দশ

 যাঁদের দেখেছি, লিখতে বসেছি তাঁদের কথা। আমার স্মৃতির জগতে আজ স্বর্গীয় মানুষদের জনতা। তাঁদের সকলকার কথা বলতে গেলে কথা আর ফুরুবে না এবং সকলকার কথা বলবার মত নয়ও। সাহিত্য ও আর্টের ক্ষেত্রে যে সব অসামান্য মানুষ আমার মনের পটে বিশেষ রেখাপাত করেছেন, আমি দেখাতে চাই কেবল তাঁদেরই কয়েকজনকে।

 অর্ধেন্দুশেখর ছিলেন এমনি একজন অসামান্য মানুষ। গত যুগের প্রথম শ্রেণীর নাট্যশিল্পীদের মধ্যে তাঁকে আমি যতবার দেখবার সুযোগ পেয়েছি, ততবার আর কারুকেই নয়। তাঁর সঙ্গে কখনো আমার মৌখিক আলাপ হয় নি, অথচ তিনি ছিলেন আমার শৈশবের বন্ধু! আমার বয়স যখন পাঁচ কি ছয় বৎসর, তখন প্রেক্ষাগারের ত্রিতলে তারের জাল দিয়ে ঘেরা মেয়েদের আসনে মায়ের সঙ্গে ব’সে দেখেছি, গুরুমশাইয়ের ভূমিকায় অর্ধেন্দুশেখর বেত্র আস্ফালন করতে করতে পাঠশালার ছেলেদের বলছেন,—‘পড়্, পড়্, ল্যাখে ল্যাখে পড়্!’ সে ছবি আজও আমার মনে ঝাপ্‌সা হয় নি। অভিনেতার যথার্থ পরিচয় দিতে গেলে চাক্ষুষ পরিচয়ের মূল্যই হচ্ছে সব চেয়ে বেশী। রঙ্গমঞ্চের বাইরে থাকে নটের যে ব্যক্তিগত জীবন, তার কথা এখানে ধর্তব্যের মধ্যেই গণ্য নয়।

 সেকালের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ব’লে অতুলনীয় নাম কিনেছিলেন গিরিশ্চন্দ্র ও অর্ধেন্দুশেখর এবং বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত অভিনেতাই ছিলেন তাঁদের শিষ্য বা প্রশিষ্য। কিন্তু তাঁদের গুরুর নাম কেউ জানে না। বোধ হয় তাঁরা ছিলেন জন্মনট, গোড়া থেকেই নাট্যকলায় ছিল তাঁদের অশিক্ষিতপটুত্ব। গিরিশ্চন্দ্রের নটজীবন শুরু হয় ১৮৬৭ কি ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে, সখের যাত্রার আসরে। অর্ধেন্দুশেখরেরও প্রথম আত্মপ্রকাশ প্রায় ঐ সময়েই। ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের জামাতার ভবনে “কিছু কিছু বুঝি” প্রহসনে তিনি অভিনয় করেন। গিরিশচন্দ্রের মুখে জানতে পারি, তিনি একলাই অভিনয় করেছিলেন তিনটি বিভিন্ন ভূমিকায়— পরে সাধারণ রঙ্গালয়ে যোগদান ক’রেও বহুবার তিনি এই ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। ধর্মদাস সুরের “আত্মজীবনী” প’ড়ে জানতে পারি, কেবল অভিনেতারূপে নয়, গোড়া থেকেই তিনি কৃতিত্ব প্রকাশ করেছেন অভিনয়-শিক্ষক রূপেও। এরকম ব্যাপার সচরাচর দেখা যায় না।

