শেষ সপ্তক/প্রশ্ন
প্রশ্ন
দেহের মধ্যে বন্দী প্রাণের ব্যাকুল চঞ্চলতা
দেহের দেহলীতে জাগায় দেহের-অতীত কথা।
খাঁচার পাখি যে বাণী কয়
সে তো কেবল খাঁচারই নয়,
তারি মধ্যে করুণ ভাষায় সুদূর অগােচর
বিস্মরণের ছায়ায় আনে অরণ্যমর্মর।
চোখের দেখা নয় তাে কেবল দেখারই জাল বােনা,
কোন্ অলক্ষ্যে ছাড়িয়ে সে যায় সকল দেখাশােনা।
শীতের রৌদ্রে মাঠের শেষে
দেশ-হারানাে কোন্ সে দেশে
বসুন্ধরা তাকিয়ে থাকে নিমেষ-হারা চোখে
দিগবলয়ের ইঙ্গিতলীন উধাও কল্পলােকে।
ভালােমন্দে বিকীর্ণ এই দীর্ঘ পথের বুকে
রাত্রদিনের যাত্রা চলে কত দুঃখে সুখে।
পথের লক্ষ্য পথ-চলাতেই
শেষ হবে কি? আর কিছু নেই?
দিগন্তে যার স্বর্ণ লিখন, সংগীতের আহ্বান,
নিরর্থকের গহ্বরে তার হঠাৎ অবসান?
নানা ঋতুর ডাক পড়ে যেই মাটির গহন-তলে
চৈত্রতাপে, মাঘের হিমে, শ্রাবণ-বৃষ্টিজলে,
স্বপ্ন দেখে বীজ সেখানে
অভাবিতের গভীর টানে,
অন্ধকারে এই-যে ধেয়ান স্বপ্নে কি তার শেষ?
উষার আলােয় ফুলের প্রকাশ, নাই কি সে উদ্দেশ?
১৫ নভেম্বর ১৯৩৪
পঁয়ত্রিশ-সংখ্যক কবিতা তুলনীয়