শ্মশানের ফুল/শোকে শান্তি

শোকে শান্তি।

কে যেন কোথায় গেয়েছিল সেই
মনে কিন্তু হায়! সব তার নেই
সে গীতের আদ্য চরণ এই।

“যার কেহ নাই তার সব আছে
সমস্ত জগৎ পূর্ণ তার কাছে
তারি তরে ফুটে কুসুম গাছে।”
বিপুল এ বিশ্ব জীবজন্তুময়
তুষিতে সামান্য একটা হৃদয়
পারে কিনা পারে অলীক ভয়।
বিশাল ব্রহ্মাও সুপ্রকাণ্ড কায়
কত কি জিনিষ নিয়ত বেড়ায়
অগণ্য তারকা গগন-গায়।
ফুলে পূর্ণ তরু, লতা কিসলয়ে
ডাকিছে সদাই আনন্দ হৃদয়ে
পশু পক্ষী কীট পতঙ্গ চয়ে।
সার কেহ নাই তারি আঁখি তরে
এত কি আয়াস কষ্ট সাধ্য ক’রে
লাবণ্যে লাবণ্য অপনি ঝরে?
তারি তরে কি গো শশী সুর্য্যোদয়
নৃত্য লহরীর পারাবার ময়
তারি তরে কিগে। মলয় বয়?
উন্নত ভূধর শৃঙ্গ মনোহর
শৃঙ্গে শৃঙ্গে দেখাদেখি পরস্পর
অরণ্য কান্তার মরু সুন্দর?

মুক্ত প্রস্রবণে যুক্ত নদীজল
আঁধারে মাধুরি আলোক উজ্জল
রোদে জোছনায় প্রাণ পাগল।
তারি তরে বটে দেশ দেশান্তরে
অগাধ সাগরে ভূধর শিখরে
নিসর্গে সদাই সৌন্দর্য্য ঝরে।
কুসুমিত লতা মুখরিত তরু
তারি তরে শোভে মনোহর চারু
বন উপবন উদ্যান মরু।
সুদূর অম্বরে কি মেদিনীময়
কত কি অদ্ভুত নিত্য সৃষ্ট হয়
জুড়াতে তাহার নয়নদ্বয়।
পাখীর কাকলি সুসঙ্গীত স্রোত
অম্বর সাগর ধবনিত সতত
নিসর্গ বিব্রত শোভায় স্বতঃ।
নগণ্য মানব আমি ক্ষুদ্র প্রাণ
কোন কোণে পড়ে রয়েছি অজ্ঞান
আছি কিনা আছি নাহি সন্ধান।
এরা যদি হায় আমারে তুষিত
অক্ষম বলিয়া পরিচয় দিতে
নাহি লজ্জা পায়, কি ফল জীতে?

নিরজনে যবে কাঁদিবরে একা
ফুল সনে যদি হয় মোর দেখা,
বলিবে কেন হে কাঁদিছ সখা?
তটিনীর কুলে বসিয়া বিরলে
হেরিবরে ষবে তরঙ্গের কোলে
টানে টানে টানে লহরী দোলে।
বলিবে লহরী মৃদু মন্দ হাসি
মধুর মধুর মধুর সম্ভাষি
কেন ফেল সখা অশ্রুর রাশি?
ফুলরেণু তুলি পরিমল ভরি
হিল্লোলে হিল্লোলে আমোদ বিতরি
পবন যখন বহিবে ধীরি।
বলিবে হে সখ আমার মতন
পরহিত ব্রতে বিসর্জ্জ জীবন
সদানন্দে সদা হ’বে মগ।
হাসিতে হাসিতে প্রকৃতি সুন্দরী
নব তনুখানি সলাজে আবরি
নাচিবে আনন্দে প্রেম বিতরি।
দুলিয়া লতিকা সমীর চঞ্চলে
সুশোভিত দেহ কুমুমের দলে
ভুজাবলী যবে পরাবে গলে



গগনে তারকা জোছনা নয়নে
অমনি সরমে আবৃত বদনে
 উপহাস বাণী বলিবে মনে।
দেখি নবভাব করি বিড়ম্বনা
কত দিবে মোরে লাঞ্ছনা গঞ্জনা
 জড়প্রকৃতির সরলপ্রাণা।
বলিবে সকলে “সখা” সমস্বরে
আমাদের কিগো মনে নাহি ধরে
 এত কি ঐশ্বর্য্য লতায় ঝরে?
ছিলনা সঙ্গিণী আমরাত আছি
যারে অভিলাষ লও তারে বাছি
 সবাই আমরা তোমারে যাচি।
নব পরিণয় স্নেহ বিনিময়
নিরাশ পরাণে আশার উদয়
 এখন ধরণী সঙ্গিনীময়।
প্রকৃতির স্বরে গাহি দুলে দুলে
সমীরের তালে নাচি কুতুহলে
 এখন কাঁদিনা বারেক ভুলে।

—:OO:—
সম্পূর্ণ।