 বালক-বয়সে বুদ্ধি পাকবার আগে আমি তাঁকে যে সব ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখেছি, সেগুলির কথা নিয়ে আলোচনা ক’রে লাভ নেই। তবে সাবালক হ’য়ে তাঁর যে সব ভূমিকার দিকে আকৃষ্ট হয়েছি, সেগুলি হচ্ছে এই: বিদ্যাদিগগজ (দুর্গেশনন্দিনী), যোগেশ ও রমেশ (প্রফুল্ল), কর্তা (জেনানার যুদ্ধ), জলধর (নবীন তপস্বিনী), “সংসার” নাটকের একটি ভূমিকা— নাম মনে হচ্ছে না, রূপচাঁদ (বলিদান), দানসা (সিরাজদ্দৌলা), হলওয়েল; হে ও মেজর অ্যাডাম্‌স্‌ (মীরকাসিম), হারাধন (য্যায়সা-কা-ত্যায়সা), আবুহোসেন এবং বিয়ে-পাগলা বুড়ো (তুফানী)।

 গিরিশচন্দ্রের পুরাতন বন্ধু হ’লেও এক বিষয়ে তিনি তাঁর মত মানতেন না। গিরিশচন্দ্র অভিনয়ে সুর পছন্দ করতেন, অর্ধেন্দুশেখর পছন্দ করতেন না। তিনি যে সুরবর্জিত অভিনয় করতেন স্বাভাবিকতাই ছিল তার আদর্শ। আমি কোন পৌরাণিক নাটকে তাঁকে অভিনয় করতে দেখি নি, সুতরাং কেমন ক’রে তিনি কবিতা আবৃত্তি করতেন, সে কথা বলতে পারব না। তবে বিনা সুরে যে কবিতা আবৃত্তি করা যায়, এ কথা আমার বিশ্বাস হয় না।

 অভিনেতা আছেন দুই রকম। এক, যিনি নিজের ভূমিকার মধ্যে একেবারে তন্ময় হয়ে ডুবে যান; আর এক, যিনি থাকেন সচেতন, ভূমিকার মধ্যে নিজের অস্তিত্বকে ডুবিয়ে দিতে চান না। দুই দলেই বড় বড় অভিনেতাকে দেখা যায়। এদেশে প্রথম দলে ছিলেন অমৃতলাল মিত্র ও দানীবাবু প্রভৃতি। দ্বিতীয় দলে দেখি অর্ধেন্দুশেখর, অমৃতলাল বসু এবং এ যুগের শিশিরকুমার প্রভৃতিকে।

 অধিকাংশ অভিনেতাই বড় বড় ভূমিকার জন্যে লালায়িত হন। কিন্তু বড় বড় ভূমিকাভিনয়ের জন্যে অতুলনীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এবং নিজে নাট্যাচার্য হয়েও অর্ধেন্দুশেখর কখনো প্রধান রূপে পরিচিত হ’তে চান নি। প্রায়ই গ্রহণ করতেন ছোট ছোট অবান্তর ভূমিকা এবং প্রায়ই দেখা গিয়েছে তাঁর অপূর্ব অভিনয়নৈপুণ্যে সেই সব ছোট ছোট ভূমিকাই নাটকের মধ্যে অত্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করেছে। “রিজিয়া” পালায় সকলকে নাটকের পাঠ শিখিয়ে এবং এবং বড় বড় ভূমিকাগুলি অন্যান্য পাত্রপাত্রীর মধ্যে বিলি ক’রে তিনি নিজে নিলেন ঘাতকের ছোট্ট ভূমিকা। কিন্তু তাঁর অভিনয়গুণে সেই ক্ষুদ্র ভূমিকাই এতটা বিখ্যাত হয়ে উঠল যে, পরে শ্রেষ্ঠ নট ছাড়া আর কেউ সেই ভূমিকাটি গ্রহণ করতে সাহসী হ’ত না। “প্রতাপাদিত্য” নাটকের রডার ভূমিকাটি আগে আরো ছোট ছিল। পালাটি যখন খোলা হয়, তখন কোন নামজাদা নটই ঐ ভূমিকাটি গ্রহণ করতে রাজি হন নি। অবশেষে রডা সেজে দেখা দিলেন অর্ধেন্দুশেখর নিজেই। সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকাটি এমন প্রধান হয়ে উঠল যে, তারপর থেকে সেরা সেরা অভিনেতারা ঐ ভূমিকাটি নিয়ে কাড়াকাড়ি করতেন এবং রডার লোকপ্রিয়তা দেখে নাট্যকারও ভূমিকার আকার আরো বাড়িয়ে দিলেন। যখন “ম্যাকবেথ” খোলা হয়, তখন হোমরাচোমরা অভিনেতারা গ্রহণ করলেন ভারি ভারি ভূমিকা। কিন্তু অধিকাংশ হোমরাচোমরাদের মাথার মণি হয়েও অর্ধেন্দুশেখর নিজের জন্যে বেছে নিলেন ক্ষুদে ক্ষুদে পাঁচটি ভূমিকা— প্রথম ডাকিনী, বৃদ্ধ, প্রথম হত্যাকারী, ডাক্তার ও দ্বারপাল।

