মেরী কার্পেণ্টার/আত্মশিক্ষা

আত্মশিক্ষা।

ই সকল কার্য্য তাঁহার জ্ঞানার্জ্জনে কোন বাধা দিতে পারে নাই। এই সকল কার্য ব্যতীত তিনি কাব্য, চিত্রাঙ্কণ, ভূবিদ্যা, শারীর-বিদ্যা মনােযােগের সহিত অধ্যয়ন করিতে থাকেন এবং ফিলজফিক্যাল্ ইনষ্টিটিউশনে (Philosophical Institution) অর্থাৎ দার্শনিক বিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি যে সকল স্থানে ভ্রমণ করিতে যাইতেন, সে স্থান হইতে ভূতত্ত্বের নমুনা সংগ্রহ করিয়া আনিতেন। এ বিষয়ে প্রধান প্রধান পণ্ডিতগণের বক্তৃতা শ্রবণ করিতেন এবং তাঁহাদিগকে গৃহে নিমন্ত্রণ করিয়া লইয়া গিয়া ভূতত্ত্ব-বিষয়ে কথােপকথন করিতেন এবং সংগৃহীত নমুনাগুলি দেখাইতেন। জ্ঞানলাভে এবং জ্ঞানপ্রসঙ্গে তিনি প্রভূত আনন্দ পাইতেন। কাব্যের প্রতিও তিনি অনুরাগিণী ছিলেন। কিন্তু যে সকল কাব্যে এবং সাহিত্যে তাঁহার প্রকৃতিগত ধর্ম্ম ও উচ্চতম নৈতিক আদর্শকে হীন করা হইয়াছে দেখিতেন, তাহার প্রতি তিনি অতিশয় বিরাগ প্রকাশ করিতেন। কবিদিগের মধ্যে একমাত্র ওয়ার্ডসওয়ার্থকেই তিনি আদর্শ কবি জ্ঞান করিতেন। ওয়ার্ডসওয়ার্থের প্রশংসাকারীও তাঁহার বন্ধু বলিয়া পরিগণিত হইতেন। তিনি দুই বার দুইটী বৃহৎ বিষয় লইয়া কাব্য রচনা করিতে মনন করেন। বাল্যকাল হইতেই জ্ঞানার্জ্জন করিয়া প্রসিদ্ধি লাভ করা, তাঁহার জীবনের একটি উচ্চ আকাঙ্ক্ষা ছিল। তিনি এ বিষয়ে এই সময়ে তাঁহার দৈনন্দিন লিপিতে লিখিয়াছিলেন, “যে সকল বিষয়ে আমার আত্মা পরিতৃপ্ত হয়, আমি সেই সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করিয়া স্থায়ী ভাবে এ পৃথিবীতে রাখিয়া যাইতে চাই। কখন কখন আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি যেন এমন কিছু রাখিয়া যাইতে পারি, যাহা আমার মৃত্যুর পর চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবে। এবং ভবিষ্যদ্বংশীয়গণ তাহা স্মরণ করিবে। কিন্তু, আমার এই শেষ ইচ্ছা, আমার শক্তির অতীত বলিয়া মনে হয়।” মেরী কার্পেণ্টারের এই মহতী ইচ্ছা সম্পূর্ণরূপে সফল হইয়াছিল। তিনি এমন কিছু রাখিয়া গিয়াছেন, যাহা মানবহৃদয়ে চিরদিন মুদ্রিত হইয়া থাকিবে। কাব্য ব্যতীত তিনি চিত্র-বিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করিয়াছিলেন। চিত্রের মধ্যে তাঁহার প্রকৃতির প্রতি গভীর প্রেমের নিদর্শন পাওয়া যায়। তিনি প্রায়ই প্রকৃতিসম্বন্ধেই চিত্র অঙ্কন করিতেন। উপযুক্ত শিক্ষকের নিকট শিক্ষালাভ করিয়া তাঁহার চিত্রসম্বন্ধেও বহু জ্ঞান জন্মিয়াছিল। তিনি তাঁহার অঙ্কিত একখানি চিত্র মহাত্মা থিয়ােডাের্ পার্কারকে উপহার দেন। থিয়াে-ডাের্ পার্কার্ এই চিত্রখানি তাঁহার পাঠগৃহে রাথিতেন।

 মেরী কার্পেণ্টারের নৈতিক দৃষ্টি অতি প্রখর ছিল। কি সাহিত্য, কি কাব্য, কি চিত্রবিদ্যা নীতির দিক দিয়া দেখিতেন। তিনি প্রত্যেক বিষয়ের গুণাগুণ নৈতিক আদর্শ দ্বারা বিচার করিতেন। এমন কি, চিত্রকরের চরিত্র দেখিয়া চিত্রের সৌন্দর্য্য বিচার করিতেন। নৈতিক আদর্শ এত দূর উচ্চ না হইলে, এ প্রকার তেজঃপূর্ণ চরিত্র না হইলে কি তিনি তাঁহার জীবনের বিপৎ-সঙ্কুল-কার্য্য সকল সংসিদ্ধ করিতে সমর্থ হইতেন?