মৃণালিনী (১৮৭৪)/দ্বিতীয় খণ্ড/একাদশ পরিচ্ছেদ
একাদশ পরিচ্ছেদ।
মুক্ত।
মনোরমা পশুপতির নিকট বিদায় হইয়াই দ্রুতপদে চিত্রগৃহে আসিলেন। পশুপতির সহিত শান্তশীলের কথোপকথন সময়ে শুনিয়াছিলেন যে ঐ ঘরে হেমচন্দ্র রুদ্ধ হইয়াছিলেন। আসিয়াই চিত্রগৃহের দ্বারেন্মোচন করিলেন। হেমচন্দ্রকে কহিলেন, “হেমচন্দ্র, বাহির হইয়া যাও।”
হেমচন্দ্র গৃহের বাহিরে আসিলেন। মনোরমা তাহার সঙ্গে সঙ্গে আসিলেন তখন হেমচন্দ্র মনোরমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন।
“আমি রুদ্ধ হইয়াছিলাম কেন?”
ম। “তাহা পশ্চাৎ বলিব।”
হে। “যে ব্যক্তি আমাকে রুদ্ধ করিয়াছিল সে কে?”
ম। “শান্তশীল।”
হে। “শান্তশীল কে?”
ম। “চৌরােদ্ধরণিক।”
হে। “এই কি তাহার গৃহ?”
ম। “না।”
হে। “এ কাহার গৃহ?”
ম। “পশ্চাৎ বলিব।”
হে। “যবন কোথায় গেল?”
ম। “শিবিরে গিয়াছে।”
হে। “শিবির! কত যবন আসিয়াছে?”
ম। “বিংশতি সহস্র।”
হে। “কোথায় তাহাদের শিবির?”
ম। “মহাবনে।”
হে। “মহাবন কোথায়?”
ম। “এই নগরের উত্তরে কিছু দূরে।”
হেমচন্দ্র করলগ্ন কপোল হইয়া ভাবিতে লাগিলেন।
মনােরমা কহিল, “ভাবিতেছ কেন? তুমি কি তাহাদিগের সহিত যুদ্ধ করিবে?”
হে। “বিংশতি সহস্রের সহিত একের কি যুদ্ধ সম্ভবে?”
ম। “তবে কি করিবে—গৃহে ফিরিয়া যাইবে?”
হে। “এখন গৃহে যাব না।”
ম। “কোথা যাবে?”
হে। “মহাবনে।”
ম। “যুদ্ধ করিবে না তবে মহাবনে যাইবে কেন?”
হে। “যবনদিগকে দেখিতে।”
ম। “যুদ্ধ করিবে না তবে দেখিয়া কি হইবে?”
হে। “দেখিলে জানিতে পারিব কি উপায়ে তাহারা বিনষ্ট হইবে।”
মনোরমা চমকিয়া উঠিলেন। কহিলেন, “বিংশতি সহস্র মানুষ মারিবে? কি সর্ব্বনাশ! ছি! ছি!”
হে। “মনোরমে, তুমি এ সকল সম্বাদ কোথায় পাইলে?”
ম। আরও সম্বাদ আছে। আজি রাত্রে তোমারে মারিবার জন্য তোমার গৃহে দস্যু আসিবে। আজি গৃহে যাইও না।” বলিয়া মনোরমা উর্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল।