মেরী কার্পেণ্টার/মৃত্যু
মৃত্যু।
মেরী কার্পেণ্টার্ ১৮৭৭ খৃষ্টাব্দে ৭০ বৎসর বয়সেও নবীন-তেজে,অদ্যম উৎসাহে সকল প্রকার কার্য্য সুশৃঙ্খলার সহিত সম্পন্ন করিয়াছিলেন। ভারতবর্ষের নারীজাতির উন্নতির চিন্তা তাঁহার হৃদয়ে শেষ পর্য্যন্ত বর্ত্তমান ছিল। ইংলণ্ডের মহিলাগণ যাহাতে পার্লামেণ্টে পুরুষদিগের ন্যায় ভােট দিতে পারেন, সেজন্যও তিনি অতিশয় যত্নশীলা ছিলেন। মাদকতা নিবারণের অনুকূলে যে সকল সভা-সমিতি হয়, তাহা তেও তিনি প্রাণমন দিয়া যােগদান করিয়াছিলেন। মানব চরিত্রের উন্নতিসাধনসম্বন্ধে যে সকল আন্দোলন হইয়াছে, সে সমুদয়ে তিনি যােগ দিয়াছেন এবং তাঁহার অসাধারণ বিজ্ঞতা দ্বারা সে সকল আন্দোলনই সফল করিয়াছেন। তিনি এই বৎসরেই পরলােক গমন করেন। ১৪ই জুনে দিবসের প্রত্যেক কর্তব্য সম্পাদন করিয়া পার্লামেণ্টের সভ্যগণের সহিত জনহিতকর কার্য্য সম্বন্ধে কথা বলিয়া, এবং চিঠি পত্র লিখিয়া রাত্রিতে শয়ন করিতে গমন করেন।পরদিন প্রাতে আর তাঁহার জীবন্ত, উৎসাহপূর্ণ তেজোময় মূর্ত্তি কেহ দেখিতে পাইল না। তখন অবিনশ্বর আত্মা তাঁহার নশ্বর দেহ ত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছে!
প্রাতঃকালে এই দুঃসংবাদ চারি দিকে রাষ্ট্র হইয়া পড়িল। তাঁহার আকস্মিক মেরী কার্পেণ্টারের
সমাধি।মৃত্যুসংবাদে আত্মীয় স্বজন একেবারে শােকমগ্ন হইয়া পড়িলেন। অনাথ, দীন, দরিদ্র লােক মাতৃহীন হইয়াছে বলিয়া আর্তনাদ করিতে লাগিল। তাঁহার মৃত্যুসংবাদ তারযােগে ভারতে ও আমেরিকায় প্রেরিত হইয়াছিল। তাঁহার মৃত্যুতে ইংলণ্ড, আমেরিকা এবং ভারতবর্ষের জনসাধারণ সকলেই দুঃখিত হইয়াছিলেন। মেরী কার্পেণ্টারের মৃত্যুর চারি দিন পরে অর্থাৎ ১৯শে জুন বুধবার অর্ণের ভেলের সমাধিক্ষেত্রে তাঁহার মাতার ও প্রিয় ভগিনী এনার সমাধি-মন্দিরের পার্শ্বে মহাসমারােহের সহিত তাঁহার নশ্বর দেহ সমাহিত করা হয়। বহু বন্ধু বান্ধব, ধনী, নির্ধন, বালক বালিকা মিলিয়া মহাসমারােহের সহিত শ্রেণীবদ্ধ হইয়া কুমারী কার্পেণ্টারের শবদেহ সমাধিক্ষেত্রে আনয়ন করিয়াছিলেন। এই শােকার্ত লােকশ্রেণীর মধ্যে কেবল যে, ইংলণ্ডের লােকই ছিলেন, তাহা নহে; যখন তাঁহার মৃতদেহ মহাত্মা রাজা রামমােহন রায়ের গৌরবমণ্ডিত সমাধি-মন্দিরের নিকটে পঁহুছে, তখন দুইটী ছােট ভারতবর্ষীয় বালককে হাত ধরাধরিপূর্ব্বক ক্রন্দন করিয়া তাঁহাদের সহিত যাইতে অনেকে দেখিয়াছিলেন।
মেরী কার্পেণ্টারের সুদীর্ঘ কর্ম্মময় জীবন ৭০ বৎসর বয়সে এইরূপে শেষ হইল।
তাঁহার মৃত্যুর পর তাঁহার অমূল্য স্মৃতিরক্ষার্থ শ্রমজীবী বালকবালকাদিগের জন্য দুইটি আশ্রম স্থাপিত হয়। তাঁহার অসাধারণ জীবনের কার্যাবলীর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ একটি প্রস্তর ফলকে খােদিত হইয়া ব্রিষ্টল্ নগরের উপাসনালয়ে রক্ষিত হইয়াছে।
তাঁহার সহাধ্যায়ী বন্ধু ডাক্তার মার্টিনো প্রস্তর ফলকে খােদিত এই বিবরণ লিখিয়াছিলেন: —
SACRED TO THE MEMORY OF
MARY CARPENTER,
Foremost among the founders
of Reformatory and Industrial Schools
in this city and realm.
