আক্রমণ করিলে, পারসীকদের এথিনিয়ন নেতা এথিলেট নিহত এবং তাঁহার অনুচরগণ দুর্গমধ্যে পলায়ন করিয়া প্রাণরক্ষা করে। দুর্গের এরূপ শোচনীয় অবস্থায় কর্ত্তব্য নির্দ্ধারণ করিবার জন্য মেমন প্রমুখ পারসীক সেনানীগণ একত্র হইয়া স্থির করিলেন যে, শত্রু আক্রমণ রোধ করিবার জন্য যে সকল কাষ্ঠমঞ্চ নির্ম্মিত হইয়াছিল, তাহাতে এবং অস্ত্রাগারে এক্ষণে অগ্নি প্রদান করাই কর্ত্তব্য। এ সকল উপকরণ শত্রু হস্তে পতিত হইলে তাহারা অধিকতর শক্তিশালী হইবে, এবং শত্রুরাই ঐ সকল প্রহরণ প্রহারে তাঁহাদিগকে জর্জ্জরিত করিবে বিবেচনা করিয়া নিশীথ রাত্রে তাঁহারা ইহাতে অগ্নি প্রদান করেন। অগ্নিযোগে অন্যান্য গৃহও ভস্ম হইয়া গেল। মেমন প্রমুখ সেনানীগণ নৌকাযোগে পলায়ন করিয়া আত্মরক্ষা করেন। দারার দূরদৃষ্ট বশতঃ কিছুদিন পরে মেমন যখন পারসীক রণতরী লইয়া মেসিদোনিয়া আক্রমণ করিবার উদ্যোগ করিতেছিলেন, সে সময় তিনি রুগ্ন হইয়া ইহলীলা সম্বরণ করেন।

 প্রাতঃকালে ফিলিপ পুত্র নগর অধিকার করিয়া, নিকটবর্ত্তী স্থান সকল অধিকার করিবার জন্য সেনানীগণকে চতুর্দ্দিকে প্রেরণ করেন। তিনি স্বরং ফেরিজিয়া নগর আক্রমণ করিয়া তাহা ভূমিস্যাৎ করিয়া ফেলেন। অলিকসন্দার, কেরিয়া প্রদেশের সিংহাসনে, তাঁহার প্রতিনিধি স্বরূপ আদা নাম্নী রাজকন্যাকে অভিক্ত করেন। এরূপ কথিত হয় আদা অলিমফিয়া পুত্তকে পুত্ররূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং তিনি ও তাঁহাকে মা বলিয়া সম্বোধন করিতেন। আদা, স্নেহবশতঃ নানা প্রকার খাদ্য দ্রব্য অলিকসন্দরে কাছে প্রেরণ করিতেন। অলিকসন্দর যখন এ স্থান পরিত্যাগ করিয়া স্থানান্তরে গমন করেন, সে সময় আদা স্বীয় সুদশাস্ত্রজ্ঞ কর্ম্মনিপুণপাচক সকল অলিকসন্দরের কাছে প্রেরণ করেন। অলিকসন্দর তাহাদিগকে প্রত্যাখ্যান করিয়া বলেন, তাঁহার বাল্য শিক্ষক লিওনেটস, তাঁহাকে উৎকৃষ্ট পাচক প্রদান করিয়াছেন—প্রাতঃকালে যথেষ্ট পরিমাণে ভ্রমণ করার অভ্যাস থাকায় তাঁহার মধ্যাহ্ণভোজ্য সুস্বাদু হইয়া থাকে, রাত্রিকালে লঘুপাক ভোজ্য গ্রহণ করিয়া থাকেন। পাছে অলিমফিয়া, শয্যা ও পরিচ্ছদ সম্বন্ধে বেশী বস্ত্রাদি প্রদান করেন,এজন্য লিওনিটস সে দিকেও তীক্ষ্ণদৃষ্টি প্রদান করিতেন। এ জন্য শয়নভোজনের জন্য তাঁহার আড়ম্বরের দরকার হয় না। অলিকসন্দার যে পর্য্যন্ত এইরূপ সংযমী ছিলেন সে পর্য্যন্ত তিনি সর্ব্বত্র জয়যুক্ত হইয়াছিলেন—কালে তাঁহার অসংযমের বৃদ্ধির সহিত তাঁহার অধঃপতনের দ্বারও অনর্গল হইয়াছিল।

