লোকরহস্য (১৯৩৯)/NEW YEAR’S DAY
NEW YEAR’S DAY
DRAMATIS PERSONÆ
রামবাবু
শ্যামবাবু
রামবাবুর স্ত্রী (পাড়াগেঁয়ে মেয়ে)
রামবাবু ও শ্যামবাবুর প্রবেশ
(রামবাবুর স্ত্রী অন্তরালে)
শ্যামবাবু। গুড্ মর্ণিং রামবাবু——হা ডু ডু?
রামবাবু। গুড্ মণিং শ্যামবাবু—হা ডু ডু?
শ্যামবাবু। I wish you a happy new year, and many many returns of the same.
রামবাবু। The same to you.
[শ্যামবাবুর তথাবিধ কথাবার্ত্তার জন্য অন্যত্র প্রস্থান। ও রামবাবুর অন্তঃপুর প্রবেশ]
রামবাবুর স্ত্রী। ও কে এসেছিল?
রামবাবু। ঐ ও বাড়ীর শ্যামবাবু।
স্ত্রী। তা, তোমাদের হাতাহাতি হচ্ছিল কেন?
রামবাবু। সে কি? হাতাহাতি কখন হ’লো?
স্ত্রী। ঐ যে তুমি তার হাত ধ’রে ঝেঁক্রে দিলে, সে তোমার হাত ধ’রে ঝেঁক্রে দিলে? তোমায় লাগেনি ত?
রাম। তাই হাতাহাতি! কি পাপ! ওকে বলে shaking hands. ওটা আদরের চিহ্ন।
স্ত্রী। বটে! ভাগ্যে আমি তোমার আদরের পরিবার নই। তা, তোমায় লাগেনি ত?
রাম। একটু নোক্সা লেগেছে; তা কি ধর্তে আছে?
স্ত্রী। আহা, তাই ত! ছ’ড়ে গেছে যে? অধঃপেতে ড্যাকরা মিন্সে! সকাল বেলা মর্তে আমার বাড়ীতে হাত কাড়াকাড়ি করতে এয়েছেন। আবার নাকি হুটোহুটি খেলা হবে? অধঃপেতে মিন্সের সঙ্গে ও সব খেলা খেলিতে পাবে না।
রাম। সে কি? খেলার কথা কখন হ’লো?
স্ত্রী। ঐ যে সেও ব’ল্লে, “হাঁডু ডু ডু!” তুমিও ব’ল্লে, “হাঁডু ডু ডু।” তা, হাঁ ডু ডু ডু খেলবার কি আর তোমাদের বয়স আছে?
রাম। আঃ, পাড়াগেঁয়ের হাতে পড়ে প্রাণ গেল। ওগো, হাঁ ডু ডু ডু নয়; হা ডু ডু—অর্থাৎ How do ye do? উচ্চারণ করিতে হয়, “হা ডু ডু।”
স্ত্রী। তার অর্থ কি?
রাম। তার মানে, “তুমি কেমন আছ?”
স্ত্রী। তা কেমন ক’রে হবে? সে তোমায় জিজ্ঞাসা করলে, “তুমি কেমন আছ”, তুমি ত কৈ তার কোন উত্তর দিলে না,— তুমি সেই কথাই পালটিয়া বলিলে!
রাম। সেইটাই হইতেছে এখনকার সভ্য রীতি।
স্ত্রী। পাল্টে বলাই সভ্য রীতি? তুমি যদি আমার ছেলেকে বল, “লেখাপড়া করিস্নে কেন রে ছুঁচো?” সেও কি তোমাকে পাল্টে বলবে, “লেখাপড়া করিস্নে কেন রে ছুঁচো? এইটা সভ্য রীতি?
রাম। তা নয় গো তা নয়। কেমন আছ জিজ্ঞাসা করিলে, উত্তর না দিয়া পাল্টে জিজ্ঞাসা করিতে হয়, কেমন আছ। এইটা সভ্য রীতি।
স্ত্রী। (যোড়হাতে) আমার একটি ভিক্ষা আছে। তোমার দুবেলা অসুখ—আমায় দিনে পাঁচ বার তোমার কাছে খবর নিতে হয়, তুমি কেমন আছ; আমায় যেন তখন হা ডু ডু বলিয়া তাড়াইয়া দিও না। আমার কাছে সভ্য নাই হইলে!
রাম। না, না, তাও কি হয়? তবে এ সব তোমার জেনে রাখা ভাল।
স্ত্রী। তা ব’লে দিলেই জানতে পারি। বুঝিয়ে দাও না? আচ্ছা, শ্যামবাবু এলো আর কি কিচিরমিচির ক’রে ব’ল্লে আর চলে গেল; যদি হাঁডু ডু ডু খেলার কথা বলতে আসেনি, তবে কি কর্তে এয়েছিল?
রাম। আজ নূতন বৎসরের প্রথম দিন, তাই সম্বৎসরের আশীর্ব্বাদ কর্তে এয়েছিল।
স্ত্রী। আজ নূতন বৎসরের প্রথম দিন? আমার শ্বশুর শাশুড়ী ত ১লা বৈশাখ থেকে নুতন বৎসর ধরিতেন।
রাম। আজ ১লা জানুয়ারী—আমরা আজ থেকে নূতন বৎসর ধরি।
স্ত্রী। শ্বশুর ধরিতেন ১লা বৈশাখ থেকে, তুমি ধর ১লা জানুয়ারী থেকে, আমার ছেলে বোধ করি ধরিবে ১লা শ্রাবণ থেকে?
রাম। তাও কি হয়? এ যে ইংরেজের মুলুক—এখন ইংরেজী নূতন বৎসরে আমাদের নূতন বৎসর ধরিতে হয়।
স্ত্রী। তা, ভালই ত। তা, নূতন বৎসর ব’লে এতগুলা মদের বোতল আনিয়েছ কেন?
রামবাবু। সুখের দিন, বন্ধু বান্ধব নিয়ে ভাল ক’রে খেতে দেতে হয়।
স্ত্রী। তবু ভাল। আমি পাড়াগেঁয়ে মানুষ, আমি মনে করিয়াছিলাম, তোমাদের বৎসর কাবারে বুঝি এই রকম কলসী উৎসর্গ কর্তে হয়। ভাবছিলাম, বলি বারণ কর্ব যে, আমার শ্বশুর শাশুড়ীর উদ্দেশে ও সব দিও না।
রাম। তুমি বড় নির্ব্বোধ!
স্ত্রী। তা ত বটে। তাই আরও কথা জিজ্ঞাসা কর্তে ভয় পাই।
রাম। আবার কি জিজ্ঞাসা করিবে?
স্ত্রী। এত কপি, সালগম, গাজর, বেদানা, পেস্তা, আঙ্গুর, ভেটকি মাছ সব আনিয়েছ কেন? খেতে কি এত লাগবে?
রাম। না। ও সব সাহেবদের ডালি সাজিয়ে দিতে হবে।
স্ত্রী। ছি ছি, এমন কর্ম্ম করো না। লোকে বড় কুকথা বল্বে।
রাম। কি কথা বলিবে?
স্ত্রী। বল্বে, এদের বৎসর কাবারে কলসী উৎসর্গও আছে, চোদ্দ পুরুষকে ভুজ্যি উৎসর্গ করাও আছে।
[ইতি প্রহারভয়ে গৃহিণীর বেগে প্রস্থান। রামবাবুর উকীলের বাড়ী গমন এবং হিন্দুর Divorce হইতে পারে কি না, তদ্বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা।]