ঘট ভরা

আমার এই ছােটো কলসখানি
সারা সকাল পেতে রাখি
ঝর্নাধারার নীচে।
বসে থাকি একটি ধারে
শেওলা-ঢাকা পিছল কালাে পাথরটাতে।
ঘট ভরে যায় বারে বারে-
ফেনিয়ে ওঠে, ছাপিয়ে পড়ে কেবলই।

সবুজ দিয়ে মিনে-করা
শৈলশ্রেণীর নীল আকাশে
ঝরঝরানির শব্দ ওঠে দিনে রাতে।
ভােরের ঘুমে ডাক শােনে তার
গাঁয়ের মেয়েরা।
জলের শব্দ যায় পেরিয়ে
বেগনি রঙের বনের সীমানা,
পাহাড়তলির রাস্তা ছেড়ে
যেখানে ওই হাটের মানুষ
ধীরে ধীরে উঠছে চড়াইপথে,
বলদ-দুটোর পিঠে বােঝাই

শুকনাে কাঠের আঁঠি-
রুনুঝুনু ঘণ্টা গলায় বাঁধা।

ঝরঝরানি আকাশ ছাপিয়ে
ভাবনা আমার ভাসিয়ে নিয়ে কোথায় চলে
পথ-হারানাে দূর বিদেশে।
রাঙা ছিল সকালবেলার প্রথম রােদের রঙ,
উঠল সাদা হয়ে।
বক উড়ে যায় পাহাড় পেরিয়ে।
বেলা হল, ডাক পড়েছে ঘরে।
ওরা আমায় রাগ ক'রে কয়,
‘দেরি করলি কেন?'
চুপ করে সব শুনি।
ঘট ভরতে হয় না দেরি সবাই জানে,
উপচে-পড়া জলের কথা
বুঝবে না তাে কেউ।


সাতাশ-সংখ্যক কবিতা তুলনীয়

গ্রন্থপরিচয়ে ভিন্ন একটি পাঠ মুদ্রিত