 পাশ্চাত্য নাট্যজগতে নবযুগ এনেছিল জার্মানীর মিনিন্‌জেন নাট্য-সম্প্রদায়— পরে যার আদর্শে গঠিত হয় রুশিয়ার বিশ্ববিখ্যাত মস্কো আর্ট থিয়েটার। সেখানে বড় ও ছোট ভূমিকা ছিল তুল্যমূল্য। অর্ধেন্দুশেখরও নিশ্চয় ঐ মতই পোষণ করতেন। কিন্তু এইরকম নিঃস্বার্থ শিল্পী-মনের পরিচয় দিয়ে তাঁর পক্ষে আখেরে ফল বড় ভালো হয় নি। তিনি নটগুরু এবং সাধারণ বাংলা রঙ্গালয়ের অন্যতম স্রষ্টা হ’লেও সকলেই তাঁর মাথাতেই কাঁঠাল ভেঙে ভক্ষণ করেছে পরমানন্দে। সে সময়ে একজন নৃত্যশিক্ষকও দেড়শত টাকা মাহিনা পেতেন, অথচ নিজের মৃত্যুকাল পর্যন্ত অর্ধেন্দুশেখর কখনো আশী টাকার বেশী মাহিনা পান নি!

 অর্ধেন্দুশেখর দরিদ্র ছিলেন, কিন্তু তাঁর অসাধারণ শিল্পনিষ্ঠা কোনদিন তাঁকে টাকা-আনা-পয়সার দিকে আকৃষ্ট হ’তে দেয় নি। এমন কি এটা বলাও চলে যে, নিজেই তিনি নিজের মাথায় দারিদ্র্যের ভার তুলে নিয়েছিলেন এবং তারও কারণ গভীর নাট্যানুরাগ। পাথুরিয়াঘাটার মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর ছিলেন তাঁর পিস্‌তুতো ভাই এবং তাঁরা নিয়মিত মাসোহারা পেতেন ও সপরিবারে বাস করতেন রাজবাড়ীতেই। ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দে সেখানে “বুঝলে কিনা” নামে একখানি প্রহসন অভিনীত হয়। বোধ করি তার উতোরেই লেখা হয় “কিছু কিছু বুঝি” প্রহসনখানি। আগেই বলেছি, ঐ পালাতেই অর্ধেন্দুশেখরের প্রথম আত্মপ্রকাশ। এই অপরাধে অর্ধেন্দুশেখরকে সপরিবারে রাজবাড়ী ত্যাগ করতে হয়। তারও ষোলা-সতেরো বৎসর পরে তাঁর সখ হয় নিজেই একটি নাট্য-সম্প্রদায় গঠন করবেন। সখ মিটল, তিনি হলেন “এমারেল্ড থিয়েটারে”র কর্তা। সখ তো মিটল, কিন্তু ব্যবসায়ী না হ’লে কেউ কি রঙ্গালয় চালাতে পারে? তিনিও পারলেন না, উল্টে দেনার দায়ে নিজের বসতবাড়ীখানা পর্যন্ত বেচে ফেলতে বাধ্য হলেন।

 সেকালে গিরিশচন্দ্র ও অর্ধেন্দুশেখর যথাক্রমে গম্ভীর এবং হাস্য রসে অদ্বিতীয় ছিলেন। তাঁদের সমসাময়িক যুগে বিলাতেও ঐ দুই বিভাগে যথাক্রমে প্রাধান্য বিস্তার করতেন স্যার হেনরি আর্ভিং ও জন লরেন্স ট্যুল। কিন্তু ট্যুলের চেয়ে অর্ধেন্দুশেখর এক বিষয়ে অধিকতর অগ্রসর ছিলেন। তিনি অনুরূপ দক্ষতা প্রকাশ করতে পারতেন গম্ভীর ও করুণ প্রভৃতি রসের ভূমিকাতেও।

 উচ্চ ও নিম্ন— দুই শ্রেণীর হাসি নিয়েই তাঁর কারবার ছিল। অর্ধেন্দুশেখরের “আবুহোসেন” যিনি দেখেন নি তাঁর নিতান্ত দুর্ভাগ্য। এই যুবকের ভূমিকায় বৃদ্ধ বয়সেও তিনি দেখিয়ে গিয়েছেন কৌতুকরসের পরাকাষ্ঠা। তেমন “আবুহোসেন” আজ পর্যন্ত আর কেউ দেখাতে পারলে না। বিদ্যাদিগগজের ভূমিকাতেও তিনি একটি পরম উপভোগ্য চরিত্র সৃষ্টি ক’রে গিয়েছেন। “তুফানী” পালায় বিয়ে-পাগলা বুড়ো সেজে তিনি নিজে বড় হাসতেন না, কিন্তু দর্শকরা তাঁর ধরনধারন দেখে ও কথা শুনে হেসে একেবারে গড়িয়ে পড়ত।

 বৃদ্ধের ভূমিকায় তাঁর চেয়ে ভালো অভিনেতা আমি আর দেখি নি। আবার সাহেব সেজে তিনি এমন নিখুঁত অভিনয় করতে পারতেন যে, তাঁকে বাঙালী ব’লে চেনবার উপায় থাকত না। এইজন্যে নাট্যজগতে তাঁর ডাকনাম ছিল “সাহেব”। আমাদের নাট্যজগতে আর যে সব নট য়ুরোপীয়দের ভূমিকা গ্রহণ করেন, সাধারণতঃ অতি-অভিনয়ের জন্যে ভূমিকাগুলি পরিণত হয় ‘ক্যারিকেচারে’। এ দোষ তাঁর অভিনয়ে কখনো দেখা যেত না। আর এক শ্রেণীর ভূমিকাতেও তিনি প্রথম শ্রেণীর শক্তি জাহির করে গিয়েছেন— যেমন রমেশ, রূপচাঁদ ও দানসা ফকির প্রভৃতি।

 “প্রফুল্ল” নাটকের যোগেশ একটি বিখ্যাত ভূমিকা। “যোগেশ” রূপে গিরিশচন্দ্র শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের চরম সীমায় গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। এই ভূমিকায় একদিন অর্ধেন্দুশেখরের নাম বিজ্ঞাপিত হওয়াতে আমি দেখতে গেলুম সাগ্রহে। হতাশ হ’তে হল না। তিনি দেখালেন সম্পূর্ণ নূতন ধারণা। কেবল দুই জায়গায় তিনি গিরিশচন্দ্রের কাছে গিয়ে পৌঁছতে পারেন নি এবং আর কেউ পারবেন বলেও বিশ্বাস হয় না। শুঁড়ীখানার দৃশ্যে এবং শেষ-দৃশ্যে গিরিশচন্দ্র ছিলেন একেবারেই অতুলনীয়।

 তিনি আর এক আশ্চর্য শক্তির অধিকারী ছিলেন। বিভিন্ন ভূমিকায় বিভিন্ন কণ্ঠস্বর ব্যবহার করতে পারতেন। কোন নাটকে একাই যখন তিন-চারটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হ’তেন, তখন তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যেও লক্ষ্য করা যেত তিন-চার রকম পরিবর্তন। এ শক্তি আর কোন নটের আছে বলে জানি না। কত কঠিন কণ্ঠসাধনার দ্বারা এই দুর্লভ শক্তি অর্জন করা যায়, তা ধারণাতেও আসে না।

 কিন্তু তিনি অধিকতর খ্যাতি অর্জন করেছেন নাট্যাচার্য রূপে। তিনি যে ভাবে নাট্যশিক্ষা দিতেন, গিরিশচন্দ্র তা পারতেন না। পূর্বে জার্মানীর যে মিনিন্‌জেন নাট্য-সম্প্রদায়ের কথা বলেছি, সেখানে মহলার ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত পরিপাটি। সেখানে নূতন নাটকের মহলা দেওয়া হ’ত সুদীর্ঘকাল ধ’রে অশ্রান্ত ভাবে। যতদিন না প্রত্যেক ছোট ভূমিকাটি পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিখুঁত ভাবে প্রস্তুত হয়ে ওঠে, ততদিন কোন নাটকই মঞ্চস্থ করা হ’ত না। মস্কো আর্ট থিয়েটারেও ছিল ঐ ব্যবস্থা। সেখানে একাধিক বৎসরব্যাপী মহলার কথাও শোনা যায়।

 এখন গিরিশচন্দ্রের নিজের মুখে অর্ধেন্দুশেখরের পদ্ধতির কথা শুনুন: ‘অর্ধেন্দু কোন এক ক্ষুদ্র অংশ ভাল হয় নাই, তাহা কিরূপে সম্পূর্ণ হইবে, তার জন্য বিব্রত। * * * ক্ষুদ্র অভিনেতা কোনও রূপে শিখিতেছে না, অর্ধেন্দু তাকে কোনরূপে শিখাইবেনই। * * * তাঁহার কার্যে বাধা দিলে অতিশয় বিরক্ত হইতেন, নিখুঁত না হইলে সে অভিনেতার আর নিস্তার নাই।’

 বাংলা রঙ্গালয়ে অর্ধেন্দুশেখরের কাছে শিক্ষালাভ করেন নি, এমন নট-নটী খুব কম। অমৃতলাল বসু ও তারাসুন্দরীও তাঁর শিষ্যত্ব স্বীকার করেছেন। তাঁর হাতে-গড়া অন্যান্য শিষ্যদের মধ্যে মহেন্দ্রলাল বসু, তারকদাস পালিত, অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মন্মথনাথ পাল (হাঁদুবাবু), নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (থাকোবাবু) ও ক্ষেত্রমোহন মিত্রের নাম উল্লেখযোগ্য।

 নিজের জাতীয়তা সম্বন্ধে অর্ধেন্দুশেখর ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। কলকাতার সাহেবপাড়ার রঙ্গালয়ে ডেভ কার্সন নামে এক ইংরেজ নট, “বেঙ্গলী বাবু”কে নিয়ে ব্যঙ্গ করতেন এবং তার নাম দিয়েছিলেন “ডেভ কার্সন সাহেব কা পাকা তামাসা।” অর্ধেন্দুশেখরের মর্মে বিদ্ধ হ’ল এই ব্যঙ্গবাণ। তিনিও তৎক্ষণাৎ রচনা ক’রে ফেললেন (ইংরেজী ও হিন্দীতে) একটি ব্যঙ্গ-কবিতা বা গীত এবং নিজে সাহেবপাড়ার রঙ্গমঞ্চে গিয়ে ফিরিঙ্গী পোষাক প’রে বেয়ালা বাজিয়ে সেই হাসির গানটি গেয়ে এলেন। সেই ব্যঙ্গাভিনয়ের নাম ছিল “মুস্তফী সাহেব কা পাকা তামাসা।”

 অর্ধেন্দুশেখরের বাংলা গান রচনারও অভ্যাস ছিল। তাঁর রচিত একটি গান এবং উপরোক্ত ব্যঙ্গরচনাটি আমার দ্বারা সম্পাদিত “নাচঘর” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। এবং তাঁর রচিত একখানি নাটিকাও বাংলা রঙ্গালয়ে অভিনীত হয়েছিল।

 তাঁর মত নিস্পৃহ এবং একান্তভাবেই নাট্যগতপ্রাণ শিল্পী বাংলা রঙ্গালয়ে আজ পর্যন্ত আর দেখা যায় নি। তিনি নিজে সম্পুর্ণ ভাবেই রিক্ত হ’য়ে আমাদের পরিপূর্ণ আনন্দদান ক’রে গিয়েছেন।