ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা/২
২
হেড়ম্বদেশের নৃপতি, প্রচণ্ড দৌর্দণ্ড ভব প্রতাপ দাবানল শলভিকৃত বৈরি নিকর শরদিন্দু সুন্দরজশ হেড়ম্ব পুরপুরিত পুরন্দর শ্রীশ্রী কীর্তিচন্দ্র নারায়ণ মহারাজা মহা মহগ্র প্রচণ্ড প্রতাপেসু-র শেষ বংশধর গোবিন্দচন্দ্রের মৃত্যুর শতবর্ষ পর রাজদরবারের উজির বংশের প্রতিনিধি এই রায়বাহাদুর বিপিনচন্দ্র। ইতিমধ্যে ব্রহ্মপুত্র বরবক্র কলং মাহুর, আর জিরি-চিরি-মধুরা-জাটিঙ্গাকাটাখাল-ধলেশ্বরি-রুক্ষিণী-সোনাই-সুরমা-কুশিয়ারা এবং মনু নদী দিয়ে প্রচুর জল গড়িয়ে গেছে।
গুপ্তঘাতকের হাতে হরিটিকরে প্রাণ হারালেন বৈষ্ণব চূড়ামণি ‘শ্রীগোবিন্দকৃষ্ণচন্দ্রলীলামৃত রসে’ আকণ্ঠ নিমজ্জিত সম্রাট-কবি, পরমাসুন্দরী ইন্দুপ্রভা দেবীর প্রাণবল্লভ শ্রীগোবিন্দচন্দ্রধ্বজ নারায়ণ। দূর থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছেন সুযোগসন্ধানী ইংরেজ সেনানায়ক ক্যাপ্টেন টমাস ফিশার। খাসিয়া পাহাড়ে চেরাপুঞ্জির সরকারি কুঠিতে বসে আরও গভীর ভাবে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছেন আরেক ব্যক্তি, ইনি উত্তর-পূর্ব ভারতে কোম্পানি বাহাদুরের প্রতিনিধি ডেভিড স্কট সাহেব। মহামহিম কোম্পানি বাহাদুরের ভারতবর্ষস্থিত প্রতিনিধি গভর্নর জেনারেল হিজ হাইনেস লর্ড উইলিয়ম বেণ্টিঙ্ক সাহেব গঙ্গার পাড়ে সুতানুটি-গোবিন্দপুরের বুকের উপর গড়ে ওঠা কলিকাতা মহানগরিতে ফোর্ট উইলিয়ম প্রাসাদকক্ষে বসে হেড়ম্বরাজ হত্যাকাহিনি শুনলেন। এ মর্মে মহারানি ইন্দুপ্রভার দূত মারফত একটি আর্জিও ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে তাঁর দরবারে। কাছাড় মুলুক থেকে মানুষ নাকি বাড়িঘর ক্ষেত খামার ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে। উপজাতিদের আক্রমণ, আন্তর্ঘাত, সিংহাসনের অধিকার সংক্রান্ত বিবাদ নিয়ে রাজ্যে এখন মৎসান্যায়। ইতিমধ্যে সিলেট ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির কুক্ষিগত হয়ে গেছে। উইলিয়াম ম্যাক্পিস থ্যাকারে, রবার্ট লিণ্ডসের দাপটে কম্পিত শাহজালাল-চৈতন্য পদস্পর্শধন্য শ্রীভূমি-সিলেট। কামতা, মটক, কোচ সহ কামরূপ কামাখ্যার দেশ এবং জৈন্তেশ্বরী ভূমি পদানত করার পর সাগরপারের বণিক্য জাতি ইংরেজ সাহেবদের নজর এবার ভারতবর্ষের পূর্বতম প্রান্তে স্বাধীন সার্বভৌম রাজ্য কাছাড়ের দিকে। অবশ্য আরও পূর্বে রয়েছে স্বাধীন মণিপুর রাজ্যও। তবে আগে হেড়ম্ব রাজ্য বিজয় হয়ে যাক, তার পর ওদিকে দৃষ্টিপাত করা যাবে।