রন্ধন।

<poem<বেলা হৈল অন্নপূর্ণা রান্ধ বাড় গিয়া। পরম আনন্দ দেহ পর মান্ন দিয়া॥ তোমার অন্নের বলে, অদ্যাবধি আছে গলে, কালরূপি কালকুট অমৃত হইয়া। এক হাতে পানপাত্র, আর হাতে হাতা মাত্র, দিতেপার চতুর্ব্বর্গ ঈষদ হাসিয়া॥ তুমি অন্ন দেহ যারে, অমৃত কি মিঠা তারে, সুধাতে কে করে সাদ এসুধা ছাড়িয়া। পরশিয়া অন্ন সুধা, ভারতের হর ক্ষুধা মা বিনা বালকে অন্ন কে দেয় ডাকিয়া॥ ধ্রু॥</poem>

 ভোগের রন্ধনে ভার লয়ে পদ্মমুখী। রন্ধন করিতে গেলা মনে মহাসুখী॥ স্নান করি করি রামা অন্নদার ধ্যান। অন্নপূর্ণা রন্ধনে করিলা অধিষ্ঠান॥ হাস্যমুখী পদ্মমুখী আরম্ভিলা পাক। শড়শড়ি ঘণ্ট ভাজা নানামত শাক॥ ডালি রান্ধে ঘনতর ছোলা অরহরে। মুগ মাষ বরবটী বাটুলা মটরে॥ বড়া বড়ী কলা মূলা নারিকেল ভাজা। দুধথোড় ডালনা শুক্তনি ঘণ্ট তাজা॥ কাটালের বীজ রান্ধে চিনি রসে বুড়া। তিল পিটালিতে লাউ বার্ত্তাকু কুমুড়া॥ নিরামিষ তেইশ রান্ধিলা অনায়াসে। আরম্ভিলা বিবিধ রন্ধন মৎস্য মাসে॥ কাতলা ভেকুট কই ঝাল ভাজা কোল। সীবপোড়া ঝুরী কাটালের বীজে ঝোল॥ কাল ঝোল ভাজা রান্ধে চিতল ফলই। কই মাগুরের ঝোল ভিন্ন ভাজে কই॥ মায়া সোণা খড়কীর ঝোলভাজা সার। চিঙ্গড়ীর ষাল বাগা অমৃতের তার॥ কণ্ঠা রান্ধি রান্ধে কই কাতলার মুড়া। তিত দিয়া পচামাছে রান্ধিলেক গুঁড়া॥ আম্র দিয়া শৌলমাহে ঝোল চড়চড়ী। আড়ি রান্ধে আদারসে দিয়া ফুলবড়ী॥ রুই কাতলার তৈলে রান্ধে তৈলশাক। মাছের ডিমের বড়া মৃতে দেয় ডাক॥ বাচার করিলা ঝোল খয়রার ভাজা। অমৃত অধিক বলে অমৃতের রাজা॥ সুমাছ বাছের বাছ আর মাছ যত। ঝাল ঝোল চড়চড়ী ভাজা কৈল কত॥ বড়া কিছু সিদ্ধ কিছু কাছিমের ডিম। গঙ্গাফল তার নাগ অমৃত অসীম॥ কচি ছাগ মৃগ মাংসে ঝাল ঝোল রসা। কালিয়া দোলমা বাগা সেকচী সমসা॥ অন্য মাংস সীকভাজা কাবাব করিয়া। রান্ধিলেন মুড়া আগে মসলা পুরিয়া॥ মৎস্য মাংস সাঙ্গ করি অম্বল রান্ধিলা। মৎস্য মূলা বড়া বড়ী চিনি আদি দিলা॥। আম আমসত্ব আর আমসী আচার। চালিতা তেতুল কুল আমড়া মন্দার॥ অম্বল রান্ধিয়া রামা আরম্ভিলা পিঠা। সুধাবলে এই সঙ্গে আমি হব মিঠা॥ বড়া এলো আসিকা পীযূষী পুরী পুলী। চুষী রুটী রামরোট মুগের সামুলী॥ কলাবড়া ঘিয়ড় পাঁপড় ভাজাপুলী। সুধারুচি মুচমুচি লুচি কতগুলি॥ পিঠা হৈল পরে পরমান্ন আরম্ভিলা। চালু চিনা ভুরা রাজবার চালু দিলা। পরমান্ন পরে খেচরান্ন রান্ধে আর। বিষ্ণুভোগ রান্ধিলা রান্ধনী লক্ষ্মী যার। অতুলিত অগণিত রান্ধিয়া ব্যঞ্জন। অন্ন রান্ধে রাশি রাশি অন্নদামোহন। মোটা সুরু ধান্যের তণ্ডুল তরতমে। আসু বোরা আমন রান্ধিল ক্রমে ক্রমে। দলকচু ওড়কচু ঘিকলা পাতরা। মেঘহাসা কালমানা রায় পানিভরা॥ কালিন্দী কনক চর ছায়াচূর পুদি। শুয়া শালি হরিলেবু গুয়াথুরি সুদী॥ ধিশালী পোয়ালবিড়া কলামোচা আর। কৈজুড়ি খাজুরছরী চিনা ধলবার॥ দাদুশাহি বাঁশফুল ছিলাট করুচি। কেলেজিরা পদ্মরাজ দুদুরাজ লুচি। কাঁটারাঙ্গি কোঁচাই কপিলা ভোজরান্ধে ধুলে বাঁশগজাল ইন্দ্রের মন বান্ধে॥ বাজাল মরীচাশালি ভুরা বেনাফুল। কাজলা শঙ্করচিনা চিনিসমতুল॥ মাকু মেটে মধিলোট শিবজটা পরে। দুধপনা গঙ্গা জল মুনি মন হরে। সুধা দুধকলম খড়ি কামুঠি রান্ধে। বিষ্ণুভোগ গন্ধেশ্বরী গন্ধতার কান্দে। রান্ধিয়া পায়রারস রান্ধে বাঁশমতী। কদমা কুসুমশালি মনোহর অতি॥ রমা লক্ষ্মী আলতা দনার গুঁড়া রান্ধ্রে। জুতী গন্ধমালতী অমৃতে ফেলে বান্ধে॥ লতামউ প্রভৃতি রাঢ়র সরু চালু। রসে গন্ধে অমৃত আপতি আলু থালু॥ অন্নদার রন্ধন ভারত কিবা কয়। মৃত হয় অমৃত অমত মৃত হয়॥