মতিয়া বিবি/ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
আমি যখন পূর্ব্ব-কথিত তারামণির হত্যাকারীর অনুসন্ধান করিয়া বেড়াইতেছি ও কেশব কৈবর্ত্তকে সঙ্গে লইয়া তাহার বাড়ী হইতে হঠাৎ অন্তর্হিত বাক্তিগণের অনুসন্ধান করিভেছি, সেই সময় মতিয়া বিবির মোকর্দ্দমার অনুসন্ধানে নিযুক্ত সেই পুলিশ কর্ম্মচারীর সহিত আমার সাক্ষাৎ হইল। মসলিম, ও তারামণির মৃতদেহ বহন করিয়া যে সকল বাক্তি কবরস্থানে লইয়া গিয়াছিল, তাহাদিগের সকলকে সেই সময় ঐ পুলিশ কর্ম্মচারীর সহিত দেখিতে পাইলাম। যে ব্যক্তি মহম্মদ মসলিম বলিয়া কবরস্থানের কর্ম্মচারী ও পুলিশ কর্ম্মচারীর নিকট আত্মপরিচয় প্রদান করিয়াছিল, সে যে মুসলমান কি হিন্দু, তাহা এখন স্থির করা একরূপ কঠিন হইয়া পড়িল। উহার চেহারা দেখিয়া উহাকে হিন্দু বলিয়া অনুন হয়, কিন্তু মসলিম হিন্দু বলিয়ৈ আপনাকে স্বীকার করে না। সে কহে সে মুসলমান। সে হিন্দুই হউক, আর মুসলমানই হউক, কেশব কৈবর্ত্ত উহাকে দেখিবামাত্র কহিল যে, যে দুই ব্যক্তি আসিয়া তাহার ঘর ভাড়া লইয়া কয়েক দিবস ঐ ঘরে বাস করিয়াছিল, তাহাদিগের এক ব্যক্তি এই। যে ব্যক্তিগণ মতিয়া বিবির মৃতদেহ বহন করিয়া লইয়া গিয়াছিল, তাহাদিগের মধ্যস্থিত দুই ব্যক্তিকে দেখাইয়া দিয়া কহিল “ইহারা মসলিম ও তাহার বন্ধুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত প্রায়ই তাহার বাড়ীতে গমন করিত।” ঐ দুই ব্যক্তির নাম জিজ্ঞাসা করায় একজন কহিল, তাহার নাম মহম্মদ হানিফ ও অপর একব্যক্তি কহিল, তাহার নাম মহম্মদ কাছেম। মসলিমকে জিজ্ঞাসা করায় সে যে কখনও কেশব কৈবর্ত্তের বাটীতে বাস করিয়াছিল, তাহা স্বীকার করিল না। হানিফ ও কাছেম্, কেশবের বাড়ীতে যাওয়া বা সেই স্থানে মসলিম বা তাহার বন্ধুর সহিত সাক্ষাৎ করা, একবারে অস্বীকার করিল। কেশব কৈবর্ত্ত যদি উহাদিগকে ঠিক চিনিতে পারিয়াই না থাকে, এই ভাবিয়া উহাদিগকে সঙ্গে লইয় কেশব কৈবর্ত্তের বাড়ীতে গমন করিলাম। সেই স্থানে কেশবের স্ত্রী ও পাড়ার অপরাপর যেসকল লৌক উহাদিগকে সেই স্থানে দেখিয়াছিল, তাহারা সকলেই একবাক্যে উহাদিগকে সনাক্ত করিল; এখন আর আমাদিগের মনে কিছু মাত্র সন্দেহ রহিল না। এখন বেশ বুঝিতে পারিলাম যে, মহম্মদ মসলিম তাহার জনৈক পারিষদের সহিত ঐ স্থানে বাস করিয়াছিল ও ছানিফ ও কাছেম উহাদিগের নিকট সেই স্থানে আগমন করিত। আর বুঝিতে পারিলাম যে, তারামণি ইহাদিগের কর্ত্তৃকই হত হইয়াছে ও ইহারাঁই তাহার যথা-সর্ব্বস্ব অপহরণ করিয়া লইয়া, তাহার মৃতদেহ লোহার সিন্দুকে বন্ধ করিয়া সেই স্থান হইতে প্রস্থান করিয়াছে।
