মানসিংহ/ছোট রাণীর নিকটে মাধীর বাক্য

ছোট রাণীর নিকটে মাধীর বাক্য।

 সাধীর বচন শুনি, চন্দ্রমুখী মনে গুণি, বটে বটে বলিয়া উঠিলা। মন করে ধড়ফড়, বেশ কৈলা দড়বড়, পতি ভুলাইতে মন দিলা॥ খোঁপা বাঁধি তাড়াতাড়ি, পরিয়া চিকণ শাড়ী, পড়িয়া কাজল চক্ষে দিলা। পড়া তৈল মুখে মাখি, পড়া ফুল চুলে রাখি, নানামন্ত্রে সিন্দূর পরিলা॥ পরি পড়া গন্ধ চুয়া, মুখে পড়া পাণ গুয়া, ন্যাস বেশ নাপান ঝাঁপান। গলিত হয়েছে কূচ, কেমনে সে হবে উচ, ভাবিয়া উপায় নাহি পান॥ ছেলে কেন্দে উঠে কোলে, তোষেন মধুর বোলে, কন্দানা রে অই তোর বাপা। তোর বাপে আনি গিয়া, থাক বাছা চুপ দিয়া, অই তাকে কাণ কাটা হাঁপা॥ সাধীরে বালক দিয়া, দেহুড়ীর কাছে গিয়া, রহিলা প্রহরী যেন রেতে। প্রভু আসিবেন যেই, ধরে লয়ে যাব তেঁই, না দিব সতার ঘরে যেতে॥ ওথা পদ্মমুখী লয়ে, মাধী রসে মগ্ন হয়ে, নানামতে বেশ করি দিলা। পতি ভুলাবার কলা, জানে নানামত ছলা, ক্রমে ক্রমে সব শিখাইলা॥ সতিনী তোমার যেটা, কোলে তার তিন বেটা, ঘর দ্বার সকলি তাহার। শ্বশুর শাশুড়ী যারা, তাহারি অধীন তারা, এই মাধী কেবল তোমার॥ দরবারে জয় লয়ে, প্রভু আইলা রাজা হয়ে, আগে যদি তার ঘরে যান। মহারাণী হবে সেই, মোর মনে লয় এই, তুমি হবে দাসীর সমান॥ একে তার তিন বেটা, তাহারে আঁটিবে কেটা, আরো যদি রাণী হয় সেই। রাজপাট সব লবে, তোমার কি দশা হবে, আমার ভাবনা বড় এই॥ দুয়ারে দাঁড়ায়ে থাক, আঁখি ঠার দিয়া ডাক, আমি গিয়া ঠাকুরেরে ডাকি। আগে তাঁরে ঘরে আনি, তোমারেত করি রাণী, তবে সে সতিনী পায় ফাকী॥ এত বলি তাড়াতাড়ি, চলিল বাহির বাড়ী, মাধী যেন মাতাল মহিষী। চূড়া ছাঁদে বাঁধা চুল, তাহাতে চাঁপার ফুল, আঁচল লুটায় মাটি মিশি॥ নাপান কাঁপানে যায়, ডানি বামে নাহি চায়, উত্তরিলা যথা মজুন্দার। দাঁড়াইয়া একপাশে, কথা কহে মৃদুহাসে, রায় গুণাকর কহে সার॥