মেরী কার্পেণ্টার/উপসংহার
উপসংহার।
কুমারী মেরী কার্পেণ্টার্ মৃত্যুদিবস পর্যন্ত কার্য্য করিতে বিরত হন নাই। কি অত্যাশ্চর্য্য, অবর্ণনীয় কর্ম্মময় জীবন! শেষ দিন পর্যন্ত কেবল কাজ, কাজ, কাজ! পরার্থে আত্মােৎসর্গের কি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত! মানবের দুঃখ দূর করিবার কি আকুল পিপাসা! ইচ্ছা করিলে সুখসৌভাগ্যে পরিবেষ্টিত হইয়া আরামে জীবন কাটাইতে পারিতেন; কিন্তু তাহা অপেক্ষা চির-কৌমার্যব্রত অবলম্বন পূর্ব্বক শত অত্যাচার, বাধা, বিঘ্ন ও দুঃখকে তুচ্ছ করিয়া পরের জন্য আত্মবিসর্জ্জনকেই বরণ করিয়াছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি এবং তাঁহার সন্তান মানবের প্রতি এ কি গভীরপ্রেম! এই প্রগাঢ় প্রেমে অনুপ্রাণিত হইয়া তিনি নিজের সুখ তুচ্ছ করিয়া তাহাদের জন্য প্রাণ সমর্পণ করিলেন। তাঁহার স্নেহপ্রবণ হৃদয়, জগতের মানব জাতির উপর বিক্ষিপ্ত হইয়াছিল। যখন যে দেশে জনসাধারণের দুরবস্থার কথা শুনিতেন, তখনই তাহাদের দুঃখবিমােচনে প্রাণ মন সমর্পণ করিতেন। ইংলণ্ডের অনাথ দরিদ্রদিগের উন্নতিবিধান, দরিদ্র কৃষিজীবী ও শ্রমজীবীদিগের জন্য নৈশবিদ্যালয় স্থাপন, হীনচরিত্র লােকদিগের মানসিক উন্নতিকল্পে সংশােধন শিক্ষাগারপ্রতিষ্ঠা, আমেরিকার দাসত্বপ্রথার বিরােধীদিগের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন,কারাবাসীদিগের শিক্ষা ও স্বচ্ছন্দতার জন্য কারাসংস্কার প্রভৃতি নানা কার্য্যের অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন। এই অগাধ প্রেমে চালিত হইয়াই তিনি সুদূর ভারতের চিরনিগ্রহভাজন, অধঃপতিতা, দুঃখিনী নারীদিগের অবস্থার উন্নতি করিতে ভারতে আসিয়াছিলেন। তিনি যেখানে যে সৎকার্য্য হইতেছে দেখিতেন,—কি স্বদেশে, কি বিদেশে, সেখানেই অন্তরের সহিত যােগদান করিতেন। নিরাশ্রয়, দরিদ্র বালকবালিকাদিগের উন্নতি চিন্তা তাঁহার সমগ্র জীবন পূর্ণ করিয়াছিল। তাহাদের অবস্থার প্রতি লােকের মনােযােগ আকর্ষণ করিবার জন্য শত শত প্রবন্ধ লিখিয়া সভাসমিতিতে পাঠ করিয়াছেন। পার্লামেণ্টের প্রতিপত্তিশালী সভ্যগণকে তাহাদিগের অবস্থার প্রতি মনােযােগ দিতে বাধ্য করিয়াছেন। তাহাদিগকে উন্নত এবং সুরক্ষিত অবস্থায় রাখিতে প্রাণ অৰ্পণ করিয়াছিলেন। তাঁহার অক্লান্ত অধ্যবসায়ের ফলে ত্রিশ বৎসর পরে দরিদ্র বিদ্যালয়, পার্লামেণ্ট কর্ত্তৃক অনুমােদিত এবং সাহায্য প্রাপ্ত হয়। মেরী কার্পেণ্টার্ অন্যান্য বহু জনহিতকর কার্য্যে লিপ্ত থাকিলেও, নিম্ন শ্রেণীর নিরাশ্রয় বালকবালিকাদিগের মঙ্গল-সাধনে তিনি আজীবন ব্যাপৃত ছিলেন।
ভারতবাসী এখনও নারীজাতিকে অতি হীন অবস্থা এবং হীন আদর্শের মধ্যে রাখিয়াছেন। নারীগণ যাহাতে সুশিক্ষিতা হইয়া জগতের কার্য্য করিতে পারেন, তাঁহারা নারীদিগকে কি সেই সুযােগ প্রদান করিবেন না? এই মহীয়সী মহিলার জীবনী কি আমাদিগকে শিক্ষা দিতেছে না যে, নারীজীবন অবজ্ঞার বস্তু নহে এবং উপযুক্ত শিক্ষা ও সুযােগ পাইলে, নারীজীবন কত দূর উন্নত এবং মহৎ হইতে পারে? নারী হইয়া জন্মগ্রহণ করিয়া পৃথিবীতে কিছু করিতে পারা যায় কি না, তাহা পুণ্যবতী মেরী কার্পেণ্টারের জীবন হইতে কি দেখিতে পাইতেছি না? তাঁহার অনুষ্ঠিত কার্য্যসমূহ কি সকল পুরুষ এবং রমণীরই অনুকরণীয় নহে?
সম্পূর্ণ