মেরী কার্পেণ্টার/পিতৃ-বিয়োগ
পিতৃ-বিয়ােগ।
মেরী কার্পেণ্টার ১৮৩৯ খৃষ্টাব্দে নিদারুণ শােক প্রাপ্ত হন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে তাঁহার পিতার স্বাস্থ্য ভগ্ন হয়। ডাক্তারের পরামর্শে স্বাস্থ্যলাভােদ্দেশে তিনি বিদেশভ্রমণে বহির্গত হন; পরে লেগহরন্ হইতে মার্সেলিস্ যাইবার সময় জলমগ্ন হইয়া প্রাণত্যাগ করেন। এই আকস্মিক বিপদ শ্রবণ মাত্রেই মেরী কার্পেণ্টার্ এবং তাঁহার ভ্রাতাভগিনীদিগের মাতৃদেবীর প্রাণে সান্ত্বনাদান সর্ব্বপ্রধান চিন্তার বিষয় হইল। তাঁহারা সকলেই মাতার প্রাণে শান্তি আনয়ন করিতে চেষ্টিত হইলেন। মেরী কার্পেণ্টার্ তাঁহার পিতার কার্যের সহায় ছিলেন এবং তাঁহার পরামর্শ ও উপদেশ-মতে প্রত্যেক কার্য্য নির্ব্বাহ করিতেন। পিতার অভাব তাঁহার দুর্ব্বিষহ হইয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু ঈশ্বরের মঙ্গলস্বরূপে নির্ভর করিয়া এবং তাঁহার করুণায় বিশ্বাস স্থাপন করিয়া মেরী কার্পেণ্টার্ ও তাঁহার মাতা এই দারুণ শােক সহ্য করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। তিনি বিশ্বাস করিতেন যে, তাঁহার পিতা এ লােক হইতে আর এক উন্নত লোকে গমন করিয়াছেন এবং তাঁহার পিতা সেই লােকে আছেন বলিয়া সেই অদৃশ্য-রাজ্য তাঁহার নিকটতম বােধ হইত। প্রগাঢ় ঈশ্বরবিশ্বাসিনী ছিলেন বলিয়াই, তিনি এই শোকে শান্তি লাভ করিয়াছিলেন। পিতার মৃত্যুর এক বৎসর পরে তিনি দৈনন্দিন লিপিতে তাঁহার মানসিক অবস্থা এইরূপ লিখিয়াছিলেন,—“এ পৃথিবীতে যাঁহাকে আমরা সর্ব্বাপেক্ষা ভালবাসিতাম, তাঁহাকে হারাইয়া যদিও বাহিরে শােক প্রকাশ করিতেছি; কিন্তু ভিতরে শান্তি বিরাজমান। তাঁহাকে এ পৃথিবীতে আর পাইব না সত্য; কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, তাঁহাকে আমরা পবিত্র স্মৃতি এবং স্বর্গীয় প্রেমে পাইয়াছি। প্রভু আমাদিগকে অত্যন্ত আঘাত দিয়াছেন, কিন্তু এই আঘাতের মধ্যে তাঁহার পিতৃহস্ত নিকটতর বােধ হইতেছে। তিনি আঘাত দিয়া আবার পূর্ণ শান্তিও দিয়াছেন। এই বৎসর আমাদের নিকট অতি প্রিয় এবং পবিত্র হউক; কেন না এই বৎসরে আমার প্রিয়তম পিতা পার্থিব দুঃখ, শােক এবং ক্লান্তির হস্ত এড়াইয়া অমর লোকের চিরশান্তি-আশ্রমে গমন করিয়াছেন।”