মনে মনে আমরা এই অনুমান করিলাম সত্য, কিন্তু কিরূপে উহাদিগের উপর এই ঘটনা প্রমাণিত করিতে সমর্থ হইব, সেই চিন্তা আসিয়া তখন উপস্থিত হইল। যে সকল কর্ম্মচারী তারামণির হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধান করিতেছিলেন, ও যে সকল কর্ম্মচারী মতিয়া বিবির মৃতদেহের অদ্ভূত অন্তর্ধানের অনুসন্ধানে লিপ্ত ছিলেন, এখন তাহারা সকলে একত্রে মিলিত হইয়া উভয় অনুসন্ধান সম্পন্ন করিতে প্রবৃত্ত হইলেন।
এক দিকে তারামণি হত; তাহার যথাসর্ব্বস্ব অপহৃত ও তাহার মৃতদেহ লোহার সিন্দুকের ভিতর প্রাপ্ত। অপর দিকে মতিয়া বিবি হত ও তাহার মৃতদেহ অন্তর্হিত। ইহা বড়ই আশ্চর্য্য। ইহার ভিতর যে কি রহস্য আছে, তাহা বুঝিয়া উঠা মনুষ্যবৃদ্ধির অসাধ্য। মতিয়া বিবি যদি মসলিমের স্ত্রী হয়, তাহা হইলে সে তাহাকে হত্যা করিবে কেন? আর যদি কোনও রূপ প্রতিহিংসা প্রতিপালন করিবার মানসে সে তাহার স্ত্রীকে হত্যা করিয়াই থাকে, তাহা হইলে ঐ মৃতদেহ কবরিত করিবার মানসে সে উহা গোরস্থানে আনিবে কেন? কারণ এ কথা বোধ হয়, কাহাকেই বলিয়া দিতে হইবে না যে, এইরূপ কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিলে তাহাকে কিরূপ বিপদে পতিত হইবার সম্ভাবনা। আর সেই বা ঐ মৃতদেহের হঠাৎ অন্তর্ধান করাইয়াই বা দিবে কেন? যদি প্রাণের ভয়ে মতিয়া বিবির মৃতদেহ সে স্থানান্তরিত করিয়াই থাকে, তাহা হইলে এত অল্প সময়ের মধ্যে সে উহাকে কোথায় রাখিবে? আর উহার অনুসঙ্গিগণ কেনই বা মিথ্যা কথা বলিয়া ভয়ানক ভাবি বিপদকে আপন আপন স্কন্ধে চাপাইয়া দিবে?
এদিকে মতিয়া বিবি কে? তাহারও ত কোন সন্ধান পাওয়া যাইতেছে না। যে গৃহে মসলিম বাস করিত বলিয়া আমাদিগকে দেখাইয়া দিতেছে, সে গৃহে সে এক মুহূর্ত্তের জন্যও কখন বাস করে নাই, ইহা অকাট্য সত্য। যে সকল ব্যক্তি মতিয়া বিরির মৃতদেহ কবরস্থানে লইয়া গিয়াছিল, তাহারাই বা কে? তাহাদিগের বাসস্থানই বা কোথায়, কি কার্য্য করিয়া তাহারা দিনপাত করিয়। থাকে, তাহারও ত কিছুই জানিতে পারা যাইতেছে না। কেবলমাত্র এক মাস হইতে একখানি ঘর ভাড়া লইয়া উহারা একত্রে বাস করিতেছে। জিজ্ঞাসা করিয়া উহাদিগের নিকট হইতে এ পর্য্যন্ত কোনও কথা পাওয়া যায় নাই ও ভবিষ্যতেও যে তাহারা কোনও কথা প্রকাশ করিবে, তাহাও অনুমিত হইতেছে না।
যাহা হউক, উহাদিগকে লইয়া এখন উত্তমরূপে অনুসন্ধান করিতেই হইবে। মসলিম কে তাহা জানিতে হইবে; কোথায় তাহার বাসস্থান, কি করিয়া সে দিনপাত করিয়া থাকে, তাহা জানিতে না পারিলে এই অনুসন্ধান কিছুতে সুচারুরূপে সম্পন্ন হইতে পারিবে না। তাহার আনুষাঙ্গিক ব্যক্তিগণের পরিচয়ই বা কি এবং মতিয়া বিবিই বা কে, তাহা যে কোন উপায়ে হউক, জানিতেই হইবে। মনে মনে এইরূপ স্থির করিয়া উহাদিগকে লইয়া অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইলাম সত্য, কিন্ত উহাদিগের নিকট হইতে কোন কথাই প্রাপ্ত হইলাম না। এমন কি উহারা কোন্ দেশীয় লোক, কোথা হইতে তাহারা এই স্থানে আগমন করিয়াছে, তাহা পর্য্যন্ত অপর কাহার নিকট হইতে অবগত হইতে পারিলাম না। উহারাও সে সম্বন্ধে কোন কথা, আমরা বিশেষরূপে চেষ্টা করিলেও আমাদিগকে বলিল না। যে ঘর ভাড়া লইয়া উহারা বাস করিতেছিল, সেই ঘর উত্তমরূপে অনুসন্ধান করিলাম; এমন কি ঘরের মেঝে পর্য্যন্ত উত্তমরূপে খোদিয়া দেখিলাম, কিন্তু সন্দেহসূচক কোন দ্রব্যই পাওয়া গেল না। অনেক অনুসন্ধান করিবার পর, পরিশেষে কেবল এই মাত্র জানিতে পারিলাম যে, মসলিম আখজি নামক একটী বেশ্যার গৃহে কখন কখন গমন করিত। কিন্তু আখজি কে, কোথায় থাকে, কতদিন হইতে সেই স্থানে মসলিমের যাতায়াত আছে ও তাহার সহিত উহার সদ্ভাব আছে কি না, তাহাও কিন্তু কেহ বলিতে পারিল না। পরিশেষে বহু অনুসন্ধানের পর আখজির্ সন্ধান পাইলাম। মসলিম ও তাহার বন্ধুগণের মধ্যে দুই একজন কখন কখন যে তাহার ঘরে আসিত, তাহা সে স্বীকার করিল, ও মসলিম ও অপর দুই ব্যক্তিকে দেখাইয়া দিল। কিন্তু তাহার যে কে, কোথায় তাহাদিগের বাসস্থান, তাহার কিছুই সে বলিতে পারিল না। সে কহিল, উহারা তাহাদিগের পরিচয় কখন তাহার নিকট প্রদান করে নাই। আখজিকে তাহাদিগের মধ্যে কেহ কখন কোন অলঙ্কারাদি প্রদান করিয়াছে কি না, জিজ্ঞাসা করায় সে এক জোড়া সোনার অনন্ত বা তাগা বাহির করিয়া আনিল, ও উহা আমাদিগের সম্মুখে রাখিয়া দিয়া কহিল, মসলিম তাহাকে কেবলমাত্র এই অলঙ্কারখানি প্রদান করিয়াছে।
আখজির ভাবগতিক দেখিয়া ও তাহার কথা শুনিয়া আমাদিগের সম্পূর্ণরূপে অনুমান হইল যে, এই মহানগরী ও সহরতলীর মধ্যে যে সকল বারবনিতা বাস করিয়া থাকে, তাহাদিগের চরিত্র কার্য্যগতিকে উত্তমরূপে আলোচনা করিয়া যতদূর অবগত হইতে পারিয়াছি, তাহাতে উহাদিগের মধ্যে যে কেহ সত্যবাদী বা সরল প্রকৃতির স্ত্রীলোক আছে, তাহা এ পর্য্যন্ত দেখিতে পাই নাই? কিন্ত আজ দেখিলাম, আখজি বেশ্যা হইলেও তাহার প্রকৃতি অপর বেশ্যা অপেক্ষা, কিয়ৎপরিমাণে অন্যতম তাহার সহিত আমাদিগের যে দুই চারিটী কথা হইল, তাহাতেই বুঝিতে পারিলাম, সে কতকটা সরল প্রকৃতির স্ত্রীলোক, ও সে যাহা বলিতেছে, তাহা প্রকৃতই কহিতেছে। সে যে কোন কথা মিথ্যা বলিতেছে, তাহা আমাদিগের মনে হইল না।
তারামণির অঙ্গে তাগা ও বালা ছিল, ইহা পাঠকগণ পূর্ব্ব হইতেই অবগত আছেন। আর ঐ তাগা ও বালা যে অপহৃত হইয়াছে, তাহাও আপনারা শুনিয়াছেন। এখন যে তাগা আখজির নিকট হইতে প্রাপ্ত হওয়া গেল, তাহা তারামনির তাগা কি না?
