মেরী কার্পেণ্টার/কারা-সংস্কার

কারা-সংস্কার।

মেরী কার্পেণ্টার যে সকল জনহিতকর কার্য্যের অনুষ্ঠান করেন, ভারতের কারা-সংস্কার তাহাদের মধ্যে একটা উল্লেখযােগ্য ঘটনা। চুরি, ডাকাতি, বা হীনচরিত্রের জন্য রাজদণ্ডে দণ্ডিত কারাবাসীদিগের উপরও মেরী কার্পেণ্টারের মধুময় স্নেহ সঞ্চারিত হইয়াছিল। তিনি এমনই করুণহৃদয়া ও ক্ষমাশীলা রমণী ছিলেন যে, সমাজের ঘৃণিত, রাজদণ্ডে দণ্ডিত কারাবাসিগণও তাঁহার নিকট কৃপার পাত্র বলিয়া গণ্য হইল। তিনি বুঝিলেন, অপরাধীদিগকে কেবল কঠিন শাস্তি দিলেই তাহাদের চরিত্র সংশােধন হইবে না। তাহাদিগকে ধর্ম্ম ও নীতি শিক্ষা দিয়া চরিত্রবান্ করা আবশ্যক। তিনি তাহাদের স্বাস্থ্য-সংরক্ষার, শিক্ষা বিধান ও জ্ঞানােন্নতির জন্য মনঃসংযােগ করিলেন।

 মেরী কার্পেণ্টার্ কারাগৃহের উন্নতিসম্বন্ধে ভারত গবর্ণমেণ্টের নিকট কয়েকটি প্রস্তাব করেন। প্রথমতঃ, কয়েদীদিগের স্বতন্ত্র শয়নগৃহের অভাবের প্রতি কর্ত্তৃপক্ষের মনােযােগ আকর্ষণ করেন। ভিন্ন ভিন্ন শয়নগৃহ না থাকাতে, এক একটি গৃহে প্রায় ৪০।৫০ জন কয়েদী শয়ন করিত। দ্বিতীয়তঃ, উপযুক্ত শিক্ষকের অধীনে রাখিয়া কয়েদীদিগকে শিক্ষা দেওয়ার প্রয়ােজনীয়তা প্রতিপন্ন করেন। তৃতীয়তঃ, তিনি বলেন যে, স্ত্রী-কয়েদীদিগের অবস্থার উন্নতি করিতে হইলে, তাহাদিগেরও উপযুক্ত শিক্ষা ও ভিন্ন ভিন্ন শয়নগৃহের বন্দোবস্ত এবং স্ত্রী-কারাধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে তাহাদিগকে রাখিবার ব্যবস্থা করিতে হইবে।

 ১৮৭২ খৃষ্টাব্দে কারাগার সমূহের উন্নতি বিধান সম্বন্ধে আলোচনা করিবার জন্য ইংলণ্ডে এক অন্তর্জাতিক কংগ্রেস বসে। মেরী কার্পেণ্টার্ কারাগারের উন্নতি বিধান সম্বন্ধে তাঁহার অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করিয়া এই কংগ্রেসে এক প্রবন্ধ পাঠ করেন। এই বিষয় লইয়া যে সকল জনহিতৈষী মহাত্মাগণের সহিত তাঁহার পত্রালাপ হইয়াছিল, তাঁহাদের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ পরিচয় হয়। তাঁহারা সকলে মেরী কার্পেণ্টারকে সাদর অভ্যর্থনা করেন, এবং তাঁহার প্রস্তাবিত কারা-সংস্কারের বিষয় সমর্থন করেন। ইহার কিছুকাল পরে আমেরিকার কারাগারের অবস্থা পরিদর্শন করিতে তথায় গমন করেন। আমেরিকায়ও ভারতের স্ত্রীশিক্ষা এবং সাধারণ অবস্থা সম্বন্ধে তিনি স্থানে স্থানে কয়েকটি বক্তৃতা করিয়াছিলেন।

 মেরী কার্পেণ্টার শেষ বারে ভারতবর্ষে আগমন করিয়া ভারতের প্রধান প্রধান নগর পরিদর্শন করেন এবং স্ত্রীশিক্ষা ও কারাগৃহের অবস্থার বিবরণ, লর্ড সলসবেরীর নিকট প্রেরণ করেন। তিনি কারাগৃহসম্বন্ধে যে বিবরণ লিখিয়া পাঠাইয়াছিলেন, তাহার পর বৎসরেই তাহা পার্লামেণ্টে বিচারার্থ উত্থাপিত হয়। অল্পবয়স্ক অপরাধীদিগের জন্য সংশােধন বিদ্যালয়ের প্রয়ােজনীয়তা সম্বন্ধে তিনি যে সকল প্রস্তাব করেন,তাহা ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে ভারত গবর্ণমেণ্ট কর্ত্তৃক আইনে পরিণত হয়। বর্তমান সময়ে ভারতের বন্দীদের যে অবস্থার উন্নতি দেখা যায় এবং ভারতে যে সকল সংশােধন বিদ্যালয় স্থাপিত হইয়াছে,—মেরী কার্পেণ্টার্ তাহার মুল।