মাধবীকঙ্কণ/বার
কয়েক দিবসের মধ্যে নরেন্দ্রনাথ বিশেষ আরোগ্যলাভ করিলেন। কিন্তু শারীরিক আরোগ্যলাভ হইলে কি হইবে, অন্তঃকরণ চিন্তায় ক্লিষ্ট হইতে লাগিল। তাহার সেই ঘরে কেবল মসরুর বা জেলেখা ভিন্ন কেহ আইসে না, কেহই কথা কহে না, মসুরুরকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিলে সে হাসিয়া চলিয়া যায়, জেলেখা ওষ্ঠের উপর অঙ্গুলিস্থাপন করে, অথচ স্পষ্ট বোধ হয়, জেলেখা তাঁহার দুঃখে দুঃখিনী, তাহার বিপদে বিপদাপন্ন। নরেন্দ্রনাথ ভাবিয়া কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। তিনি কি বঙ্গদেশে আসিয়াছেন। সুলতান সুজা নরেন্দ্রনাথকে ভালবাসিতেন, সুলতনই কি স্বয়ং আজ্ঞা দিয়া নরেন্দ্রের পীড়ার সময় রাজমহলে আনাইয়াছেন? সম্ভব বটে, রাজ-অট্টালিকা না হইলে এরূপ বহুমূল্য দ্রব্য কোথায় সম্ভবে? কিন্তু সুজা কাশীর যুদ্ধে পরাস্ত
হইয়াছিলেন, নরেন্দ্রনাথ মৃতপ্রায় হইয়া শহন্তে পড়িয়াছিলেন, তাহা তাহার অল্প-অল্প স্মরণ ছিল। শক্র কি অবশেষে তাঁহাকে জল্লাদহস্তে দিবার জন্য এইরূপ শুশ্রূষা করিতে ছিলেন? নরেন্দ্র কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না।
রজনী দ্বিপ্রহর, নরেন্দ্রনাথ একখানি দ্বিরদরদখচিত আসনে উপবেশন করিয়া রহিয়াছেন। সম্মুখে এক দীপ জ্বলিতেছে। নরেন্দ্র হন্তে গণ্ডস্থাপন করিয়া গভীর চিন্তায় মগ্ন রহিয়াছেন।
যখন চিন্তা-রজ্জু ছিন্ন হইল, একবার বদনমণ্ডল উঠাইয়া সম্মুখে চাহিয়া দেখিলেন। কি দেখিলেন?জেলেখা নিঃশব্দে দণ্ডায়মান রহিয়াছেন। জেলেখার মুখমণ্ডল ও ওষ্ঠদ্বয় পাণ্ডবর্ণ, কেশপাশ আলুলায়িত, বদন বিষন্ন, নয়নদ্বয় জলে ছলছল করিতেছে। নরেন্দ্র দেখিয়া বিস্মিত হইলেন, জিজ্ঞাসা করিল,—“রমণী! আপনি কে জানি না আপনার কি অভিপ্রায় প্রকাশ করিয়া বলুন।”
জেলেখা উত্তর করিল না, ধীরে ধীরে একবিন্দু চক্ষের জল মোচন করিল।
নরেন্দ্র আবার বলিলেন,—“আপনাকে দেখিয়া বোধ হইতেছে, কোন বিপদ বা ভয় সন্নিকট। প্রকাশ করিয়া বলুন, যদি উদ্ধারের উপায় থাকে, আমি চেষ্টা করিব।”
জেলেখা তথাপি নীরব; নীরবে অশ্রুমোচন করিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেল।
নরেন্দ্র বিস্মিত হইলেন। নিশাযোগে এই সহসা সাক্ষাতের অর্থ কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। তাহার বোধ হইল যেন, কোন ঘোর সঙ্কট সন্নিকট। তিনি হস্তে গণ্ডস্থাপন করিয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন, অন্যমনস্ক হইয়া নানা বিপদের চিন্তা করিতে লাগিলেন।