Neither the claims of Private duty
nor the tastes of a cultured mind
could withdraw her compassionate eye
from the uncared-for children of the streets.
Loving them while yet unlovely,
she so formed them to the fair and good
as to inspire others with her faith and hope,
and thus led the way to a National system
of moral rescue and preventive discipline.
Taking also to heart the grievous lot
of oriental women
in the last decade of her life
she four times went to India,
and awakened an active interest
in their education and training for serious duties.
No human ill escaped her pity, or cast down her trust
with true self-sacrifice she followed
in the train of Christ,
to seek and to save that which was lost
and bring it home to the father in heaven.
Desiring to extend her work of piety and love,
many who honoured her have instituted in her name,
some homes for the houseless young,
and now complete their tribute of affections
by erecing this memorial.
Born at Exeter, April 3rd, 1807,
Died at Bristol, June 15th, 1877.
বঙ্গানুবাদ।
এই রাজ্যের এবং নগরের সংশােধন এবং শিল্প-বিদ্যালয়
স্থাপয়িতাদিগের মধ্যে সর্ব্বাগ্রগণ্যা মেরী কার্পেণ্টারের
পবিত্র স্মৃতিরক্ষার্থ ইহ।
স্থাপিত হইল।
যাঁহার পারিবারিক কর্ত্তব্যসমূহ কিংবা যাঁহার উন্নত, সুসং-স্কৃত মনের উন্নততর প্রবৃত্তি, অযত্নে প্রতিপালিত, সমাজের ঘৃণ্য বালকবালিকাদিগের শােচনীয় অবস্থা হইতে তাঁহার সুকোমল, সস্নেহ দৃষ্টিকে প্রত্যাবৃত্ত করিতে সমর্থ হয়। নাই—যিনি এই প্রকার ঘৃণিত মানবদিগকে অগাধ প্রেমে চালিত করিয়া সৎ এবং সুন্দর করিয়াছিলেন—যাঁহার সংস্রবে আসিয়া লােকে, বিশ্বাস এবং আশাতে পরিপূর্ণ হইয়াছেন এবং যিনি নৈতিক অধোগতি হইতে মানবকে নৈতিক উন্নতির পথে লইয়া যাইবার এক সুন্দর উপায় উদ্ভাবন করিয়াছিলেন—যিনি শেষ জীবনে পূর্ব্বদেশীয় স্ত্রীলােকদিগের শোচনীয় অবস্থায় দ্রবীভূত হইয়া ভারতবর্ষে চারি বার গমন করিয়া সেই দেশের লােকদিগকে সুশিক্ষায় আগ্রহান্বিত করিয়াছিলেন—প্রত্যেক মানবীয় দুঃখ-দুর্দ্দশা যাঁহার দয়া আকর্ষণ করিয়াছে; কিন্তু বিশ্বাস ভগ্ন করিতে পারে নাই—যিনি প্রকৃত আত্মোৎসর্গের দ্বারা পাপপঙ্কে নিমজ্জিত মানবকে উদ্ধার করিয়া এবং ধর্মপথে আনয়ন করিয়া যীশু খৃষ্টের পদানুসরণ করিয়াছিলেন—
তাঁহার প্রেম এবং দয়ার কার্য্য বিস্তৃত করিবার অভিপ্রায়ে
যাঁহারা তাঁহার নামে অনাথাশ্রম স্থাপন করিয়াছেন,
তাঁহারা তাঁহার গৌরবময়ী স্মৃতি রক্ষার্থ এই
স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করিয়া তাঁহাদের
অভিপ্রায় পূর্ণ করিলেন।”
জন্ম, এক্সিটার নগরে, এপ্রিল ৩রা, ১৮০৭ খৃঃ।
মৃত্যু, ব্রিষ্টল নগরে জুন ১৫ই, ১৮৭৭ খৃঃ।