সাহিত্যে প্রগতি/প্রগতি সাহিত্যের সংজ্

প্রগতি সাহিত্যের সংজ্ঞা

সাহিত্যে প্রগতির ধারার সন্ধান পাওয়া যায় বলিয়া একটা রব উঠিয়াছে এবং তজ্জন্য তাহার অনুসন্ধানও চলিতেছে। ফলতঃ দেশের সর্বত্র এক তরুণ দলের অভ্যুদয় হইয়াছে যাঁহারা সাহিত্যে প্রগতির অনুসন্ধানকারী। অন্য, পক্ষে একদল পুরাতন সাহিত্যরথীও রহিয়াছেন যাঁহারা এই প্রগতির অনুসন্ধানকারীদিগকে 'মতলববাজ দল' বলিয়া নিন্দা করেন। সাহিত্যের এই সনাতনীদের বক্তব্য যে, সাহিত্য হইতেছে শাশ্বত ও সনাতন। ১৯২৫ খৃষ্টাব্দে ডাঃ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রূপ' ও 'রস' নামক যে দুইটা বক্তৃতা করিয়াছিলেন তাহাও ইঁহাদের তুণীরে অস্ত্রস্বরূপ ব্যবহৃত হয়। এই জন্যই ইঁহারা বলেন রূপ, রস নিয়াই সাহিত্য, তাহাতে প্রগতি বা অ-প্রগতি আবার কি?

সনাতনী সাহিত্যিক সমালোচকেরা কিন্তু সাহিত্যকে Realism, Neorealism, Idealism, Neo-idealism, Romanticism, Expressionism, Impressionism, Decadent period প্রভৃতি ভাগে বিভক্ত করেন। হালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রুষ সমাজতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সরোকিন সাহিত্য তথা মানব সংস্কৃতিকে Ideational, Sensate এবং উভয়ের মিশ্রিত Idealistic or Mixed এইভাবে বিভক্ত করিয়াছেন। এতদ্ব্যতীত ঐতিহাসিক ও সমাজতত্ত্ববিদেরা মানবের সভ্যতার ইতিহাসকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করিয়াছেন; যথা, বর্ব্বর যুগের শেষকালীন ও সভ্যতার উন্মেষের প্রথমাবস্থার—Heroic Age; সভ্যতার বিকাশের পরে সামাজিক যুগকে Classical Age বলা হয়; যে-সব দেশে রাষ্ট্রমধ্যে সামন্ততন্ত্রীয় প্রথা প্রতিষ্ঠিত হয় তাহাকে Feudal Age বলা হয়। আবার যে-সব দেশে এই যুগের অবসান হইয়া বুর্জ্জয়া-ন্যাশনাল ষ্টেট্‌ বিবর্ত্তিত হইয়াছে তথায় বুর্জ্জোয়া যুগের আবির্ভাব হইয়াছে বলিয়া গণ্য করা হয়। পুনরায় যে-রাষ্ট্রে শ্রমজীবীরা শাসকরূপে প্রতিষ্ঠিত, সেই দেশে প্রোলেটারীয় যুগ আরম্ভ হইয়াছে বলিয়া নির্দ্ধারিত করা হয়। রাষ্ট্রের এই বিবর্ত্তন সমাজে ও সেই লোকসমষ্টির সংস্কৃতিতে বিশিষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। রাষ্ট্রের যে-যুগের যে-সব লক্ষণ আছে তাহার চিহ্ন সাহিত্যে পাওয়া যায়। কাজেই সাহিত্যকে যদি এই প্রকারের সমাজতাত্ত্বিক বিভাগের দ্বারা চিহ্নিত করা যায়, তাহা হইলে কোন অপরাধ হয় না। সমাজের প্রত্যেক যুগের অবস্থা তৎকালীন সাহিত্যে প্রতিবিম্বিত হয় এবং সমাজের তৎকালীন কর্ণধারদের মনস্তত্ত্বও তাহাতে প্রতিফলিত হয়। সাহিত্যের লেখক তাঁহার আবেষ্টনীর বাহিরে গিয়া কিছু লেখেন না। তাঁহার লেখার মধ্যে তাঁহার শ্রেণীগত শিক্ষাদীক্ষা ও আদর্শ প্রতিফলিত হয়। ফলতঃ একটী যুগের সাহিত্যকে বিশ্লেষণ করিলে তাহার মধ্যে তৎকালীন ক্ষমতাশালী শ্রেণী বা শাসকবর্গের মনস্তত্ত্ব ধরা পড়ে এবং প্রত্যেক শাসকবর্গের নিজেদের একটা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পন্থার নির্দ্দেশের সংবাদ সমকালীন সাহিত্যের মধ্যে পাওয়া যায়। ফলতঃ যুগধর্ম্মানুযায়ী রাষ্ট্রীয় আদর্শ প্রত্যেক যুগের সাহিত্য বহন করে। সেই জন্য সাহিত্যকে যদি আমরা উপরোক্ত ভাগে বিভক্ত করি তাহা হইলে কোন দোষ হয় না। আর লেখকদের যদি সাহিত্যকে উপরোক্ত নানা প্রকারের ভাগে বিভক্ত করিবার অধিকার থাকে তাহা হইলে আমাদেরও এই প্রকারের বিভক্ত করিবার পূর্ণ অধিকার আছে। ইহাতে কোন ‘মতলবাজের' কর্ম্ম প্রকাশ পায় না।

এক্ষণে আমাদের এই বিশ্লেষণের অনুসরণ করা যাক। প্রথমে আমরা বর্ব্বর অবস্থার কথা বলিয়াছি। মানব সমাজের এই কালেই বীরত্বের যুগের (Heroic Age) নিদর্শন পাই। এই কালের বীরদের অলৌকিক কীর্ত্তির উল্লেখ ছাড়া সাহিত্যে আর কিছুই দেখিতে পাই না। গ্রীসের হারকুলিস, পারস্যের রোস্তম, ভারতের ভীষ্ম এই প্রকারের বীর। তাঁহাদের বীরত্বগাথা Classical যুগের সাহিত্যেই লিপিবদ্ধ হইতে দেখা যায়। এই বীরেরা তৎকালীন যুগের আদর্শপুরুষ বলিয়া বর্ণিত হইতেন। তৎপরে আসে Classical যুগ। এই যুগ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে আরস্তু হইয়াছে। এই যুগকেও সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়: গ্রীসের হোমারীয় কাল হইতেছে সেই দেশের সামন্ততন্ত্রীয় যুগ; আর পেরিক্লিসের যুগ হইতেছে এথেন্‌সের বুর্জ্জোয়া-ডেমোক্র্যাটিক যুগ। অন্যপক্ষে রোম যখন এটোলীয়ান লীগকে পরাজিত করিয়া গ্রীসকে বিধ্বংস করে তখনও এই পার্বত্য গ্রীকেরা সভ্যতার গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করে নাই। আবার ভারতবর্ষে সানস্ততন্ত্রীয় য়ুগ হয় তো সুদূর অতীতে কোনো সময় আরম্ভ হয়, কিন্তু গুপ্ত যুগ হইতে মোগল যুগের পূর্ব্ব পর্য্যন্ত ইহাকে জাজ্জ্বল্যভাবে দেখিতে পাই; এবং রাজপুতনায় ইহা এখনও বর্ত্তমান আছে।

এক্ষণে দেখা যাক কি কি লক্ষণ দ্বারা আমরা সামন্ততন্ত্রীয় প্রথা বা “জায়গীরদারী” [] সভ্যতা নির্দ্ধারণ করিতে পারি। ঐতিহাসিকেরা বলেন যে নিম্নলিখিত কয়েকটা লক্ষণ দ্বারা ইহা নির্দ্ধারিত হয়:

