শ্মশানের ফুল
যেই মুখখানি হায় অতুল ধরার,
কি যৌবনে কি বয়সে, স্নিগ্ধ যাহা প্রেমরসে,
সেই চিত্র ক্ষীণাঙ্কিত করেছি হেথায়,
বিষাদের চিত্রপটে নয়ন ধারায়।
ভূমিকা।
যে অবস্থায় চন্দ্রশেখর বাবু “উদ্ভ্রান্ত প্রেম” লিখিয়াছিলেন, আমিও তদবস্থায় পতিত হইয়া “শ্মশানের ফুল” লিখি। সন ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দের প্রথমে এই কবিতা কয়টি আমি লিখিয়াছিলাম, কিন্তু সমালোচনার তীব্র দংশনের ভয়ে প্রকাশ করিতে সাহস করি নাই। কলিকাতার কোন বিশিষ্ট বিদ্বান্ বক্তির উৎসাহে এই গ্রন্থখানি সাধারণের সমক্ষে প্রকাশ করিতে সাহসী হইয়াছি।
বঙ্গভাষায় স্ত্রীবিয়োগ উপলক্ষে কোন কবিতা পুস্তক আছে কি না আমি জানি না। আমার উদ্দেশ্য কাঁদা, কাঁদিতে পারিয়াছি কি না বলিতে পারি না। তবে এইমাত্র বলিতে পারি আমি অলীক স্বপ্ন অনুসরণ করিতে যাই নাই, আমার ঘটনা যথার্থ।
সোদরপ্রতিম প্রিয়সুহৃদ্ শ্রীযুক্ত গোবিনলাল বন্ধ্যোপাধ্যায় এই কার্য্যে আমাকে বিশেষরূপ সাহায্য করিয়াছেন। তিনি ঐরূপ সামান্য না করিলে এই কবিতা কয় ছত্র প্রকাশিত হইত না। তজ্জন্য তাঁহার নিকট আমি চিরকৃতজ্ঞ।
১৪৷১ বেনেটোলা লেন, কলিকাতা ১লা সেপ্টেম্বর ১৯০৫। |
শ্রীনরেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। |
হে সুধা! প্রতুল! সাহিত্যের বিশাল কাননে
পশিবে যখন, ভুলিওনা—রেখো এরে মনে;
জনকের সর্ব্বনাশ— কামনার বিষপান
যাতনার শরশয্যা—হৃদয়ের মর্ম্মগান
স্মৃতির সমাধি——বাসনার খাণ্ডব দহন
শান্তির প্রলয়—সৌভাগ্যের চিরনির্ব্বাসন
নিরাশার লক্ষ্যবেধ- আকাঙ্ক্ষার কারাগার
বিষাদের কুরুক্ষেত্র—জীবনের হাহাকার;
আছে বটে জননীর চিত্র প্রতিকৃতি ঘরে
এটী আরো একখানি দেখি ও নয়ন ভ’রে,
কি জানি কি আছে শাপ বুঝি এর অন্ত নাই
আমিও জননীহীন তোরাও শৈশবে তাই।
আর না আর না দেব! হয়েছে যথেষ্ট মোর
এইখানে হয় যেন শাপ নিশা অন্তে ভোর।