শ্মশানের ফুল/আশা সহচরী
বড় সাধ ছিল মনে, সখের কুসুম বনে
ওরে মোশা তোর সনে কত খেলা খেলিব
দুই জনে মিলে মিলে কত ফুল তুলিব।—
কত পাখী গাছে ব’সে, গান গাবে নব রসে
বনমাঝে দুইজনে তরুতলে বসিয়া
কত সুখ লভিবরে সেই গান শুনিয়া।—
শান্তির মলয়ানিলে দুটী সহচরী মিলে
নিরজনে সেইখানে কতহাসি হাসিব
শশীর অমিয়মাখা মুখখানি হেরিব।—
ঐ তটিনীর বুকে তুলিয়া লহরী সুখে
জীবনের ক্ষুদ্রতরি আশা ধীরি বাহিবে
কত যে নূতন দেশে নিত্য নিত্য আনিবে।—
তোরে বাঁধি ভুজপাশে, রাখি তোরে আশে পাশে
তোর ঠাঁই শিখিবরে তোর সেই ছলনা
সাধে বাদ সাধিলেন কেন বিধি বলনা?
কেন সে কৌমুদী রাশি, কেন সে ফুলের হাসি
কেন সে মলয় আজি হাসাইতে পারে না
কেন রে বিহগে আর সে সঙ্গীত গাছে না?–
সুধাকরে নাহি সুধা রত্নশূন্য কি বসুধা
কিংবা ঐ নির্ঝরিনী নাচেনাকো লহরে
জানেনা কি শোভা ছিল হৃদয়ের ভিতরে?–
ওরে আশা! তোর হৃদি, কি দিয়া গঠেছে বিধি
একবার বুক খুলে দেখাবি কি বলন।
কি আছে সেখানে দেখি মনে বড় বাসনা।—
কে জানে আশার গাছে, নিরাশা যে ফুলে আছে
তাহলে আমন করে কেন অত যতনে,
হৃদয়ের উপবনে পুতিবরে গোপনে?
এত যে আদর ক’রে কে তাহারে পুষিতরে
সুবাস সুশোভা তার কুঠারের আঘাতে
ছিন্ন করি সিন্ধুনীয়ে ফেলিতাম দু'হাতে।—
ওরে আশা বিনোদিনী তুই কাল ভুজঙ্গিনী
মুখেতে সরস শোভা অবিরত নেহারি
অনন্ত দহিস কত কালকূট উগারি।—
আমিওরে ঐ রূপে ভুলেছিনু তোর রূপে
কত কি নুতন ছবি চিত্তপটে আঁকিলি
অনন্ত বড়াই(এ) তুই মনে মনে হাসালি।—
কে জানে এমন তর আশা প্রবঞ্চনাপর?
জানি নাই শুনি নাই ভাবি নাই অন্তরে
নবোঢ়া বিধবা হবে বিবাহের বা্সরে।—
কি জানি করেছি পাপ প্রায়শ্চিত্ত অভিশাপ
জীবনের সন্ধিস্থলে একে একে বিকাশে
তাই বুঝি আশা তুই পরিণত নিরাশে?
ভ্রম মাথা আশা নাম, ভ্রমে সিদ্ধ মনস্কাম
বিজড়িত ভ্রম হাসি কি আসল-নকলে
ওরে আশা তোর প্রেমে পাগল কি সকলে?
ঐ ফুল ফুটেছিল কত শোভা বিতরিল
কেন আশা সেই ফুল বৃন্তচ্যুত করিল?
ছিন্নবৃত্ত হ’তে আহা কত অশ্রু ঝরিল।—
নিশ্চয় দু'দিন পরে ফুলটী যে যেত ঝ’রে
সুবাস সুশোভা তার কিছুইন রহিত।–
কে না জানে তরুটিও শুকাইয়া যাইত?
এমন নিঠুরা তুই জানিলে কি তোরে ছুঁই
নয়নে নয়ন রাখি মণিহারা হই কি?
হৃদয় বদল করে সহচরী করি কি?
ওরে মায়াবিনী আশা এই তোর ভালবাসা
তোর মনে এই ছিল কে তা আগে জানিত
তাহ’লে যে তোর তরে কে ওরূপে কাঁদিত?
তোর মুখে দিয়ে ছাই, মাপ চেয়ে তোর ঠাঁই
আলাই বালাই নিয়ে যেতাম যে চলিয়া।
তোর পানে মুখ তুলে আরত না চাহিয়া।
কেন লোকে নাহি বুঝে এত শক্তি তোর ভুজে
মরীচিকা কত শত হেরি তোর ছলনে
নিরাশার বিভীষিকা দহে তোর বিহনে।
তোর সে কুহক হাসি হৃদয়ে উঠিল ভাসি
জীবন উজান বয় তরঙ্গিত তুফানে
অনলে বুদবুদ ভাসে কিনা হয় কে জানে?
দরিদ্র আপন ঘরে, হেরে যেন আঁখি পরে
ঐশ্বর্য্য সে সৌদামিনী চির স্থির বিহারে
আপন অবস্থা দশা আর নাহি নেহারে।
আশা তোর বায়ুভরে, জীবনের সরোবরে
কমল ধু দ ফুল কত কি যে ফুটিত
রোদে কিংবা জোছনায় ধীরে ধীরে দুলিত।
তুহার মোহন বলে, মরুভূমি শতদলে
পূর্ণ হত কুঞ্জবনে শত শোভা বিতরি,
কত অলি ফুল কুলে আকুলিত বিহারি।
তোর সে মুখের হাসি হায়রে এখন বাসি
তোর যে সে শুভদৃষ্টি বিষদৃষ্টি মানসে
যাতনার শরশয্যা ফুলশয্যা দিবসে।
যেমন কুসুম বনে দেখা দিলি নিরজনে
আবার তেমন দেখা দিবি কিরে জীবনে?
আবার তেমন শোভা হেরিব কি নয়নে?
নিরাশায় নিরাশায় ছিন্নভিন্ন এই কায়
এখন যে আশা তোর বাণী বুণি খাটে না
এখন তেমন দেখা আর যে রে ঘটে না।
ওরে আশা তুই কিরে আর না আসবি ফিরে
অনন্ত বিদায় নিয়ে যথার্থ কি চলিলি
নিরাশার দাবানলে সহচরী রাখিলি?
ওরে আশা ডাকি তোরে, দিবায় নিশায় ভোরে
একবার একবার দেখা দিস্ নয়নে
এ জীবনে নহে কিন্তু অন্তিমেতে মরণে।
আশা তোর গলা ধরে, বড় ইচ্ছা কাঁদিব রে
শেষের সেদিনে হায় জাহ্নবীর তুফানে
নহে বনে উপবনে জীবনের শ্মশানে।
রচিয়া সুন্দর চিতে তাহাতে প্রফুল্লচিতে
উঠিব দুজনে সুখে যাবি সহমরণে?
নিশ্চয় হইবে দেখা আশা পুনঃজীবনে।