ইহা যদি তারামনির তাগা বলিয়া প্রমাণিত হয়, তাহা হইলে তারামণির হত্যাকাণ্ডের নায়কগণের একজন যে মসলিম, সে বিষয়ে আর কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। ঐ তাগা তারামণির হউক বা না হউক, কিন্ত ঐ তাগা সম্বন্ধে যে বিশেষরূপ অনুসন্ধান আবশ্যক, সে বিষয়ে আর কিছু সন্দেহ নাই। মনে মনে এইরূপ ভাবিয়া, ঐ তাগা লইয়া গিয়া তারামণির বাড়ীওয়ালাকে দেখাইলাম। তিনি দেখিবামাত্রই কহিলেন, ঐ তাগা তারামণির। তারামণি বাড়ীওয়ালার বাড়ীর ভিতর সর্ব্বদা গমনাগমন করিত, বাড়ীওয়ালার পরিবারবর্গের সকলেই ঐ তাগা দেখিয়া কহিল উহা তারামণির তাগা। তদ্ব্যতীত ঐ পাড়ার স্ত্রীলোকগণ যাহার যাহার সহিত তারামণির জানা শুনা ছিল, তাহাদিগের প্রত্যেকেই, ঐ তাগা দেখিয়া কহিল, উহা তারামণির তাগা ও ঐ তাগা তারামণি সর্ব্বদা পরিয়া থাকিত। সমস্ত লোকেই যখন ঐ তাগা তারামণির বলিয়া চিনিতে পারিলল, তখন আমাদিগের মনেও আর কিছুমাত্র সন্দেহ রহিল না। তদ্ব্যতীত পরিশেষে যে কর্ম্মকার তারামণির তাগা প্রস্তুত করিয়াছিল, অনুসন্ধানে তাহাকেও পাওয়া গেল। সে ঐ তাগা দেখিবামাত্রই কহিল যে, ঐ তাগা তাহার নিজ হস্তে প্রস্তুত; সে তারামণির জন্য ঐ তাগা প্রস্তুত করিয়াছিল ও তারামণির অঙ্গে সে উহা সর্ব্বদাই দেখিয়াছে।
এই প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়াই মহম্মদ মসলিম, মহম্মদ হানিফ ও মহম্মদ কাছেমকে তারামণিকে হত্যা করা ও তাহার অলঙ্কার পত্র অপহরণ করা অপরাধে ধৃত করিলাম। উহাদিগকে কেবলমাত্র ধৃত করিয়াই যে আমরা স্থির থাকিলাম, তাহা নহে; এই অনুসন্ধানে যে সকল পুলিশ-কর্ম্মচারী নিযুক্ত ছিলেন, সকলে একত্র মিলিত হইয়া উহাদিগকে লইয়া কঠোর অনুসন্ধানে নিযুক্ত হইলেন। এই অনুসন্ধানের প্রথম উদ্দেশ্য উহারা কে, উহাদিগের বাসস্থান কোথায় ও উহাদিগের জীবন ধারণের উপায়ই বা কি? দ্বিতীয় উদ্দেশ্য, যে কয়েকজন ব্যক্তিকে আমরা পাইয়াছি, তদ্ব্যতীত আর কোন্ ব্যক্তি উহাদিগের দলভুক্ত আছে? ও এই দলের কার্য্যই বা কি? তৃতীয় উদ্দেশ্য, তারামণির গৃহ ও তাহার অঙ্গ হইতে যে সকল মূল্যবান দ্রব্য অপহৃত হইয়াছে, তাহার উদ্ধারের চেষ্টা, ও ঐ সকল দ্রব্য কিরূপে ও কোথায় বিক্রয় করা হইয়াছে বা লুকাইয়া রাখা আছে, অনুসন্ধান করিয়া তাহা বাহির করা। আর চতুর্থ উদ্দেশ্য এই যে, মতিয়া বিবি কে, তাহার বাসস্থান কোথায়, তাহার হত্যাকারীই বা কে, ও যদি হত্যা হইয়া থাকে, তাহা হইলে সেই হত্যার উদ্দেশ্যই বা কি, ও এখন সেই মৃতদেহই বা কোথায় গেল?