(১) জমির ভোগদখলের অধিকার রাজা হইতে স্তরে স্তরে কৃষক পয্যন্ত নামিয়া যায়, (Subinfeudation of land), (২) স্বামীধর্ম্ম (Nobless oblige), (৩) বৈরদেয় (Blood feud and blood bond, (৪) তালুকের উপর স্বত্ত্বভোগ (benefice), স্ত্রীলোকের প্রতি সম্মান (gallantry), (৬) বীরত্বের লড়াই (chivalry) প্রভৃতি। এ যুগের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ আত্মিক তত্ত্ব হইতেছে “স্বামীধর্ম্ম”। ইউরোপের মধ্যযুগে দক্ষিণ ফ্রান্সের ত্রূবাদুরেরা এবং উত্তর ফ্রান্সের এভেয়ারদের গাথা এবং ভারতবর্ষে মহাভারত থেকে রাজপুতানার চারণ গাথাতে এই স্বামীধর্ম্মকেই বীরের আদর্শ বলিয়া নির্দ্দিষ্ট করা হইয়াছে। ফ্রান্সের চারণ রোঁলা তৎকালীন রাজনৈতিক আদর্শের সম্বন্ধে বলিয়াছেন যে তাঁবেদার লোকের কর্তব্য হইতেছে তার প্রভুর জন্যে যুদ্ধ করা (It is the duty of the liege-man to fight for his liege-lord) এই যুগের সাহিত্যে একজন অভিজাত জায়গীরদার ব্যক্তি হইতেছেন সমাজের কেন্দ্রস্থল। আর সব লোক তাঁহার সেবার জন্য নিযুক্ত হয়। এই যুগে অভিজাত শ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গীদ্বারা জগৎকে দেখা হয়। যে সাহিত্যে আমরা এই যুগের চিত্র পাই এবং যে-সাহিত্য এই দৃষ্টিভঙ্গীতে লেখা হয় সেই সাহিত্যকে আমরা সামন্ততন্ত্রীয় যুগের সাহিত্য বলিয়া নির্দেশ করিব।

এক্ষণে আমরা পরবর্ত্তী কালের বিষয় অনুসন্ধান করিব। সামন্ততন্ত্রীয় সভ্যতা ও রাষ্ট্র ভাঙ্গিয়া দিয়া বুর্জ্জোয়া বা ব্যবসায়ী শ্রেণী রাষ্ট্রে ও সমাজে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে। এই সময় হইতে Nationalism বা ‘জাতীয়তা’ রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জন্যই এই যুগকে বুর্জ্জোয়া-ডেমোক্র্যাটিক যুগ বলা হয়। এই যুগে ব্যবসায়ীগণ ‘মহাজনী’ সভ্যতা (Capitalist Civilisation) বিস্তার করিয়া প্রাচীন সভ্যতাকে বিধ্বংস করে। এই যুগে বুর্জ্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকই হয় সমাজের কেন্দ্রস্থল। ইহাদের দৃষ্টিভঙ্গীতেই জগৎকে দেখা হয়। ফরাসী বিপ্লবের পরে সেই দেশের সাহিত্য এবং আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের সাহিত্য ইহার প্রকৃত নিদর্শন। এই অভিজাত সভ্যতার বিপক্ষে প্রথম অভিযান দেখিতে পাই ফরাসী বিপ্লবের সময়ে লেখা বোমারথিসের ‘ফিগারো' নামক নাটক। একজন অভিজাতকে সম্বোধন করিয়া ফিগারো বলিতেছেন,“মশিয়ে- কাউণ্ট, তুমি জগতের জন্য কি করেছ?— কেবল একজন অভিজাতের ঘরে জন্ম নেবার সুবিধেটা গ্রহণ করেছ, আর সেইজন্য সমাজের সব দ্বারই তোমার প্রবেশের জন্য বিমুক্ত। অন্যপক্ষে আমি একজন গরীব বুদ্ধিজীবী, আমি জানিনা কি উপায়ে আমি গ্রাসাচ্ছাদন করব!” এই সময়েই আবে শিয়ে তাঁহার বিখ্যাত পুস্তিকা্‌ —‘তৃতীয় ষ্টেট্‌ (মধ্যবিত্ত শ্রেণী) কি?'—প্রকাশ করেন। তাতে তিনি বলেন যে তৃতীয় ষ্টেই (মধ্যবিত্ত শ্রেণী) সব। এতদ্বারাই বুর্জ্জোয়া শ্রেণীর দর্শনশাস্ত্র ও জগতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী নির্দ্ধারিত হয়।

এই সময় থেকে ফ্রান্সের সাহিত্যকে 'বুর্জ্জোয়া' সাহিত্য বলা হয়। অবশ্য ইহার মধ্যেও ভাবের দিক দিয়া বিভাগ্‌ আছে *[]। আমেরিকায় স্বাধীনতা পাইবার পর হইতে বুর্জ্জোয়া সাহিত্য সৃষ্ট হয়। আর ইংলণ্ড ও জার্ম্মানীতে সভ্যতা ধীরে ধীরে ক্রমবিকশিত হওয়ার ফলে প্রাচীন সভ্যতা ও ‘মহাজনী’ সভ্যতা সমাজে একীভূত হইয়াছে। সেই জন্যেই এই দুই দেশের সাহিত্যে একটা বিপ্লবের দ্বারা বিভাগ সৃষ্টি হয় নাই। যে সব দেশ বা রাষ্ট্র, রাজা বা অভিজাত দ্বারা শাসিত সে সব দেশে যে একটা খাঁটি বুর্জ্জোয় সাহিত্যের বিকাশ হইয়াছে তাহা বলা যায় না, যদিও তথায় একটা জনসাহিত্যের সৃষ্টি নিশ্চয়ই হইয়াছে।

তৎপরে আসে প্রোলেটারীয় যুগ। এই যুগে শ্রমজীবী শ্রেণীসমূহ রাষ্ট্রের পরিচালনা করিবে এবং প্রোলেটারীয় দৃষ্টিভঙ্গীর দ্বারা জগৎ নিরীক্ষিত হইবে। যে-সাহিত্যে এই দৃষ্টিভঙ্গী প্রতিফলিত হয এবং এই শ্রেণীর আদর্শের নির্দ্দেশ থাকে, তাহাকে প্রোলেটারীয় সাহিত্য বলা যায়। এই শ্রেণীর সাহিত্য কেবল একমাত্র রুযেই বিকাশ পাইতেছে। অবশ্য এইখানে ইহাও বক্তব্য যে এই সব বিভাগীয় সাহিত্যকে একটী নিদ্দিষ্ট বাঁধাধরা সর্ত্তের (category) মধ্যে ফেলা যায় না। আজকাল পৃথিবীর অনেক স্থলেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকদের জীবনী লইয়া সাহিত্য লেখা হইতেছে এবং এই সাহিত্যকে 'জন' (people's) সাহিত্যও বলা যাইতে পারে কিন্তু খাঁটি বর্জ্জোয়া সাহিত্য বলা যাইতে পারে না। অন্যদিকে বিগত ১৯১৪ সালের যুদ্ধের পূর্ব্বে জার্ম্মানী এবং অন্যান্য দেশে সোস্যালিস্টগণ প্রোলেটারীয়েটজীবনী ও আদর্শ নিয়া সাহিত্য লিখিতে আরম্ভ করেন এবং তাহাদের জীবনের সর্ব্ব বিষয় নিয়া পৃথক আন্দোলন আরম্ভ করেন। এই সময় থেকেই তাঁহাদের দ্বারা Proletarian Literature ও Proletarian Culture এই দুইটা কথার সৃষ্টি হয়। কিন্তু 'মহাজনী' সভ্যতার আওতা হইতে শ্রমজীবী-সংস্কৃতি ও শ্রমজীবী-সাহিত্য গড়িয়া ওঠা সম্ভবপর নয়। সেই জন্য এই সাহিত্যকে আমরা গণশ্রেণীর (masses) সাহিত্য বা গণ-সাহিত্য বলিতে পারি, কিন্তু প্রোলেটারীয় সাহিত্য বলা সমীচীন হইবে না। অতি প্রাচীন কাল হইতে আধুনিক কাল পর্য্যন্ত যে সাহিত্য রচিত হইয়াছে তাহা ওই সামন্ততন্ত্রীয় যুগের অন্তর্গত বলিতে হইবে। বর্তমানে বাংলা ও হিন্দী সাহিত্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনের বর্ণনা দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু ভারতীয় সাহিত্য এখনও জমীদারের ফটক পার হয় নাই। প্রাচীন সভ্যতার আওতা হইতে ভারতে একটা বুর্জ্জোয়া শ্রেণী সম্পূর্ণভাবে বিরর্ত্তিত হয় নাই বা রাষ্ট্রে ও সমাজে তাহার আধিপত্যও প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। কাজেই একটা যথার্থ বুুর্জ্জোয়া সাহিত্যের উদয় এখন সম্ভবপর নয়। ইহার মধ্যে, যে সকল তরুণ তরুণীদের কার্যকলাপ নিয়া গল্প বা পুস্তক প্রকাশিত হইতেছে তাহাও বিলাতীর নকল মাত্র। তবে বাংলার গ্রামের পরাণ মণ্ডল ও পাঁচু শেখ অতি দীন ও অলক্ষিত ভাবে বাংলা সাহিত্যের এককোণে দাঁড়াইয়াছে বটে; কিন্তু তাঁহারা এখনও উপেক্ষার বস্তুই হইয়া আছেন। অন্য পক্ষে রামদীন ও রহিম হিন্দী সাহিত্যের পূরোপুরি একটা বড় স্থান অধিকার করিয়া ফেলিয়াছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে বাঙ্গালায় প্রসাদজী ও প্রেমচাঁদজীর মত গণের জীবনী সম্বন্ধে শক্তিশালী লেখক উদয় হয় নাই।

কেবল কতকগুলি ভাবদ্বারাই সমাজ ও তাহার সাহিত্য সৃষ্ট হয় না। রূপ ও রস যুগে যুগে এবং জাতিতে জাতিতে বিভিন্ন আকার ধারণ করে! ইতিহাসের অর্থনীতিক ব্যাখ্যানুযায়ী (Historical Materialism) সমাজপটে যে প্রকারের পরিবর্ত্তন দেখা যায় সাহিত্যেও তাহার প্রতিবিম্ব পাওয়া যায়। আর যে আদর্শ সমাজকে আরও অগ্রগমনশীলতার দিক নির্দ্দেশ করে তাহাকে 'প্রগতিশীল' বলা হয়। প্রগতি আপেক্ষিক বস্তু। সামন্ততন্ত্রীয় সভ্যতা হইতে বুর্জ্জোয়া সভ্যতা আপেক্ষিকভাবে অগ্রসর বলিয়া এই সভ্যতাকে 'প্রগতিশীল’ বলা হয়। আবার যাহরা সমাজতন্ত্রবাদকে মানবের পক্ষে আরও প্রগতিশীল বলিয়া মনে করেন তাঁহারা প্রোলেটারীয় সভ্যতা ও সাহিত্যকে আরও প্রগতিশীল বলিয়া মনে করেন। শেষ কথা এই যে একটা অনুষ্ঠান (phenomenon) প্রণিধানের বস্তু যে, বর্তমানে ভারতীয় সাহিত্যে বুর্জ্জোয়া শ্রেণীর বিকাশ অপেক্ষা প্রোলেটারীয় শ্রেণীর বিকাশের সংবাদ বেশী পাওয়া যাইতেছে।

  1. ৺প্রেমচাঁদজী Feudal Civilisation এর এই পরিভাষা সৃষ্টি করিয়াছেন।
  2. K. T. Butler-'History of the French Revolution' p. 276-286 Vol. II.