রাজমালা (ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্তী)/তৃতীয় পরিচ্ছেদ/২

(২)

বিজয়মাণিক্যের জয়ন্তী জয়

 রাজ্য নিষ্কণ্টক করিয়া বিজয়মাণিক্য দুর্জ্জয় সেনাবাহিনীর সৃষ্টিতে মন দিলেন। ত্রিপুরা রাজ্যে বিশৃঙ্খলার সুযোগ পাইয়া সীমান্তের দেশগুলি মাথা উঁচু করিয়া উঠিতেছিল, ধন্যমাণিক্যের যে বাহুবলে নবাবের শক্তি এতদঞ্চলে সঙ্কুচিত হইয়া পড়িয়াছিল তাহার পুনরভ্যুদয় ঘটিয়াছিল। বাহিরে এই অবস্থা লক্ষ্য করিয়া বিজয়মাণিক্যের হৃদয়ে বিজয় স্বপ্নে বিভোর হইয়া থাকিত। যখন সেনাদল তৎকালীন শ্রেষ্ঠ সামরিক কায়দায় গঠিত হইয়া গেল তখন বিজয়মাণিক্য দেশ জয়ে বাহির হইলেন।

 শ্রীহট্ট অধিকারের প্রতি মনোযোগী হইয়া মহারাজ বিজয় ত্রিপুর সেনা পাঠাইয়া দিলেন। জয়ন্তীর রাজা তাহাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়া যখন বেগতিক দেখিলেন তখন মহারাজের আনুগত্য স্বীকার করেন। জয়ন্তীর রাজা অনেক উপঢৌকন দিলেন, মহারাজ খুসী হইয়া তাহাকে সবৎসা একটী হস্তিনী ইনাম প্রদান করেন। জয়ন্তীরাজ নিজ রাজ্যে গিয়া প্রচার করিলেন—ত্রিপুরার মহারাজ রণে হারিয়া গিয়াছেন, একটি সবৎসা হস্তিনী নজর দিয়া কোনওরূপে প্রাণ লইয়া দেশে ফিরিয়াছেন। জয়ন্তী রাজ্যের এ সংবাদ গোপন রহিল না, এক ব্রাহ্মণ আসিয়া মহারাজের কানে এ কথা তুলিলেন। মহারাজ বলিলেন—“ওঃ ইনাম হইয়া গেল নজর, আচ্ছা ভুল শোধরাইয়া দিতেছি।”

 মহারাজ বিজয়মাণিক্য যুদ্ধের নামে এক প্রহসন করিলেন। জয়ন্তী উদ্দেশে চট্টগ্রাম হইতে শ্রীহট্ট পর্য্যন্ত এক হাড়ীর দল সংগ্রহ করিয়া পাঠাইয়া দিলেন। তাহারা কোদাল খন্তী ও শূকর খেদান লাঠি লইয়া ডুগ্‌ ডুগি বাজাইয়া জয়ন্তী রাষ্ট্রে হানা দিল। জয়ন্তীরাজ ইহাতে লজ্জিত হইয়া হেড়ম্বরাজের আশ্রয় লইলেন। হেড়ম্বের সহিত ত্রিপুরার বহুকালের সম্বন্ধ। হেড়ম্বরাজ নির্ভয়নারায়ণ ত্রিপুরেশ্বরকে পত্র লিখিলেন—“ভাই ঘাট হইয়াছে, জয়ন্তীরাজ অনুতপ্ত হইয়া ক্ষমা চাহিতেছেন, হাড়ী সৈন্য দিয়া আর তাঁহাকে অপমান করিও না।” ত্রিপুরেশ্বর হেড়ম্বরাজের আহ্বানে হাড়ী সৈন্য ফিরাইয়া লইয়া শ্রীহট্টে কালনাজিরের অধীনে ত্রিপুর থানা বসাইয়া দিলেন।