আমাদিগের উদ্দেশ্য অনুযায়ী অনুসন্ধানের বিশেষরূপ চেষ্টা করিলাম, কিন্তু কিছুই জানিতে পারিলাম না। কখন বা উহাদিগকে ভয় প্রদর্শন ও উহাদিগের উপর নিতান্ত কঠোর ব্যবহার আরম্ভ করিলাম, কখন বা উহাদিগের সহিত মিত্রতা করিয়া মিত্রভাব দেখাইতে লাগিলাম; কিন্তু আমাদিগের উদ্দেশ্য কিছুতেই সফল হইল না। যখন দেখিলাম, উহাদিগের নিকট হইতে আমরা কোন কথা বাহির করিতে সমর্থ হইলাম না, আমাদিগের চেষ্টা যত্ন, কৌশল, প্রভৃতি সমস্তই ব্যর্থ হইয়া গেল, তখন অনন্যোপায় হইয়া আমরা পরিশেষে ঐ অপরাধের নিমিত্ত উহাদিগকে বিচারকের নিকট প্রেরণ করিলাম। কিন্তু বলা বাহুল্য, উহাদিগের উপর পূর্ব্বকথিত যে সকল প্রমাণ আদালতে প্রমাণিত হইল, তাহাতে কোন বিচারকই উহাদিগের সকলকে কোনরূপেই দণ্ড প্রদান করিতে পারেন না। তাহার উপর শবছেদকরী ডাক্তারের সাক্ষ্য। মৃতদেহ যেরূপ পচিয়া গিয়াছে, তাহাতে তিনি মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করিতে সমর্থ হন না। তিনি উহার প্লীহা, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড প্রভৃতির কিয়দংশ কাটিয়া রাসায়নিক পরীক্ষার নিমিত্ত প্রেরণ করেন। রাসায়নিক পরীক্ষক পরীক্ষা করিয়া যে রিপোর্ট প্রদান করেন, তাহাতে জানিতে পারা যায়, বিষপানই উহার মৃত্যুর কারণ। ইহাতে অসামীগণের যে বিশেষ সুবিধাজনক বিষয়, তাহার আর কিছু মাত্র সন্দেহ নাই। কারণ, আমরা প্রমাণ ও যুক্তির দ্বারা স্থির করিয়াছিলাম যে, উহারা তারামণিকে হত্যা করিয়া তাহার মৃতদেহ লোহার সিন্দুকে বন্ধ করিয়া দিয়া, তাহার যথা-সর্ব্বস্ব চুরি করিয়া লইয়া গিয়াছিল, কিন্তু রাসায়নিক পরীক্ষকের পরীক্ষা-ফল পাইয়া সেই হত্যার যুক্তি অন্যরূপ ধারণ করিল। তখন মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম, বিষ-প্রয়োগে তারামণিকে হত্যা করিল কিরূপে? যাঁহার নিকট প্রথমে এই মোকর্দ্দমার বিচার হয়, তিনি মহম্মদ হানিফ ও মহম্মদ কাছেমকে অব্যাহতি দিয়া কেবল মহম্মদ মসলিমকে বিচারার্থ উচ্চ আদালতে প্রেরণ করেন।