মা/দ্বিতীয় খণ্ড/সতেরো

—সতেরো—

 বাড়িতে এসে মা এবং শশা দু’জনে বসে বুনছে ভবিষ্যতের স্বপ্নজাল। পেভেলের শশার বিয়ে হ’বে···ছেলে হবে··· মা নাতিকে আদর করবেন··· পেভেল বাঁধা পড়তে চাইবে না···কাজের তাগিদে দূরে চলে যেতে চাইবে···শশা বাধা দেবে না···সে হবে যোগ্যা সঙ্গিনী···স্বামীর সহায়··· বাধা নয়···এমনি আরো কত-কি!

 হঠাৎ আইভানোভিচ এসে ঘরে ঢুকলো। বললো, তোমরা এখান থেকে পালাও··· নইলে ধরা পড়বে। গোয়েন্দা যেমন ভাবে আমার পিছু নিয়েছে তাতে খুব সম্ভব আমি শীগ্‌গিরই গ্রেপ্তাব হবো। এই পেভেলের বক্তৃতা···ছাপানো দরকার···নিয়ে লুকিয়ে রাখো··· আইভানকে দিয়ো···ব’লে একখানা কাগজ মার হাতে দিলো।

 মা বললেন, আমার ধরবে?

 নিশ্চয় এবং তাতে অনেক কাজের ব্যাঘাত হ’বে। তুমি বরং লিউদ্‌মিলার কাছে যাও।...কাল ভোরে একটা ছেলে পাঠিয়ে খবব নিয়ো, আমি আছি কি নেই।

 মা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন পথে। শশা অনেক দূর তাঁর সঙ্গে গেলো, বললো, চমৎকার এই আইভানোভিচ। মরণ যখন ডাক দেবে, তখনো ও চলবে এমনি সহজ শান্তভাবে। চশমাটা ঠিক করতে করতে শুধু বলবে, তোফা, তারপর মরবে।

 মা, বললেন, আমি ওকে বড় ভালোবাসি।

 শশা বললো, আমি অবাক হই। ভালোবাসা? না,—আমি ওকে শ্রদ্ধা করি। কাটখোট্টা সাদা-সিধে বাইরের অভ্যন্তরে একখানি কোমল অন্তঃকরণ···

 তারপর হঠাৎ সে প্রসঙ্গ চাপা দিয়ে বলে উঠলো, মনে হচ্ছে কেউ পিছু নিয়েছে। যাই, মা···গোয়েন্দা পিছু নিয়েছে বুঝলে লিউদ্‌মিলার ঘরে ঢুকো না।...

 শশা চ’লে গেলো!

 মা লিউদ্‌মিলার কাছে এসে কাগজটা তার হাতে দিলেন। তারপর আইভানোভিচের কাহিনী বললেন খুলে···কেমন ক’রে সে গ্রেপ্তারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

 লিউদ্‌মিলার চোখে-মুখে এসে পড়েছে অগ্নির রক্তিমাভা। স্থির কণ্ঠে সে বললো, কিন্তু আমার কাছে যখন তারা আসবে, আমি গুলি করবো। ধরা দোবনা। অত্যাচার হতে আত্মরক্ষা করার অধিকার আমার আছে। অন্যকে যখন যুদ্ধে উত্তেজিত করছি, তখন আমিও যুদ্ধ করবো। শান্তির অর্থ আমি বুঝিনে···শান্তি আমি চাইনে।

 মা ধীরে ধীরে বলেন, তোমার কাছে জীবন তাহলে সুখপ্রদ হবেনা, মা।

 লিউদ্‌মিলা সে কথার জবাব না দিয়ে পেভেলের বক্তৃতাটা পড়ে গেলো, বললো, বেশ! আমি এই-ই চাই, কিন্তু এতেও দেখছি শান্তির কথা আছে। যেন গোরস্থানে ডঙ্কা-নিনাদ—যদিও ডঙ্কাবাদক শক্তিমান।

 তারপর পেভেলের কথা তুলে বললো, চমৎকার লোক, মহাপ্রাণ কিন্তু এমন ছেলে পাওয়া যেমনই গৌরবের তেমনি ভয়ের।

 মা বলেন, গৌরবেরই, মা। ভয় আর কিছু নেই।