মা/দ্বিতীয় খণ্ড/ষোলো
—ষোলো—
এরপরই উঠে দাঁড়ালো এণ্ড্রি। জজের দিকে চেয়ে বললো, আত্মপক্ষ সমর্থনকারী ভদ্রলোকগণ···
জনৈক জজ রেগে চেঁচিয়ে বললেন, তোমার সামনে আদালত, আত্মপক্ষ-সমর্থনকারী ভদ্রলোকগণ নয়।
এণ্ড্রি মাথা দুলিয়ে বললো, তাই নাকি? আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না। আমি দেখছি, আপনারা বিচারক নন, বিবাদী মাত্র।
বাজে না ব’কে মামলার কথা বল!
মামলার কথা? বহুৎ আচ্ছা। আমি জোর ক’রে মনে ক’রে নিলুম যে আপনারা সত্যি-সত্যি জজ, সাধু স্বাধীনচেতা পুরুষ···
আদালত তোমার এসব সার্টিফিকেট চায় না।
এসব চায় না? আচ্ছা, আমি বলে যাচ্ছি। আপনারা হচ্ছেন স্বাধীন মানুষ— আত্ম- পর ভেদ নেই। এখন, আপনাদের সামনে দাড়িয়েছে দু’পক্ষ: একদল নালিশ জানাচ্ছে, ও আমার যথাসর্বস্ব লুণ্ঠন ক’রে নিয়েছে, আমার সর্বনাশ করেছে। আর একদল জবাব দিচ্ছে, আমার লুণ্ঠন করার এবং সর্বনাশ করার অধিকার আছে; কারণ আমি সশস্ত্র···
দয়া ক’রে গালগল্প রাখো।
সে কি! আমি তো শুনেছি বুড়োরা গালগল্পের বড্ডো ভক্ত।
তোমার মুখ বন্ধ ক’রে দোব। মামলার কথা বলো···রসরঙ্গ না ক’রে।
মামলার কথা! কিন্তু বেশি কি আর বলবো। যা বলবার তা তো আমার কমরেডরাই বলেছে। বাকি যা তা বলবারও দিন আসছে। তা বলা হবে···দিন আস্ছে যখন···
আমি তোমাকে কথা বলতে নিষেধ করছি। ভ্যাসিলি শ্যাময়লভ···
শ্যাময়লভ উঠে তার কোঁকড়া চুল নেড়ে বললো, সরকারি উকিল আমাদের সঙ্গীদের বলেছেন, অসভ্য, সভ্যতার শত্রু···আমি জিগ্যেস করি, আপনাদের এই সভ্যতা চিজটা কেমন?
তোমার সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করতে আসিনি আমরা। কাজের কথা বল।
শ্যাময়লভ সে কথা কানে না তুলে বলতে লাগলো, আপনারা গোয়েন্দা পোষেন, মা-বোনদের পথ-ভ্রষ্ট করেন। মানুষকে এমন অবস্থায় ফেলেন যে, সে চুরি করতে, খুন করতে বাধ্য হয়। তাকে আপনারা নষ্ট করেন মদ দিয়ে···আন্তর্জাতিক হত্যা-ব্যবসায় দিয়ে, বিশ্বব্যাপী মিথ্যা, হীনতা এবং বর্ববতা দিয়ে···এই তো আপনাদের সভ্যতা···। হাঁ, আমরা শত্রু···এ-সভ্যতার শত্রু।···
জজ উচ্চকণ্ঠে তাকে নিষেধ করলো, কিন্তু শ্যাময়লভ যেন আরো জ্ব’লে উঠলো··· কিন্তু আমরা শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি আর একটা সভ্যতাকে, যার স্রষ্টাদের আপনারা নির্যাতিত করেছেন, জেলে পচিয়ে মেরেছেন, পাগল ক’রে দিয়েছেন,···
জজ তাকে বসিয়ে দিলেন।
কিছুক্ষণ পরে বিচার সাঙ্গ হ’লো। দণ্ড হলো—সাইবেরিয়ায় নির্বাসন সকলের। চোখের জলের মধ্য দিয়ে আত্মীয়-বন্ধু-বান্ধবগণের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে আসামীরা রক্ষীদের সঙ্গে আদালত হ’তে বেরিয়ে গেলো।
মাও ধীরে ধীবে আদালতের বাইরে এলেন। তখন রাত হ’য়ে গেছে। দলে দলে নরনারী এসে তাকে অভিনন্দিত করলো। শশেংকা এসে পেভেলের কথা জিগ্যেস করলো। মা সকল প্রশ্নের জবাব দিলেন ধীরে, স্থিরভাবে। তিনি ভাবছিলেন, পেভেল, গেলো এইবার আমার পালা। আমারও এমনি বিচার হবে, নির্বাসন হ’বে। আমি তখন শুধু একটি আবেদন করবো, সে হচ্ছে পেভেল যেখানে থাকবে, আমায় যেন সেইখানে নির্বাসিত করে।