 দেখিতে ২ গৃষ্মকাল অতীত হইতে চলিল, শীত সমাগমনের সময় উপস্থিত হইল। যে সকল সেনা ও সেনানী এই অভিযানের পূর্ব্বে বিবাহিত হইয়াছে, অলিকসন্দর তাহাদিগকে গৃহে গমনের অনুমতি প্রদান করেন। ইহাতে তাঁহার দূরদর্শিতা যথেষ্টরূপে পরিলক্ষিত হইয়া থাকে। সৈনিকগণের স্বদেশে প্রত্যাগমনে, দেশের অভ্যন্তরে ক্ষুদ্র গ্রামের ভিতরেও অলিকসন্দরের বিজয়বার্ত্তা প্রচারিত হইবার সুযোগ প্রাপ্ত হইল। গৃহে অবস্থিত জনগণ রণস্থল হইতে সমাগত বীরবৃন্দের নিকট বিজয়লব্ধ দ্রব্য সকল দেখিয়া, তাহাদের পৌরুষজনক বৃত্তি সকল বিকাশ প্রাপ্ত হইল। সকলেই অলিকসন্দরের সহিত মিলিত হইয়া সমৃদ্ধি ও সম্মান লাভের জন্য উৎসুক হইল। সে সময় গৃহে অবস্থান করা যেন কাপুরুষের লক্ষণ বলিয়া সাধারণে বিবেচিত হইতে লাগিল। এ সময়ের অলিকসন্দর চরিত্র বাস্তবিকই রমণীয় পরিলক্ষিত হইয়া থাকে। এ সময় অলিকসন্দরে ব্রহ্মচর্য্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত ছিল। আহার বিহারে তিনি পরিমিতাচারী ছিলেন। সেই জন্য কি তাঁহার কার্য্য সকল সকলের সুখপ্রদ হইয়াছিল? সেই জন্য কি তাঁহার হৃদয় সঙ্কীর্ণতার পরিবর্ত্তে উন্নতভাব ধারণ করিয়াছিল? অথবা রাজনীতিকগণ যে রূপ ভাবকার্য্য সাধনের জন্য কমনীয়রূপ ধারণ করিয়া সাধারণকে প্রতারণা থাকে,সেইরূপ কি অলিকসন্দরের, এসিয়া মাইনরের নাগরিকগণের প্রতি সদয়ব্যবহার, রাজ্ঞী আদার সহিত সামাজিক সম্বন্ধ, প্রভৃতি শিষ্ঠাচার সকল রাজনীতিক চাল কি না এ বিষয়ে অনেক সময় সন্দেহ হইয়া থাকেন।

 দারুণ শীত ও অলিকসন্দরের গতি রোধ করিতে সমর্থ হইল না। তিনি স্থান হইতে স্থানান্তরে বিদ্যুৎগতিতে গমন করিয়া নগর সকল আক্রমণ করিতে লাগিলেন। সাধনা দ্বারা মানুষ সিদ্ধিলাভ করিয়া থাকে। অলিকসন্দর এই সকল অসাধারণ কার্য্য করিয়াছিলেন বলিয়াই তাঁহার নামের প্রতাপে নাগরিকগণ নগর সমর্পণ করিতে লাগিলেন। ভূপতিগণ তাঁহার চরণপ্রান্তে ভূপতিত হইতে লাগিলেন। এই সময়ে প্রায় ৩০।৪০টা নগর তিনি করতলগত করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। এই সকল নগরের মধ্যে সমুদ্র তটে অবস্থিত নগরের সংখ্যাই বেশী। এই সকল অধীন হওয়াতে পারসীকদের নৌশক্তি একেবারে সঙ্কুচিত হইয়া ছিল। যে সকল রাজদূত তাঁহার অনুগ্রহপ্রার্থী হইয়া আগমন করিয়াছিল অলিকসন্দর তাহাদের দেশ অধিকার করিয়া যথেষ্ট অনুগ্রহ প্রকাশ করেন। যে সকল রাজন্যবর্গ রত্নোজ্জ্বল কিরীট পাঠাইয়া তাঁহার মস্তক শোভিত করিয়াছিল, বলা বাহুল্য তাঁহাদের কুললক্ষ্মী তাঁহাদিগকে পরিত্যাগ করিয়া অলিকসন্দরেরই অঙ্কগতা হইয়াছিলেন।

 অলিকসন্দর যে সময় সমুদ্র তটে ফেসিলিসে অবস্থান করিতে ছিলেন, সে সময় তাঁহার বিরুদ্ধে অলিকসন্দর নামা তাঁহার একজন সেনানী পারস্যরাজের সহিত ষড়যন্ত্র করিতেছিল। এই লোকটা তাঁহার পিতৃহত্যা করিয়া সর্ব্বপ্রথম অলিকসন্দরকে রাজা বলিয়া অভিবাদন করিয়াছিল বলিয়া, সে বিশেষরূপে সৎকৃত হইয়াছিল। এ ব্যক্তি সৎকৃত ও প্রধান পদে নিযুক্ত হওয়াতে অনেকে মনে করেন অলিকসন্দরের ইঙ্গিতেই ফিলিপহত্যা সাধিত হইয়াছিল। পারস্যপতি দারার সহিত ইহার পত্র ব্যবহার হইয়াছিল। পারস্যপতি ইহার কাছে প্রস্তাব করিয়া পাঠান যে অলিকসন্দরকে কোনরূপে হত্যা করিতে পারিলে, তিনি তাহাকে মেসিডোনিয়ার রাজা করিয়া দিবেন, আর এক হাজার স্বর্ণ টেলেণ্ট অর্থাৎ প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকা প্রদান করিবেন। যে লোকটা এই প্রস্তাব লইয়া আলিকসন্দরের সেনানীর কাছে গমন করিতেছিল, সে সন্দেহ ক্রমে পারমিনিও কর্ত্তৃক ধৃত হইয়া অলিকসন্দরের কাছে নীত হইয়া ছিল। অলিকসন্দর, সংবাদ বাহকের পরিণামের কথা অবগত হইয়া পাছে বিদ্রোহ বা সৈন্যগণ সহ পারসীক পক্ষে অবলম্বন করে, এই আশঙ্কায় তাঁহার এক জন কর্ম্মচারীকে সেই দেশবাসীর পরিচ্ছদ পরিধান করাইয়া গোপনভাবে পারমিনিওর কাছে প্রেরণ করেন। প্রেরিত লোক, পাছে কোনরূপে শত্রু হস্তে পতিত হয়, এই ভয়ে আলিকসন্দর, কোনরূপ লিখিত পত্র প্রদান না করিয়া তাহাকে সুযোগ ক্রমে বন্দী করিতে মৌখিক উপদেশ প্রদান করিয়া ছিলেন। যথা সময়ে অলিকসন্দর বন্দী হইয়া ছিল এবং পরে পারমিনিওর পুত্র ফিলোটের হত্যার পর ইহার ও হত্যা সাধিত হয়।