সহসা গৃহের দীপ নির্বাণ হইল, সেই ঘোর অন্ধকারে একজন খোজা আসিয়া নরেন্দ্রকে তাহাব সঙ্গে যাইতে ইঙ্গিত করিল। নরেন্দ্র সভয়ে তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ 'চলিলেন। উভয়ে নিস্তব্ধে কত ঘর, কত প্রাণ যে পার হইয়া গেলেন, তা বলা যায় না। নরেন্দ্র রাজমহলের প্রাসাদ দেখিয়াছিলেন, কিন্তু এরূপ প্রাসাদ কখনও দেখেন নাই। কোথাও শ্বেতপ্রস্তর বিনির্মিত ঘরের ভিতর সুন্দর গন্ধদীপ জ্বলিতেছে, শ্বেতপ্রস্তর স্তম্ভকারে উন্নত ছাদ ধরিয়া রহিয়াছে, স্তম্ভে, ছাদে ও চারিদিকে বহুমূল্য প্রস্তরের ও সুবর্ণ-রৌপ্যের যে কারুকার্য, তাহা বর্ণনা করা যায় না। কোথাও প্রাঙ্গণে ঈষৎ চন্দ্রালোকে সুন্দর ফোয়ারার জল খেলিতেছে, চারিদিকে সুন্দর বাগান, সুন্দর পুষ্পলতা, তাহার উপর দিয়া নৈশ সমীরণ নিস্তব্ধে বহিয়া যাইতেছে। কোথাও বা উদ্যান-বৃক্ষতলে আসীন হইয়া দুই একজন উচ্চবর্ণ উজ্জলবেশধারিণী রমণী বীণা বাজাইতেছে অথবা নিদ্রার বশীভূত হইয়া সুখে নিদ্রা যাইতেছে। বাহিরেখোজাগণ নিঃশব্দে পদচারণ করিতেছে আর রহিয়া বহিয়া মৃদুস্বরে নৈশ বায়ু সেই ইন্দ্রপুরীর উপর বহিয়া যাইতেছে। নরেন্দ্র আপন বিপদকথা ভুলিয়া গেলেন, এই সুন্দর প্রাসাদ, সুন্দর ঘর ও প্রাণ, সুন্দর উদ্যান ও এই অপূর্ব পরিবেশধারিণী রমণীদিগকে দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। তিনি কোথায়? এ কোন্ স্থান?
কতক্ষণ পরে তিনি একটি উন্নত সুবর্ণ-খচিত কবাটের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। সহসা সেই কবাট ভিতর হইতে খুলিয়া গেল। নরেন্দ্র একটি উন্নত আলোকপূর্ণ ঘরে প্রবেশ করিলেন। সহসা অন্ধকার হইতে উজ্জ্বল আলোকে আনীত হওয়ায় কিছুই দেখিতে পাইলেন না। অলোক সহ্য করিতে না পারিয়া হস্তদ্বারা নয়ন আবৃত করিলেন, অমনি শত শত নারী-কণ্ঠ-বিনিঃসৃত হাস্যধ্বনিতে সে উন্নত প্রাসাদ ধ্বনিত হইল।
নরেন্দ্র জীবনে কখনও এরূপ বিস্মিত হয়েন নাই। কোথায় আসিলেন? এ কি প্রকৃত ঘটনা, না স্বপ্ন? এ কি পার্থিব ঘটনা, না ইন্দ্রজাল? নরেন্দ্র পুনরায় চক্ষু উন্মীলন করিলেন, পুনরায় উজ্জ্বল আলোকচ্ছটায় তাহার নয়ন ঝলসিত হইল। আবার হস্তদ্বারা নয়ন আবৃত করিলেন। পুনরায় শত নারী-কণ্ঠধ্বনিতে প্রসাদ শব্দিত হইল।
ক্ষণেক পরে যখন নরেন্দ্র চাহিতে সক্ষম হইলেন, তখন যাহা দেখিলেন, তাহাতে তাহার বিস্ময় দশগুণ বর্ধিত হইল। দেখিলেন মর্মর-প্রস্তর বিনির্মিত একটি উচ্চ প্রাসাদের মধ্যে তিনি আনীত হইয়াছেন। সারি সারি প্রস্তরস্তম্ভ উচ্চ ছাদ ধারণ করিয়া রহিয়াছে সে ছাদে ও সে স্তম্ভে যেরূপ বিভিন্ন বর্ণের প্রস্তরে, কারুকার্য দেখিলেন, সেরূপ তিনি জগতে কুত্রাপি দেখেন নাই। স্তম্ভ হইতে স্তম্ভন্তরে সুগন্ধ পুস্পমালা লম্বিত রহিয়াছে, নীচে স্তবকে স্তবকে পুষ্পরাশি সজ্জিত রহিয়াছে, শতনারীকণ্ঠ হইতে পুষ্পমালা দোদুল্যমান হইয়া সুগন্ধে ঘর আমোদিত করিতেছে। ছাদ হইতে, স্তম্ভ হইতে পুষ্প ও পত্ররাশির মধ্য হইতে সহস্র গন্ধদীপ নয়ন ঝলসিত করিতেছে ও সেই সুন্দর উন্নত প্রাসাদ আলোকময় ও গন্ধে পরিপূর্ণ করিতেছে। রেখাকারে শত রমণী দণ্ডায়মান রহিয়াছে, সেই রেখার মধ্যস্থানে দীপালোক-প্রতিঘাতী রত্নরাজিবিনির্মিত উচ্চ সিংহাসনে তাহাদিগের রাজ্ঞী উপবেশন করিয়া আছেন। এ স্বপ্ন না ইন্দ্রজাল? নরেন্দ্র আলফ্ লায়লা পড়িয়াছিলেন যে, এবনহাসেন নামক একজন দরিদ্র ব্যক্তি একদিন নিদ্রা হইতে উখিত হইয়া সহসা দেখিলেন যেন তিনি বোগদাদের খালিফা হইয়াছেন। নরেন্দ্রের স্বপ্ন তদপেক্ষাও বিস্ময়কর, তিনি যেন সহসা স্বর্গোস্তানে আপনাকে অপ্সরাবেষ্টিত দেখিলেন।
নয়ে সেই অপ্সরা বা নারীরেখার দিকে চাহিয়া দেখিলেন, তাহার নিয়ে রেখাকারে দণ্ডায়মান রহিয়াছে সকলেই বক্ষের উপর দুই হস্ত স্থাপন করিয়া ভূমির দিকে চাহিয়া রহিয়াছে, দেখিলে জীবনশুন্য পুত্তলির ন্যায় বোধ হয়। তাহাদের কেশপাশ হইতে মণি-মুক্তা দীপালোক প্রতিহত করিতেছে, উজ্জল বহুমূল্য বসন সেই আলোকে অধিকতর উজ্জ্বল দেখাইতেছে। তাহারা সকলেই যেন রাজ্ঞীর আদেশসাপেক্ষ হইয়া নিঃশব্দে দণ্ডায়মান রহিয়াছে।
সেই রাজ্ঞীর দিকে যখন চাহিলেন, নরেন্দ্র তখন শতগুণ বিস্মিত হইলেন। যৌবন অতীত হইয়াছে, কিন্তু যৌবনের উজ্জ্বল সৌন্দর্য ও উন্মত্ততা এখনও বিলীন হয় নাই, বোধ হয় যেন প্রথম যৌবনের বেগ ও লালসা বয়সে আরও বৃদ্ধি পাইয়াছে। রাজ্ঞীর শরীর উন্নত, ললাট প্রশস্ত, ওষ্ঠ সমস্ত বদনমণ্ডল রক্তবর্ণ, কৃষ্ণ কেশপাশ হইতে একটিমাত্র বহুমূল্য হীরকখণ্ড আলোকে ধক্ ধক্ করিতেছে। নয়নদ্বয় তদপেক্ষা অধিক জ্যোতি সহিত উজ্জ্বল মখমলের অবগুঠনে সে উজ্জ্বলতা গোপন করিতে অক্ষম। দেখিলেই বোধ হয়, নারী হউন বা অপ্সরা হউন, ইনি কোন অসাধারণ মহিলা জগৎ বা স্বর্গপুরী শাসন করিবার জন্যই ধরাতে অবতীর্ণ হইয়াছেন।
