মিঠেকড়া/পৃথিবীর দিকে তাকাও


পৃথিবীর দিকে তাকাও

দেখাে এই মােটা লােকটাকে দেখাে
 অভাব জানে না লােকটা,
যা কিছু পায় সে আঁকড়িয়ে ধরে
 লােভে জ্বলে তার চোখটা।
মাথা উচু করা প্রাসাদের সারি
 পাথরে তৈরি সব তার,
কতাে সুন্দর, পুরােনাে এগুলাে!
 অট্টালিকা এ লােকটার।
উচু মাথা তার আকাশ ছুঁয়েছে
 চেয়ে দেখে না সে নীচুতে,
কতাে জমির যে মালিক লােকটা
 বুঝবে না তুমি কিছুতে।
দেখাে, চিমনীরা কী ধোঁয়া ছাড়ছে
 কলে আর কারখানাতে,
মেশিনের কপিকলের শব্দ
 শােনন, সবাইকে জানাতে।
মজুররা দ্রুত খেটেই চলেছে—
 খেটে খেটে হল হন্যে;
ধনদৌলত বাড়িয়ে তুলছে
 মােটা প্রভুটির জন্যে।
দেখাে একজন মজুরকে দেখাে
 ধুকে ধুকে দিন কাটছে,
কেনা গােলামের মতই খাটুনি
 তাই হাড়ভাঙা খাটছে।
ভাঙা ঘর তার নীচু ও আঁধার
 স্যাঁতসেঁতে আর ভিজে তা,


পৃথিবীর দিকে তাকাও

এর সাথে কি তুলনা করবে
 প্রাসাদ বিশ্ব-বিজেতা?
কুঁড়েঘরের মা সারাদিন খাটে
 কাজ করে সারা বেলা এ,
পরের বাড়িতে ধোয়া মোছা কাজ―
 বাকীটা পোষায়-সেলায়ে।
তবুও ভাড়ার শূন্যই থাকে,
 থাকে বাড়ন্ত ঘরে চাল,
বাচ্চা ছেলেরা উপবাস করে
 এমনি করেই কাটে কাল।
বাবু যত তারা মজুরকে তাড়া
 করে চোখে চোখে রাখে,
ঘোৎ-ঘোৎ করে মজুরকে ধরে
 দোকানে যাওয়ার ফঁাকে।
খাওয়ার সময় ভে। বাজালে তারা
 ছুটে আসে পালে পাল,
খায় শুধু কড়কড়ে ভাত আর
 হয়ত একটু ডাল।
কম-মজুরির দিন ঘুরে এলে
 খাদ্য কিনতে গিয়ে,
দেখে এ টাকায় কিছুই হয় না,
 বসে গালে হাত দিয়ে।
পুরুত শেখায়, ভগবানই জেনো প্রভু
(সুতরাং চুপ; কথা বলবে না কভু )
সকলেরই প্রভু-ভাল আর খারাপের
তারই ইচ্ছায় এ;চুপ কর সর ফের।


পৃথিবীর দিকে তাকাও


শিক্ষক বলে, শােন সব এই দিকে,
চালাকি করাে না, ভাল কথা যাও শিখে
এদের কথাতে ভরসা হয় না তবু
সরে এস তবে, দেখাে সত্যি কে প্রভু।
ফ্যাকাশে শিশুরা, মুখে শান্তির ভীতি,
আগের মতই মেনে চলে সব নীতি।
যদি মজুরেরা কখনাে লড়তে চায়
পুলিশ প্রহারে জেলে টেনে নিয়ে যায়।
মজুরের শেষ লড়াইয়ের নেতা যতত
এলােমেলাে সব মিলায় ইতস্তত
কারা-প্রাচীরের অন্ধকারের পাশে।
সেখানেও স্বাধীনতার বাতা আসে।
রাশিয়াই, শুধু রাশিয়া মহান দেশ,
যেখানে হয়েছে গোলামির দিন শেষ;
রাশিয়া, যেখানে মজুরের আজ জয়,
লেনিন গড়েছে রাশিয়া! কী বিস্ময়!
রাশিয়া, যেখানে ন্যায়ের রাজ্য স্থায়ী,
নিষ্ঠুর ‘জার’ যেই দেশে ধরাশায়ী,
সােভিয়েট-‘তারা যেখানে দিচ্ছে আলাে,
প্রিয়তম সেই মজুরের দেশ ভাল।
মজুরের দেশ, কল-কারখানা,
প্রাসাদ, নগর, গ্রাম,
মজুরের খাওয়া, মজুরের হাওয়া,
শুধু মজুরের নাম।
মজুরের ছুটি, বিশ্রাম আর
গরমে সাগর-ধার,


পৃথিবীর দিকে তাকাও

মজুরের কত স্বাধীনতা। আর
অত্র অধিকার।
মজুরের ছেলে ইস্কুলে যায়
জ্ঞানের পিপাসা নিয়ে,
ঘােট ঘােট মন ভরে নেয় শুধু
জ্ঞান বিজ্ঞান দিয়ে।
মজুরের সেনা ‘লাল ফৌজ’ দেয়
পাহারা দিন ও রাত,
গরিবের দেশে সইবে না তারা
বড়ােলােকদের হাত।
শান্ত-স্নিগ্ধ, বিবাদ-বিহীন
জীবন সেখানে, তাই
সকলেই সুখে বাস করে আর
সকলেই ভাই ভাই;
এক মনেপ্রাণে কাজ করে তারা
বাঁচাতে মাতৃভূমি,
তােমার জন্যে আমি, সেই দেশে,
আমার জন্যে তুমি।