 অলিকসন্দর, ফেসিলিস হইতে পারগা নামকস্থানে সৈন্যগণকে প্রেরণ করিয়া, স্বয়ং কতকগুলি সৈন্য লইয়া পর্ব্বতের পাদদেশ ও সমুদ্রের তট ভূমি দিয়া যে অতি বিপদজনক রাস্তা আছে, সেই রাস্তা দিয়া গমন করেন। এ রাস্তা দিয়া যাইলে অতি অল্প সময়ে গন্তব্য স্থানে উপনীত হওয়া যায়। অধিকাংশ সময় এ পথ সমুদ্রজলে নিমগ্ন থাকায়, কেহ বড় এপথ দিয়া যাইতে সাহসী হয় না। সৌভাগ্য ক্রমে অলিকসন্দর সৈন্যসহ এপথ উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। এজন্য সে কালের অনেকে তাঁহাকে ঈশ্বরের বিশেষ অনুগৃহীত বলিয়া বিবেচনা করিতেন। অলিকসন্দরের গমনের সহিত দেশ ও নগর সকল তাঁহার অধিকার ভুক্ত হইতে লাগিল। যাহরা তাঁহার বিপক্ষতা আচরণ করিবার সঙ্কল্প করিয়াছিল। তাহাদিগকে তিনি অকস্মাৎ আক্রমণ করিয়া তাহাদিগের বুদ্ধিবিপর্য্যয় করিতে লাগিলেন। অলিকসন্দর সে সময় কখন ভূমধ্য সাগরের তট ভূমে অবস্থান করিয়া শত্রুসৈন্য মন্থন করিতেছিলেন, কখন বা কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্ত্তী প্রদেশে উপস্থিত হইয়া সকল কে বিস্ময়ে অভিভূত করিতে ছিলেন। অলিকসন্দর কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্ত্তী গরডিয়ামে অবস্থানকালে যে সকল বিবাহিত সৈন্য দেশে গমন করিরাছিল, তাহারা তাঁহার সহিত এই স্থানে মিলিত হয়। এই সকল সৈন্যের সহিত তিন হাজার মাসিদন পদাতিক এবং প্রায় ছয় শত অশ্বারোহী আগমন করিয়াছিল। এ স্থানে অবস্থান কালে তিনি গর্ডনগ্রন্থী ছিন্ন করিয়া এসিয়ার ভাবী অধিশ্বর বলিয়া সকলের হৃদয়ে স্থান অধিকার করিয়াছিলেন। সে প্রদেশের জন সাধারণের এরূপ ধারণা ছিল, যে কেহ এই গ্রন্থি খুলিতে সক্ষম হইবেন, তিনি এসিয়ার অধিশ্বর হইতে সমর্থ হইবেন। অলিকসন্দর এই গ্রন্থি কোনরূপে খুলিতে সমর্থ না হইলে অবশেষে পার্শ্বস্থিত খড়্গদ্বারা তাহা ছিন্ন করিয়া সকলকে মুগ্ধ করিরাছিলেন।

 অলিকসন্দর যে সময় গর্ডিয়মে অবস্থান করিতেছিলেন, সে সময় এথিনিয় দূত তাঁহার কাছে উপস্থিত হইয়া যে সকল এথেন্সবাসী গ্রাণিকস যুদ্ধে বন্দী হইয়া মেসিদোনিয়ায় শৃঙ্খলিত হইয়া অবস্থান করিতেছে, তাহাদের মুক্তির প্রার্থনা করেন। পাছে তাহারা পুনরায় পারসীকদের সহিত মিলিত হইয়া, তাঁহার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে এই আশঙ্কা করিয়া তিনি দূতকে সময়ান্তরে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে অনুরোধ করেন। কুরতিয়স্ বলেন, অলিকসন্দর মিশ্রদেশ হইতে প্রত্যাগমন করিলে সিরিয়াতে এথেনিয়ন দূত পুনরায় তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করেন এবং এসময় দূতের অনুরোধে বন্দীগণ মুক্তিলাভ করিয়াছিল।