কিন্তু নরেন্দ্রের এসমস্ত দেখিবার অবসর ছিল না। সহসা যেন স্বর্গীয় বাদ্যযন্ত্র হইতে কোন স্বর্গীয় তান উত্থিত হইতে লাগিল। তাহার সহিত সেই শত অপ্সরা কণ্ঠধ্বনি মিশ্রিত হইতে লাগিল। সেরূপ-অপরূপ গীত নরেন্দ্র কখনও শুনেন নাই, তাহার সমস্ত শরীর কণ্টকিত হইল, তিনি নিশ্চেষ্ট হইয়া সেই গীত শ্রবণ করিতে লাগিলেন। সেই গীত ক্রমে উচ্চতর হইয়া সেই উন্নত প্রাসাদ অতিক্রম করিয়া, নৈশ গগণে বিস্তার পাইতে, লাগিল, বোধ হয় যেন, নৈশ গগণবিহারী অদৃষ্ট জীবগণ সেই গীতের সহিত যোগ দিয়া শতগুণ বর্ধিত করিতে লাগিল। ক্রমে আবার মন্দীভূত হইয়া সে গীত ধীরে ধীরে লীন হইয়া গেল, আবার প্রাসাদ নিস্তব্ধ—শব্দশূন্য। এইরূপ একবার, দুইবার, তিনবার গীতধ্বনি শ্রুত হইল। সেই গীতধ্বনি ক্রমে লীন হইয়া গেল।
তখন রাজ্ঞী সজোরে পদাঘাত করায় সেই প্রাসাদের একদিকের একটি রক্তবর্ণ যবনিকা পতিত হইল। নরেন্দ্র সভয়ে চাহিয়া দেখিলেন, তাহার অপর পাশে চারিজন কুঠারধারী কৃষ্ণবর্ণ খোজা রক্তবর্ণ পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া দণ্ডায়মান রহিয়াছে। রাজ্ঞী পূনরার পদাঘাত করায় তাহাদের মধ্যে প্রধান একজন রাজ্ঞীর সিংহাসনপার্শ্বে যাইয়া দণ্ডায়মান হইল। নরেন্দ্র দেখিলেন, সে মসরুর। নরেন্দ্রের ধমনীতে শোণিত শুষ্ক হইয়া গেল।
মসরুর রাজ্ঞীর সহিত অনেকক্ষণ অতি মৃদুস্বরে কথা কহিতে লাগিল কি বলিতেছিল নরেন্দ্র তাহা শুনিতে পাইলেন না; কি কথা কহিতে কহিতে মধ্যে মধ্যে সে নরেন্দ্রের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিতে লাগিল, মধ্যে মধ্যে দম্ভে দম্ভে ঘর্ষণ করিয়া নয়ন আরক্ত করিয়া, যেন কি উত্তেজনা প্রকাশ করিতে লাগিল। মসরুর কি বলিতেছিল, নরেন্দ্র তাহা জানিতে পরিলেন না, কিন্তু তাহার আকৃতি ও অঙ্গভঙ্গি দেখিয়া নরেন্দ্রের হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার হইতে লাগিল। নরেন্দ্রকে এই অপরিচিত দেশে জল্লাদহস্তে প্রাণ দিতে হইবে, তাঁহার প্রতীতি হইল।
