শিশু ভোলানাথ/বৃষ্টি রৌদ্র

বৃষ্টি রৌদ্র

ঝুঁটিবাঁধা ডাকাত সেজে
দল বেঁধে মেঘ চলেছে যে
আজকে সারা বেলা।
কালো ঝাঁপির মধ্যে ভ’রে
সূর্যিকে নেয় চুরি করে—
ভয় দেখাবার খেলা।
বাতাস তাদের ধরতে মিছে
হাঁপিয়ে ছোটে পিছে পিছে,
যায় না তাদের ধরা।
আজ যেন ওই জড়োসড়ো
আকাশ জুড়ে মস্ত বড়ো
মন-কেমন-করা।
বটের ডালে ডানা-ভিজে
কাক বসে ওই ভাবছে কী যে,
চড়ুইগুলো চুপ।
বৃষ্টি হয়ে গেছে ভোরে,
শজনেপাতায় ঝ’রে ঝ'রে
জল পড়ে টুপ্ টুপ্।
লেজের মধ্যে মাথা থুয়ে
খ্যাঁদন-কুকুর আছে শুয়ে
কেমন-এক-রকম।



দালানটাতে ঘুরে ঘুরে
পায়রা গুলো কাঁদন-সুরে
ডাকছে বক্‌বকম।
কার্তিকে ওই ধানের খেতে
ভিজে হাওয়া উঠল মেতে
সবুজ ঢেউয়ের ’পরে।
পরশ লেগে দিশে দিশে
হিহি ক’রে ধানের শিষে
শীতের কাঁপন ধরে।
ঘোষাল-পাড়ার লক্ষ্মী বুড়ি
ছেঁড়া কাঁথায় মুড়িসুড়ি
গেছে পুকুর-পাড়ে,
দেখতে ভালো পায় না চোখে—
বিড়্‌বিড়িয়ে ব’কে ব’কে
শাক তোলে, ঘাড় নাড়ে।
ওই ঝমাঝম বৃষ্টি নামে,
মাঠের পারে দূরের গ্রামে
ঝাপ্‌সা বাঁশের বন।
গোরুটা কার থেকে থেকে
খোঁটায়-বাঁধা উঠছে ডেকে,
ভিজছে সারা ক্ষণ।
গদাই কুমোর অনেক ভোরে



সাজিয়ে নিয়ে উচু ক’রে
হাঁড়ির উপর হাঁড়ি
চলছে রবিবারের হাটে—
গামছা মাথায়, জলের ছাটে
হাঁকিয়ে গোরুর গাড়ি।
বন্ধ আমার রইল খেলা,
ছুটির দিনে সারা বেলা
কাটবে কেমন করে?
মনে হচ্ছে এমনিতরো
ঝরবে বৃষ্টি ঝরোঝরো
দিনরাত্তির ধ'রে।

এমন সময় পুবের কোণে
কখন যেন অন্যমনে
ফাঁক ধরে ওই মেঘে,
মুখের চাদর সরিয়ে ফেলে
হঠাৎ চোখের পাতা মেলে
আকাশ ওঠে জেগে।
ছিঁড়ে-যাওয়া মেঘের থেকে
পুকুরে রোদ পড়ে বেঁকে,
লাগায় ঝিলিমিলি—
বাঁশ-বাগানের মাথায় মাথায়


তেঁতুল গাছের পাতায় পাতায়
হাসায় খিলিখিলি।
হঠাৎ কিসের মন্ত্র এসে
ভুলিয়ে দিলে এক নিমেষে
বাদল-বেলার কথা।
হারিয়ে-পাওয়া আলোটিরে
নাচায় ডালে ফিরে ফিরে
বেড়ার ঝুমকোলতা।

উপর নীচে আকাশ ভ'রে
এমন বদল কেমন ক’রে
হয় সে কথাই ভাবি।
উলট-পালট খেলাটি এই,
সাজের তো তার সীমানা নেই—
কার কাছে তার চাবি?
এমন যে ঘোর মন খারাপি
বুকের মধ্যে ছিল চাপি
সমস্তখন আজি—
হঠাৎ দেখি সবই মিছে,
নাই কিছু তার আগে পিছে—
এ যেন করি বাজি।



৬ক