বঙ্কিম-শতবার্ষিকী সংস্করণ

লোকরহস্য

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

[১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম মুদ্রিত]

সম্পাদক:

শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

শ্রীসজনীকান্ত দাস

বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ

২৪৩৷১, অপার সারকুলার রোড

কলিকাতা

বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ হইতে
শ্রীমন্মথমোহন বসু কর্ত্তৃক
প্রকাশিত





মূল্য বারো আন

ভাদ্র, ১৩৪৬





শনিরঞ্জন প্রেস
২৫।২ মোহনবাগান রো
কলিকাতা হইতে
শ্রীপ্রবোধ নান কর্ত্তৃক
মুদ্রিত

বিজ্ঞপ্তি

 ১২৪৫ বঙ্গাব্দের ১৩ই আষাঢ়, মঙ্গলবার, (১৮৩৮ খ্রীষ্টাব্দ, ২৬এ জুন) রাত্রি ৯টায় কাঁটালপাড়ায় বঙ্কিমচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্য-পঞ্জীতে সেটি স্মরণীয় দিন—ঐ দিন আকাশে কিন্নর-গন্ধর্বেরা নিশ্চয়ই দুন্দুভিধ্বনি করিয়াছিল—দেববালারা অলক্ষ্যে পুষ্পবৃষ্টি করিয়াছিল—স্বর্গে মহোৎসব নিষ্পন্ন হইয়াছিল। এই বৎসরের ১৩ই আষাঢ় বঙ্কিমচন্দ্রের জন্ম-শতবার্ষিকী। এই শতবার্ষিকী সুসম্পন্ন করিবার জন্য বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষৎ নানা উদ্যোগ-আয়োজন করিতেছেন—দেশের প্রত্যেক সাহিত্য-প্রতিষ্ঠানকে এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিকদিগকে উৎসবের অংশভাগী হইবার জন্য আমন্ত্রণ করা হইতেছে। সারা বাংলা দেশে বেশ সাড়া পড়িয়া গিয়াছে। বঙ্গের বাহিরেও নানা স্থান হইতে সহযোগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাইতেছে।

 পরিষদের নানাবিধ আয়োজনের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য—বঙ্কিমচন্দ্রের যাবতীয় রচনার একটি প্রামাণিক ‘শতবার্ষিক সংস্করণ’-প্রকাশ। বঙ্কিমচন্দ্রের সমগ্র রচনা—বাংলা ইংরেজী, গদ্য পদ্য, প্রকাশিত অপ্রকাশিত, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, চিঠিপত্রের একটি নির্ভুল ও Scholarly সংস্করণ প্রকাশের উদ্যম এই প্রথম—১৩০০ বঙ্গাব্দের ২৬এ চৈত্র তাঁহার লোকান্তরপ্রাপ্তির দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বৎসর পরে—করা হইতেছে; এবং বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষৎ যে এই সুমহৎ কার্যে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন, তজ্জন্য পরিষদের সভাপতি হিসাবে আমি গৌরব বোধ করিতেছি।

 পরিষদের এই উদ্যোগে বিশেষভাবে সহায়ক হইয়াছেন, মেদিনীপুর ঝাড়গ্রামের ভূম্যধিকারী কুমার নরসিংহ মল্লদেব বাহাদুর। তাঁহার বরণীয় বদান্যতায় বঙ্কিমের রচনা প্রকাশ সহজসাধ্য হইয়াছে। তিনি সমগ্র বাঙালী জাতির কৃতজ্ঞতাভাজন হইলেন। এই প্রসঙ্গে মেদিনীপুরের জিলা ম্যাজিষ্ট্রেট শ্রীযুক্ত বিনয়রঞ্জন সেন মহাশয়ের উদ্যমও উল্লেখযোগ্য।

 শতবার্ষিক সংস্করণের সম্পাদন-ভার ন্যস্ত হইয়াছে শ্রীযুক্ত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীযুক্ত সজনীকান্ত দাসের উপর। বাংলা সাহিত্যের লুপ্ত কীর্তি পুনরুদ্ধারের কার্যে তাঁহারা ইতিমধ্যেই যশস্বী হইয়াছেন। বর্তমান সংস্করণ সম্পাদনেও তাঁহাদের প্রভূত নিষ্ঠা, অক্লাস্ত অধ্যবসায় এবং প্রশংসনীয় সাহিত্য-বুদ্ধির পরিচয় মিলিবে। তাঁহারা বহু অসুবিধার মধ্যে এই বিরাট্ দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন, এই নিমিত্ত বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষদের পক্ষ হইতে আমি উভয়কে ধন্যবাদ ও আশীর্বাদ জানাইতেছি।

 যাঁহারা স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া সম্পাদকদ্বয়কে বঙ্কিমের সাহিত্য-সৃষ্টি ও জীবনীর উপকরণ দিয়া সাহায্য করিতেছেন, তাঁহাদের সকলের নামোল্লেখ এখানে সম্ভব নয়। আমি এই সুযোগে সমবেতভাবে তাঁহাদিগকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতেছি।

 গ্রন্থপ্রকাশ সম্বন্ধে সংক্ষেপে এই মাত্র বক্তব্য যে, বঙ্কিমের জীবিতকালে প্রকাশিত যাবতীয় গ্রন্থের সর্বশেষ সংস্করণ হইতে পূর্ব পূর্ব সংস্করণের পাঠভেদ নির্দেশ করিয়া ও স্বতন্ত্র ভূমিকা দিয়া এই সংস্করণ প্রস্তুত হইতেছে। বঙ্কিমের যে সকল ইংরেজী-বাংলা রচনা আজিও গ্রন্থাকারে সংকলিত হয় নাই, অথবা এখন পর্যন্ত অপ্রকাশিত আছে, এবং বঙ্কিমের চিঠিপত্রাদি—এই সংস্করণে সন্নিবিষ্ট হইতেছে।

 বিজ্ঞপ্তি এই পর্যন্ত। বঙ্কিমের স্মৃতি বাঙ্গালীর নিকট চিরোজ্জ্বল থাকুক।

১৩ই আষাঢ়, ১৩৪৫
শ্রীহীরেন্দ্রনাথ দত্ত 
কলিকাতা
সভাপতি, বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষৎ

ভূমিকা

 ‘বিজ্ঞানরহস্য’, ‘সাম্য’ ও ‘বিবিধ প্রবন্ধে’ এবং পরবর্ত্তী জীবনের অনুশীলন-তত্ত্বমূলক রচনাবলীতে বঙ্কিমচন্দ্রের মনের যে দিক্‌টির পরিচয় পাই, তাহাকে তাঁহার গবেষণা ও অনুসন্ধিৎসাপরায়ণ গম্ভীর দিক্ বলিতে পারি। ‘বঙ্গদর্শনে’র সম্পাদক হিসাবে পৃষ্ঠাপূরণের এবং বিবিধ বিষয়ক আলোচনার দ্বারা পত্রিকার অঙ্গসৌষ্ঠব সম্পাদনের জন্য অর্থাৎ সাধারণ পাঠকের মনোরঞ্জনের জন্য সব্যসাচী বঙ্কিমকে আপাতদৃষ্টিতে অত্যন্ত লঘু বিষয় লইয়াও ব্যঙ্গ ও রসিকতার ভঙ্গীতে লেখনী ধারণ করিতে হইয়াছে—‘কমলাকান্ত’, ‘লোকরহস্য’ ও ‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’ বঙ্কিমচন্দ্রের বিপরীত বা লঘু দিকের পরিচয়। কিন্তু গোপাল ভাঁড়ের গল্প অথবা ঈশ্বর গুপ্তের সমাজবিষয়ক কবিতাগুলি যে অর্থে লঘু, বঙ্কিমচন্দ্রের এই সকল হালকা রচনা সে অর্থে লঘু নহে। তাঁহার হাসি বা ব্যঙ্গের অন্তরালে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপমান-লাঞ্ছনার জ্বালা ও বেদনার অশ্রু লুকাইয়া আছে। ‘বিবিধ প্রবন্ধে’ বঙ্কিমচন্দ্র যে সকল চরম কথা বলিতে পারেন নাই, ‘লোকরহস্যে’ ও ‘কমলাকান্তে’ বিদ্রূপের আবরণে সে সকল কথা অতি সহজেই বলিতে পারিয়াছেন। বাংলা দেশের চিরন্তন গতানুগতিকতার বিরুদ্ধে হুতোমের পরেই কমলাকান্তী বঙ্কিমের এই বিদ্রোহ। ভঙ্গীর দিক্ দিয়া ‘লোকরহস্য’ও কমলাকান্তী। বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং ইহাকে “কৌতুক ও রহস্য” (প্রথম সংস্করণের টাইটেল পেজে) বলিয়াছেন।

 ‘বঙ্গদর্শনে’ ও ‘প্রচারে’ প্রকাশিত প্রবন্ধগুলির সহিত পুস্তকাকারে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলির কিছু কিছু পার্থক্য আছে। যাঁহারা মিলাইয়া দেখিতে চাহেন, তাঁহাদের সুবিধার জন্য প্রবন্ধগুলির প্রকাশের তালিকা, সংখ্যা ও পৃষ্ঠাসহ নিয়ে দেওয়া হইল—

বঙ্গদর্শন

ব্যাঘ্রাচার্য্য বৃহল্লাঙ্গুল, প্রথম প্রবন্ধ —বৈশাখ, ১২৭৯, পৃ. ৩৮-৪৪
ব্যাঘ্রাচার্য্য বৃহল্লাঙ্গুল দ্বিতীয় প্রবন্ধ —শ্রাবণ, ১২৭৯, পৃ. ১৫৫-১৬১
ইংরাজস্তোত্র —অগ্রহায়ণ, ১২৭৯, পৃ. ৩৬৯-৩৭১
বাবু —ফাল্গুন, ১২৭৯, পৃ. ৫১০-৫১২
গর্দ্দভ —শ্রাবণ, ১২৮০, পৃ. ১৮৭-১৮৯
দাম্পত্য দণ্ডবিধির আইন —আষাঢ়, ১২৮০, পৃ. ১২৩-১৩১[]
বসন্ত এবং বিরহ —বৈশাখ, ১২৮০, পৃ. ১৭-২০
সুবর্ণগোলক —চৈত্র, ১২৮০, পৃ. ৫৫৪-৫৬১
রামায়ণের সমালোচন —পৌষ, ১২৭৯, পৃ. ৪২০-৪২২[]

[১৮৭৪ সালে প্রকাশিত প্রথম সংস্করণে (পৃ. ৯৯) মাত্র উপরের রচনা কয়টি ছিল।]

বর্ষ সমালোচন —অগ্রহায়ণ, ১২৮২ পৃ. ৩৮১-৩৮৪
কোন “স্পেশিয়ালের” পত্র —কার্ত্তিক, ১২৮২, পৃ. ৩১৩-৩১৭
Bransonism —ফাল্গুন, ১২৮৯, পৃ. ৪৯৯-৫০৫
হনূমদ্বাবুসংবাদ —মাঘ, ১২৮৯, পৃ. ৪৭১-৪৭৫

প্রচার

গ্রাম্য কথা, প্রথম সংখ্যা —ভাদ্র, ১২৯১, পৃ. ৬২-৬৮
গ্রাম্য কথা দ্বিতীয় সংখ্যা —পৌষ, ১২৯১, পৃ. ১৯০-১৯৪
বাঙ্গালা সাহিত্যের আদর —চৈত্র, ১২৯১, পৃ. ৩১৭-৩২৩
New Year’s Day —পৌষ, ১২৯২, পৃ. ২৩৭-২৪০

 ‘লোকরহস্য’ সম্বন্ধে সমালোচনামূলক বিশেষ উল্লেখযোগ্য কোনও প্রবন্ধাদি লেখা হয় নাই।

 ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দে লণ্ডন হইতে প্রকাশিত The Indian Magazine and Review পত্রের মার্চ সংখ্যায় মিরিয়ম এস. নাইট-কৃত “সুবর্ণগোলকে”র অনুবাদ “The Globe of Gold” নামে প্রকাশিত হয়।

  1. রচনাটির শেষে ‘বঙ্গদর্শনে’ “ক্রমশঃ” লেখা ছিল।
  2. এই প্রবন্ধটি দ্বিতীয় সংস্করণে পুনর্লিখিত। ‘বঙ্গদর্শনে’ও প্রথম সংস্করণে “শ্রীমদ্ধনুমদ্বংশজ শ্রীমন্মহামর্কট প্রণীত” ছিল।

সূচী।

১৮
 ··· 
২১
২৪
২৬
৩৮
৪৩
৫১
৫৪
৫৮
 ··· 
৬৩
৭০
 প্রথম সংখ্যা
 ··· 
৭৬
 দ্বিতীয় সংখ্যা
 ··· 
৮০
৮৪
৮৯
৯৩

লোকরহস্য

[১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দে মুদ্রিত দ্বিতীয় সংস্করণ হইতে]

দ্বিতীয়বারের বিজ্ঞাপন

 লোকরহস্যের দ্বিতীয় সংস্করণে অর্দ্ধেক পুরাতন ও অর্দ্ধেক নূতন। সতেরটি প্রবন্ধের মধ্যে আটটি নূতন, আটটি পুরাতন; এবং একটি (রামায়ণের সমালোচন) পুরাতন হইলেও নূতন করিয়া লিখিত হইয়াছে। সকলগুলিই বঙ্গদর্শন ও প্রচার হইতে পুনর্মুদ্রিত।

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।