রাজ্ঞী পুনরায় পদাঘাত করিলেন। তৎক্ষণাৎ প্রাসাদের অন্য পারে একটি হরিদ্বর্ণ যবনিকা পতিত হইল। তাহার অপর পাশে চারিজন পরিচারিকা হরিদ্বর্ণ পরিয়ে দণ্ডায়মানা রহিয়াছে। দ্বিতীয়বার পদাঘাত করায় সেই পরিচারিকাগণ একজন বন্দীকে রাজ্ঞীর নিকট ধরিয়া আনিল। নরেন্দ্র সবিস্ময়ে দেখিলেন সে বন্দী জেলেখা। জেলেখা কি বলিল, নরেন্দ্র তাহা শুনিতে পাইলেন না, কিন্তু তাহার আকার ও অঙ্গভঙ্গি দেখিয়া বোধ হইল, সে রাজ্ঞীর অনুগ্রহ প্রার্থনা করিতেছে, অশ্রুত্যাগ করিয়া রাজ্ঞীর পদে লুষ্ঠিত হইতেছে।
রাজ্ঞী বার বার নরেন্দ্রের দিকে চাহিয়া দেখিলেন। নরেন্দ্র স্বভাবতঃ গৌরবর্ণ তাঁহার নয়ন জ্যোতিঃ-পরিপূর্ণ. ললাট উন্নত, বদনমণ্ডল উগ্র ও তেজোব্যঞ্জক। সাহসী, অল্পবয়স্ক সুন্দর যুবার উন্নত ললাট ও প্রশস্ত মুখমণ্ডলের দিকে রাজ্ঞী বার বার নয়নক্ষেপণ করিতে লাগিলেন।
নরেন্দ্রের দিকে অনেকক্ষণ চাহিতে চাহিতে রাজ্ঞী নরেন্দ্রের অঙ্গুলীতে একটি অঙ্গুরীয় দেখিতে পাইলেন, হতভাগিনী জেলেখা নরেন্দ্রের পীড়ার সময়ে একদিন লীলাক্রমে সে অঙ্গুরীয়টি পরাইয়া দিয়াছিল, সেই অবধি তাহা নরেন্দ্রের হাতে ছিল। অঙ্গুরীয় রাজ্ঞীর পরিচারিকাগণ চিনিল, রাজ্ঞী স্বয়ং চিনিলেন। তখন ক্রোধে রাজ্ঞীর সুন্দর ললাট রক্তবর্ণ হইল, নয়ন হইতে অগ্নি বহির্গত হইল।
বিচার শেষ হইল। নির্দয়হৃদয়া রাজ্ঞী আদেশ দিলেন, জেলেখা অপরাধিনী, পাপীয়সীকে শূলে দাও। কাফেরকে লইয়া যাও, হস্তিপদে দলিত করিয়া কাফেরকে হনন কর?” একেবারে দীপাবলী নির্বাণ হইল। নিঃশব্দে অন্ধকারে খোজাগণ রজ্জু দ্বারা নরেন্দ্রকে বন্ধন করিতে লাগিল।
অন্ধকারে নরেন্দ্রের মুখের নিকট একটি পাত্র ধারণ করিল। নরেন্দ্র বিস্ময় ও উদ্বেগে তৃষ্ণার্ত হইয়াছিলেন, সেই পাত্র হইতে পানীয় পান করিলেন, অচিরাৎ অচেতন হইয়া পড়িলেন। তাহার পর কি হইল, তিনি জানিলেন না, কেবল বোধ হইল যেন সেই অন্ধকারে কে আসিয়া তাঁহার হইতে সেই অঙ্গুরীয় উন্মোচন করিল, আর কে যেনসেই অন্ধকারে রোদন করিতেছিল। তিনি স্বপ্নে দেখলেন, সে অভাগিনী জেলেখা!
নরেন্দ্রনাথ যখন জাগরিত হইলেন, তখন দেখিলেন, সূর্যোদয় হইয়াছে সূর্যের রশ্মিতে তিনি একটি প্রশস্ত বাজারের মধ্যে একটি পর্ণকুটীরের ধারে শুইয়া রহিয়াছেন। সূর্যের নবজাত রশ্মি তাঁহার মুখে পতিত হইয়াছে ও পথ, ঘাট, অট্টালিকা, দোকান, বাজার, বস্তী আলোকময় করিয়াছে। এ কোন শহর? এ কি বঙ্গদেশের রাজধানী রঙমহল? সুলতান সুজা কি অনুগ্রহ করিয়া তাঁহাকে বারাণসী হইতে এই স্থানে আনিয়াছেন? গত নিশায় কি তিনি এই ভূমিশয্যায় শুইয়া প্রাসাদ ও পরীর স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন?