সিরাজদ্দৌলা (অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়)/যুদ্ধযাত্রা

ষড়্‌বিংশ পরিচ্ছেদ।

যুদ্ধযাত্রা।

 যুদ্ধযাত্রার প্রয়োজনীয় আয়োজন শেষ হইলে, ১২ই জুন কলিকাতার ফৌজ চন্দননগরের ফৌজের সহিত মিলিত হইল, এবং চন্দননগরের দুর্গ রক্ষার জন্য দেড়শত মাত্র জাহাজীগোরা পশ্চাতে রাখিয়া, ১৩ই জুন সমগ্র বৃটিশবাহিনী যুদ্ধযাত্রা করিল।[১] গুলি গোলা বারুদ লইয়া ‘গোরা লোগ’ দুইশত নৌকায় আরোহণ করিল, ‘কালা আদ্‌মীরা’ গঙ্গাতীরের বাদশাহী রাস্তার উপর দিয়া পদব্রজে অগ্রসর হইতে লাগিল।

 কলিকাতা হইতে মুর্শিদাবাদ অনেক দূরের পথ। পথপার্শ্বে হুগলী এবং কাটোয়ার দুর্গে, অগ্রদ্বীপ এবং পলাশির ছাউনীতে,—নবাবের সিপাহীসেনা বসিয়া রহিয়াছে। তাহারা বীরোচিত কর্ত্তব্য সম্পাদন করিলে, হয়ত হুগলীর নিকটেই ইংরাজেরা সসৈন্যেই পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইতেন। কিন্তু কেহই ইংরাজের গতিরোধ করা দূরে থাকুক, একবার বীরের ন্যায় সম্মুখসমরে অগ্রসর হইবারও আয়োজন করিল না। ইতিহাসে কেবল এই পর্য্যন্তই দেখিতে পাওয়া যায় যে, হুগলীর ফৌজদার ইংরাজের যুদ্ধজাহাজ দেখিয়া এবং ক্লাইবের তর্জ্জন গর্জ্জন শুনিয়া নিতান্ত ভীত হইয়া পথ ছাড়িয়া দিয়াছিলেন।

 ইংরাজেরা যখন চন্দননগর আক্রমণ করেন, মহারাজ নন্দকুমার তখন হুগলীর ফৌজদার! তিনি সে যাত্রা কি জন্য ইংরাজের পথ ছাড়িয়া দেন, সে কথা নবাবের কর্ণগোচর হইয়াছিল। এবার সেইজন্য তিনি হুগলীতে আর একজন নূতন ফৌজদার পাঠাইয়াছিলেন।[২] এই সকল বাঙ্গালী ফৌজদার বা তাহাদের কালা সিপাহীরা যে কিরূপ বীরবিক্রমে অস্ত্রচালনা করিত, তাহা ইংরাজের অজ্ঞাত ছিল না। তথাপি তাহারা কোন্ সাহসে দেড়শত মাত্র জাহাজী-গোরা পশ্চাতে রাখিয়া সসৈন্যে সম্মুখে অগ্রসর হইয়াছিলেন? তাঁহারা কি জানিতেন না যে হুগলীর ফৌজদার পৃষ্ঠদেশ আক্রমণ করিলে ইংরাজের কিরূপ সর্ব্বনাশ হইতে পারিত? ইংরাজদিগের নিশ্চিন্ত

রণযাত্রা, ফৌজদারের সযত্ন-পালিত তুষ্ণীম্ভাব, চন্দননগরে দেড়শত মাত্র গোরার অবস্থান,—এই সকল বিষয় একত্র বিচার করিলে মনে হয় যে, মুর্শিদাবাদের গুপ্তমন্ত্রণা হয়ত হুগলীর ফৌজদারকে ও কর্ত্তব্যভ্রষ্ট করিয়াছিল!

 এদিকে বিদ্রোহের সন্ধান পাইয়া, মীরজাফরকে কারারুদ্ধ করিবার সংকল্প পরিত্যাগ করিয়া, সিরাজদ্দৌলা তাঁহাকে স্বপক্ষে টানিয়া আনিবার আয়োজন করিতে লাগিলেন। অনেকে বলেন যে, সিরাজদ্দৌলার কাপুরুষত্বের ইহাই উৎকৃষ্ট নিদর্শন।[৩] কিন্তু সে সময়ে মীরজাফরের সঙ্গে শক্তিপরীক্ষা করিতে বসিলে, মুর্শিদাবাদেই পলাশির যুদ্ধাভিনয় সুসম্পন্ন হইত। সিরাজদ্দৌলা স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ব্যাকুল; সুতরাং কেহ কেহ মীরজাফরকে কারারুদ্ধ করিবার জন্য উত্তেজনা করিলেও সিরাজদ্দৌলা সে কথায় কর্ণপাত করিলেন না। তিনি মীরজাফরের সকল অপরাধ ক্ষমা করিয়া রাজসদনে আহ্বান করিয়া পাঠাইলেন। সিরাজদ্দৌলা ভাবিয়াছিলেন যে, ইস্‌লামের নামে, আলিবর্দ্দির নামে, স্বাধীনতা রক্ষার্থ সকল কথা বুঝাইয়া বলিতে পারিলে, হয়ত এখনও মীরজাফরের মতিভ্রম দূর হইতে পারে! বিদ্রোহী দল সিরাজদ্দৌলাকে বিলক্ষণ ভয় করিতেন। তাঁহারা দেখিলেন যে, সকল কথা প্রকাশ হইয়া গিয়াছে, সুতরাং নবাবের সঙ্গে পুনরায় সখ্যসংস্থাপন করাই সুপরামর্শ। তাঁহারা সেইরূপ উপদেশ দিতে ত্রুটি করিলেন না, কিন্তু মীরজাফরের সাহসে কুলাইল না;—তিনি আর রাজসদনে উপস্থিত হইলেন না![৪]

 অবশেষে আত্মাভিমান তুচ্ছ করিয়া স্বয়ং সিরাজদ্দৌলা ১৫ জুন শিবিকারোহণে মীরজাফরের বাটীতে উপনীত হইলেন![৫] এবার মীরজাফরকে বাহির হইতে হইল, এবার তাঁহাকে অধোবদনে সলজ্জনয়নে স্নেহভাজন কুটুম্বের মুখের সকরুণ ভর্ৎসনাবাক্য শ্রবণ করিতে হইল; এবং সিরাজদ্দৌলা যখন ক্ষমা প্রদর্শন করিয়া, ঈশ্বরের নামে, মহম্মদের নামে, মুসলমান গৌরবের নামে, আলিবর্দ্দির বংশমর্য্যাদার দোহাই দিয়া মীরজাফরকে ফিরিঙ্গীর স্নেহবন্ধন ছিন্ন করিবার জন্য পুনঃ পুনঃ উত্তেজনা করিতে লাগিলেন, তখন সকল কথাই স্বীকার করিতে হইল! তখন আবার ‘কোরাণ’ আসিল।[৬] আবার মুসলমানের পরম পবিত্র ধর্ম্মগ্রন্থ মাথায় লইয়া, অন্নদাতা মুসলমান নরপতির নিকট মুসলমান সেনাপতি জানু পাতিয়া শপথ করিলেনঃ—ঈশ্বরের নামে, পয়গম্বরের নামে ধর্ম্মশপথ করিয়া অঙ্গীকার করিতেছি, যাবজ্জীবন মুসলমান সিংহাসন রক্ষা করিব, প্রাণ থাকিতে বিধর্ম্মী ফিরিঙ্গীর সহায়তা করিব না!”

 পরমেশ্বরের পবিত্র নামে সিরাজদ্দৌলার সকল সন্দেহ দূর হইয়া গেল। হিন্দু যে ব্রাহ্মণের পাদস্পর্শ করিয়া মিথ্যা কথা বলিতে পারে, সে কথা সিরাজদ্দৌলা বিশ্বাস করিতেন না;—সেই জন্য একবার উমিচাঁদের ধর্ম্মশপথে প্রতারিত হইয়াছিলেন! মুসলমান যে কোরাণ মাথায় লইয়াও মিথ্যা কথা বলিতে সাহস করিবে, তাহা বিশ্বাস করিতে না পারিয়া, সিরাজদ্দৌলা আবার প্রতারিত হইলেন! লোকে বলে সিরাজ পরমপাষণ্ড ধর্ম্মাধর্ম্ম বিচারবিহীন উচ্ছৃঙ্খল যুবক; তাহা হইলে হয়ত তাঁহার পক্ষে ভাল হইত। তাহা হইলে হয়ত হিন্দু ব্রাহ্মণের পাদস্পর্শ করিয়া, ফিরিঙ্গী বাইবেল চুম্বন করিয়া, এবং মুসলমান কোরাণ মাথায় লইয়া, তাঁহাকে যাহা ইচ্ছা তাহাই বিশ্বাস করাইতে পারিতেন না। যাঁহারা স্বস্ব ধর্ম্মের দোহাই দিয়া জানিয়া শুনিয়া প্রতারণা করিয়াছিলেন, তাঁহাদের কথা একেবারে চাপা পড়িয়া গিয়াছে;—আর তাঁহাদের শপথে সিরাজদ্দৌলা প্রতারিত হইলেন কেন, সেই অপরাধে তাঁহাকে ইতিহাসের তীব্র গঞ্জনা সহ্য করিতে হইতেছে![৭]

এইরূপে গৃহবিবাদের মীমাংসা করিয়া সিরাজদ্দৌলা সসৈন্যে পলাশিক্ষেত্রে সমবেত হইবার আয়োজন করিতে লাগিলেন। আশা হইল যে, মীরজাফর যখন ফিরিঙ্গীর সহায়তা করিতে অস্বীকার,—তখন এবার আর ইংরাজের নিস্তার নাই। সেই সাহসে সেনাদল আহ্বান করিলেন; কিন্তু তাহারা বিদ্রোহী দলের প্ররোচনায় বেতন না পাইলে যুদ্ধযাত্রা করিতে অসম্মত হইল। সুতরাং তাহাদিগের পূর্ব্ববেতন পরিশোধ করিয়া সিরাজদ্দৌলা নিশ্বাস ফেলিবার অবসর পাইলেন।[৮] রায় দুর্ল্লভ, ইয়ারলতিফ, মীরজাফর, মীরমদন, মোহনলাল, এবং ফরাসীসেনানায়ক সিনফ্রেঁ এক এক বিভাগের সেনাচালনার ভার গ্রহণ করিয়া সিরাজদ্দৌলার সহগামী হইলেন।

 গুপ্তচরের গোপনানুসন্ধানভয়ে, মীরজাফরের পক্ষে সর্ব্বদা ইংরাজশিবিরে সংবাদ প্রেরণ করা কঠিন হইয়া উঠিল। তিনিই সকল চক্রান্তের চক্রধর,—সুতরাং তাঁহার প্রত্যুত্তরের প্রত্যাশায় ক্লাইব প্রতিদিন তাঁহাকে পত্র লিখিতে লাগিলেন। কিন্তু ১৩ই জুন সোমবার হইতে ১৬ই জুন বৃহস্পতিবার পর্য্যন্ত চারি দিনের মধ্যে একখানিও প্রত্যুত্তর পাওয়া গেল না। ওয়াট্‌স্ সাহেব ১৪ই জুন ইংরাজশিবিরে মিলিত হইয়া তৎক্ষণাৎ মীরজাফরের নিকট একজন বিশ্বাসী হরকরা পাঠাইয়া দেন; দুর্ভাগ্যক্রমে সে হরকরাও ফিরিয়া আসিল না। ক্লাইব অগত্যা কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া সসৈন্যে পাটুলিতে ছাউনী ফেলিলেন।

 মীরজাফর ১৬ই জুন বৃহস্পতিবারে ক্লাইবকে প্রথম পত্র লিখিলেন; সে পত্র শুক্রবারে পাটুলির ছাউনীতে ক্লাইবের, হস্তগত হইল। মীরজাফর যে সিরাজের সঙ্গে মৌখিক সখ্যসংস্থাপন করিতে বাধ্য হইয়াছেন, সে কথা তিনি নিজেই লিখিয়া পাঠাইলেন; কিন্তু তিনি যে, তজ্জন্য ইংরাজের সহায়তা করিয়া আত্মপ্রতিশ্রুতি পালন করিতে কিছুমাত্র ত্রুটি করিবেন না, সে কথাও লিখিয়া পাঠাইলেন। কিন্তু এই পত্র পাইয়াও ক্লাইব সম্মুখে অগ্রসর হইতে সাহস পাইলেন না। সম্মুখে কাটোয়া-দুর্গ; সে দুর্গের সেনানায়ক কিয়ৎক্ষণ কৃত্রিম যুদ্ধ করিয়া ইংরাজের নিকট পরাজয় স্বীকার করিবেন, এইরূপ কথা ছিল।[৯] সে কথা কতদূর সত্য তাহা পরীক্ষা করিবার জন্য, শনিবার প্রাতঃকালে ২০০ গোরা এবং ৩০০ সিপাহী লইয়া মেজর কুট কাটোয়াভিমুখে অগ্রসর হইলেন, ক্লাইব সসৈন্যে পাটুলিতেই অবস্থান করিতে বাধ্য হইলেন। অজয় এবং ভাগীরথী সম্মিলনস্থানে কাটোয়াদুর্গ সুসংস্থাপিত; বর্গীয় হাঙ্গামার কাটোয়া-দুর্গ বীরবিক্রমের লীলাভূমি বলিয়া চিরবিখ্যাত। এবার কিন্তু দুর্গদ্বারে যুদ্ধ হইল না; কিয়ৎক্ষণ যুদ্ধাভিনয়ের পর নবাবসেনা স্বহস্তে চালে চালে আগুন ধরাইয়া দিয়া দুর্গ হইতে পলায়ন করিল! এই যুদ্ধাভিনয়ে নবাব-সেনা যতটুকু বীরবিক্রম প্রকাশ করিয়াছিল, তাহাতেই মেজর কূট ভাবিয়াছিলেন যে, সেনাপতি হয় ত পূর্ব্বসংকল্প পরিত্যাগ করিয়া যুদ্ধ করিতেই বদ্ধপরিকর হইয়াছেন। যাহা হউক কাটোয়া নির্মক্ষিক হইলে, ক্লাইব ধীরে ধীরে সসৈন্যে কাটোয়া অধিকার করিয়া লইলেন, নাগরিকগণ প্রাণভয়ে পলায়ন করায় এত চাউল ইংরাজের হস্তগত হইল যে, তাহাতে দশসহস্র সিপাহী বৎসর ভরিয়া উদরপূরণ করিতে পারিত। সুতরাং ক্লাইব সসৈন্যে কাটোয়ায় শিবির-সন্নিবেশ করিলেন।

 মীরজাফরের প্রথম পত্রেই ক্লাইবের মন আন্দোলিত হইয়া উঠিয়াছিল ওয়াট্‌স্ সাহেবের পূর্ব্বপ্রেরিত গুপ্তচর ফিরিয়া আসিয়া সন্দেহ আরও ঘনীভূত করিয়া তুলিল। আরও সংবাদ সংগ্রহের জন্য ক্লাইব দুই দিন পর্য্যন্ত সতৃষ্ণনয়নে পথ চাহিয়া রহিলেন।[১০] কখন বিশ্বাস কখন অবিশ্বাসে আন্দোলিত হইয়া স্বভাবতই মনে হইতে লাগিল যে, গুপ্তসন্ধিপত্র হয়ত সিরাজদ্দৌলারই কৌশলমাত্র; হয়ত সখ্যসংস্থাপন করিয়া মীরজাফর পূর্ব্বকথা একেবারেই বিস্মৃত হইয়াছেন। সম্মুখে ভাগীরথী তরল তরঙ্গ-ভঙ্গে সমুদ্রাভিমুখে প্রবাহিত; এখনও বর্ষাসমাগম হয় নাই, সুতরাং এখনও নদীস্রোত উত্তীর্ণ হইবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু হায়! পরপারে উত্তীর্ণ হওয়া যত সহজ, পুনরায় প্রত্যাবর্ত্তন করা কি তত সহজ কথা? ক্লাইব হতবুদ্ধি হইয়া পড়িলেন। তাঁহার ইতিহাসবিখ্যাত বিপুল বাহুবল এবং অলৌকিক রণকৌশল সহসা যেন শিথিল হইয়া পড়িল![১১] কেবল মনে হইতে লাগিল—কি কুক্ষণেই সসৈন্যে যুদ্ধযাত্রা করিয়াছেন, কি কুলগ্নেই বিদ্রোহী দলের মুখের দিকে চাহিয়া গায়ে পড়িয়া সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে খড়্গধারণ করিয়াছেন! উত্তরকালে মহাসভায় সাক্ষ্য দিবার সময়েও এই দিনের কথা স্মরণ করিয়া ক্লাইব স্বীকার করিয়া গিয়াছেন যে, তাঁহার কেবলই ভয় হইতে লাগিল, “যদি পরাজিত হই তবে আর একজনও সে পরাজয়-কাহিনী বহন করিবার জন্য প্রত্যাগমন করিবার অবসর পাইবে না।”[১২]

 সোমবার অপরাহ্ণে মীরজাফরের নিকট হইতে এক সঙ্গে দুইখানি পত্র আসিয়া উপনীত হইল;—একখানি ক্লাইবের নামে অপরখানি উমরবেগের নামে।[১৩] এই উভয় পত্রে সন্দেহ অপসারিত হইল; কিন্তু বৃটীশ-শিবিরে অশ্বসেনা না থাকায় ক্লাইবের আশঙ্কা প্রবল হইয়া উঠিল।[১৪] তিনি শুনিয়াছিলেন যে, বর্দ্ধমানের মহারাজের সঙ্গে সিরাজদ্দৌলার সদ্ভাব নাই; সুতরাং অনন্যোপায় হইয়া তাঁহাকে লিখিয়া পাঠাইলেন যে, “আপনার অশ্বসেনা যদি এক সহস্রেরও অধিক না থাকে, তথাপি তাহা লইয়াই আমাদিগের সহিত মিলিত হউন।”

 এই পত্র লিখিয়াও ক্লাইবের দুশ্চিন্তা দূর হইল না। তাঁহার আদেশে ২১ জুন মঙ্গলবার সামরিক সভার অধিবেশন হইল। ক্লাইব বলিয়া গিয়াছেন যে, “ইহাই তাঁহার জীবনের প্রথম এবং শেষ সামরিক সভা”।[১৫] বিংশতি বৃটীশবীরকেশরী চিন্তাক্লিষ্ট বিষণ্নবদনে কাটোয়ার শিবিরে সামরিক সভায় উপবেশন করিলেন। ইঁহাদের নিকট ক্লাইব কি মর্ম্মে প্রশ্ন উপস্থিত করিয়াছিলেন, তাহা লইয়া ইতিহাসে বিলক্ষণ মতভেদ দেখিতে পাওয়া যায়।

 মহাসভায় সাক্ষ্য দিবার সময়ে ক্লাইব বলিয়া গিয়াছেন তিনি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন যে, এখনই নদীপার হইয়া বাহুবলে সিরাজদ্দৌলাকে আক্রমণ করাই সঙ্গত, কি আরও সংবাদ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করাই সঙ্গত।”[১৬]

 ক্লাইবের চরিতাখ্যায়ক বলেন যে, ক্লাইবের যে সকল কাগজপত্র তাঁহার হস্তে সমর্পিত হইয়াছিল, তন্মধ্যে এই সামরিক সভার কার্য্যবিবরণী ছিল। তাহাতে প্রশ্নটি এইরূপ লিখিত আছেঃ— “বর্ত্তমান অবস্থায় অন্যের সাহায্য না লইয়া আত্মবলেই নবাবশিবির আক্রমণ করিব, কি দেশীয় শক্তির সহায়তা না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করিব?”[১৭]

 এই বিষয়ে মহাসভায় সাক্ষ্য দিবার সময়ে সামরিক সভার অন্যতম সভ্য মেজর কুট (ইনি পরবর্ত্তী ইতিহাসে স্যর আয়ারি কূট নামে প্রসিদ্ধ) বলিয়া গিয়াছেন যে, প্রশ্নটা এইরূপঃ—“এরূপ ক্ষেত্রে এখনই নবাবের সহিত সংঘর্ষ উপস্থিত করাই কর্ত্তব্য, কি বর্ষাশেষ না হওয়া পর্যন্ত কটোয়ায় আত্মরক্ষা করিয়া আমাদের সাহায্যার্থ মহারাষ্ট্রসেনাদলকে আহ্বান করা কর্ত্তব্য;[১৮] সমসাময়িক ইতিহাসলেখক অর্ম্মিও এই মর্ম্মেই লিখিয়া গিয়াছেন।[১৯]

 ক্লাইবের কাগজপত্রে ‘দেশীয় শক্তির’ সাহায্য লওয়ার কথা দেখিতে পাওয়া যায়, অর্ম্মির ইতিহাসে এবং মেজর কূটের জবানবন্দীতে স্পষ্ট করিয়া “মহারাষ্ট্রশক্তির” নামোল্লেখই দেখিতে পাওয়া যায়। অথচ ক্লাইবের জবানবন্দীতে ইহার নাম গন্ধও নাই,—কেবল সংবাদ সংগ্রহের জন্য আরও কিছুকাল অপেক্ষা করা কর্ত্তব্য কি না তাহাই রহিয়াছে কেন? ক্লাইবের জবানবন্দীতে এরূপ স্থূল বিষয়ে ভুল হইল কেন?[২০]

 ক্লাইব যখন মহাসভায় সাক্ষ্যদান করেন, তখন আর তিনি লেপ্টেনেণ্ট কর্ণেল ক্লাইব নহেন; তখন তিনি পলাশিবীর (ব্যারণ) লর্ড ক্লাইব, ইংলণ্ডের নরনারীর নিকট “নবাব” ক্লাইব নামে পরিচিত। তখন কি পূর্ব্বকথা বিস্মৃত হইয়া গিয়াছিলেন? কেহ কেহ বলিতে পারেন যে, অনেক দিনের পর এত কথা স্মরণ রাখা সম্ভব নহে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, যেখানেই আত্মগৌরব বৃদ্ধি করা বা আত্মাপরাধ ক্ষালন করা প্রয়োজন, ঠিক সেখানে আসিয়াই ক্লাইবের স্মৃতিশক্তি অবসন্ন হইয়া পড়ে,—ইহাই তাঁহার জবানবন্দীর প্রধান দোষ!

 যিনি একবার স্বার্থসাধনের জন্য জানিয়া শুনিয়া জাল জুয়াচুরি করিয়াছিলেন, এবং আরও শতবার সেরূপ ক্ষেত্রে সেরূপ কার্য্য করিতে প্রস্তুত ছিলেন, তিনি যে আত্মগৌরব বর্দ্ধন বা আত্মাপরাধ ক্ষালনের জন্য সময়ান্তরে মহাসভার ন্যায় মহাধর্ম্মাধিকরণের সম্মুখে জানিয়া শুনিয়া এক আধটা নিতান্ত আবশ্যকীয় কথা এদিক ওদিক করিয়া বলেন নাই, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হইবার উপায় নাই।

 আলিনগরের সন্ধির পূর্ব্বে ক্লাইব যখন সংবাদ পাইলেন যে, সিরাজদ্দৌলার কামানগুলি এখনও আসিয়া পৌঁছে নাই, তখন তিনি নিশারণে শক্রসংহারের জন্য সর্ব্বাগ্রে নাচিয়া উঠিয়াছিলেন। চন্দননগর আক্রমণের পূর্ব্বে যখন সংবাদ পাইলেন যে, মাদ্রাজ হইতে সেনাবল আসিতেছে এবং সিরাজদ্দৌলা পাঠানভয়ে জড়সড় হইয়াছেন, তখন সদস্যদিগের ইতস্ততঃ থাকিলেও ক্লাইব সগর্ব্বে বলিয়া উঠিয়াছিলেন যে, “এখনই চন্দননগর ধ্বংস করিব।” উমরবেগ যখন সন্ধিপত্র আনিয়া দিল তখনও তিনি প্রবল প্রতাপে সেনাদল লইয়া পলাশির দিকে ছুটিয়া বাহির হইয়াছিলেন। কিন্তু কাটোয়ায় পদার্পণ করিয়া তাঁহার অন্তরাত্মা আর সেরূপ উৎসাহ প্রদর্শন করিতে পারিল না। পাছে কনিষ্ঠ বীরপুরুষগণ একবাক্যে যুদ্ধযাত্রার অভিমত প্রদান করিয়া তাঁহাকে বিপদ্‌গ্রস্ত করেন, সেই আশঙ্কায় ক্লাইব সমরনীতি লঙ্ঘন করতঃ প্রথমেই আপন মত ব্যক্ত করিয়া বলিলেন, “যেখানে রহিয়াছি, সেখানেই থাকি, ইহাই আমার মত;—আপনাদের মতামত কি?”[২১] এই কথায় দ্বাদশজন সেনানায়ক “তথাস্তু” বলিলেন।[২২] কিন্তু সর্ব্ব কনিষ্ঠ মেজর কূট প্রতিবাদ করিয়া বলিয়া উঠিলেনঃ—“আপনারা বড়ই ভুল বুঝিতেছেন। সেনাদলের এখনও বিশ্বাস আছে যে তাহারা নিশ্চয়ই জয়লাভ করিবে। শত্রুর সম্মুখে আসিয়া থতমত খাইয়া বসিয়া পড়িলে, তাহারা অবসন্ন হইয়া পড়িবে; কিছুতেই আর উত্তেজিত করা যাইবে না। মসীয় লা অবসর পাইলেই নবাবশিবিরে মিলিত হইবেন;—তখন নবাবের বাহুবলও বাড়িবে, মন্ত্রণাও উৎসাহলাভ করিবে। তাহারা আমাদিগকে বেষ্টন করিয়া কলিকাতায় পলায়নের পথ অবরোধ করিবে। আপনারা এখন যাহা দেখিতে পাইতেছেন না এমন কত নূতন বিপদে পড়িয়া বিনাযুদ্ধেই হয়ত পরাজিত হইবেন। আসুন এখনই অগ্রসর হই, নচেৎ এখনই পলায়ন করি,—যেখানে আছি, এখানে বসিয়া থাকা অসম্ভব।” ছয়জন সেনানায়ক এই মত পোষণ করিলেন। তাঁহাদের কথা কাজে লাগিল না; ক্লাইবের মতই প্রবল হইল; যুদ্ধযাত্রা স্থগিত রহিল![২৩]

 মহাসভায় সাক্ষ্য দিবার সময়ে ক্লাইব বলিয়া গিয়াছেন যে, ‘কেবল মেজর কুট এবং কাপ্তান গ্রাণ্ট ভিন্ন আর আর সকলেই যুদ্ধের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করিয়াছিলেন; তাঁহাদের কথা শুনিতে হইলে কোম্পানি বাহাদুরের সর্ব্বনাশ হইত;—আমি সেই জন্যই তাহা অবহেলা করিয়াছিলাম।’[২৪]

 ক্লাইব যে নিজেই সর্ব্বাগ্রে যুদ্ধের বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করিয়া অন্যান্য সেনানায়কদিগের মত প্রকাশের সহায়তা করিয়াছিলেন, তাঁহার জবানবন্দীতে কিন্তু সে কথার উল্লেখ নাই। জবানবন্দী পড়িয়া বরং ইহাই মনে হয় যে, অধিকাংশ লোকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে কেবল তিনিই কোম্পানীর কল্যাণের জন্য যুদ্ধের সপক্ষে দাঁড়াইয়াছিলেন। এখানেও কি তাঁহার স্মৃতিশক্তি সহসা শিথিল হইয়া পড়িয়াছিল? মেকলে বলেন যে, ‘অহিফেণ-প্রসাদে তন্দ্রামগ্ন থাকিয়া ক্লাইব মধ্যে মধ্যে চমকিয়া উঠিতেন![২৫] তাঁহার এই সকল স্থূলেভুলগুলি কি অহিফেণ প্রসাদাৎ,—না স্মৃতিভ্রংশবশাৎ,—সে কথার আর এখন মীমাংসা করিবার উপায় নাই!

 কিজন্য সমগ্র সমর-সভার যন্ত্রণা উপেক্ষা করিয়া সহসা ক্লাইবের শৌর্য্যবীর্য্য পুনরাগত হইয়াছিল, সে বিষয়েও নানারূপ মতভেদ দেখিতে পাওয়া যায়! অর্ম্মি বলেন যে, ‘সভাভঙ্গ হইবামাত্র নিকটস্থ বনান্তরালে প্রবেশ করিয়া একঘণ্টাকাল গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থাকিয়া ক্লাইব নিজেই বুঝিয়াছিলেন যে অগ্রসর না হওয়াই মূর্খতা! তিনি সেইজন্য শিবিরে আসিয়াই আদেশ দিলেন যে, প্রত্যুষেই গঙ্গাপার হইতে হইবে।”[২৬]

 ষ্টুয়ার্ট এবং মেকলে অর্ম্মির পদানুসরণ করিয়া এই কথাই লিখিয়া গিয়াছেন। এই বর্ণনায় যাহা কিছু অসঙ্গতি ছিল তাহার পাদপূরণ করিয়া বাঙ্গালী কবি ধ্যানস্তিমিতলোচন ইংরাজ সেনাপতির সম্মুখে ইংলণ্ডের সৌভাগ্য লক্ষ্মীকে সশরীরে হাজির করিয়া দিয়াছেন![২৭]

 ক্লাইবের চরিতাখ্যায়ক স্যর জন ম্যাল্‌কন ধ্যানের অংশটুকু ছাড়িয়া দিয়া, অবশিষ্ট কথাগুলি গ্রহণ করিয়াছেন। কিন্তু ক্লাইবের বিশ্বস্ত পার্শ্বচর স্ক্রাফট্‌ন্ লিখিয়া গিয়াছেন যে ‘২২শে জুন মীরজাফরের পত্র পাইয়াই ক্লাইব ঘুরিয়া বসিয়াছিলেন, এবং তাঁহার আদেশে ২২শে জুন সায়ংকাল ৫ ঘটিকার সময়ে বৃটিশবাহিনী গঙ্গাপার হইয়াছিল!’[২৮]

 কাহার কথা সত্য? কোন্ তারিখে কোন্ সময়ে, কি জন্য ক্লাইবের মতপরিবর্ত্তন সংঘটিত হইয়াছিল? তিনি নিজে বলিয়া গিয়াছেন যে, ‘কাহারও উপদেশে মত পরিবর্ত্তন হয় নাই, তিনি বিশেষ বিবেচনা করিয়া নিজে নিজেই মতপরিবর্ত্তন করিয়াছিলেন। তাঁহার বিশ্বস্ত পার্শ্বচর একথা অস্বীকার করিয়া গিয়াছেন। কাহার কথা বিশ্বাস করিব?

 ষ্টুয়ার্ট ম্যাল্‌কম এবং মেকলে সকলেই অর্ম্মিলিখিত অদিম ইতিহাস হইতে প্রমাণ গ্রহণ করিয়াছেন। অর্ম্মির ইতিহাসে প্রকাশ যে ২২শে জুন অপরাহ্ন ৪ ঘটিকার সময়ে ক্লাইব মীরজাফরের নিকট হইতে সত্যসত্যই পত্র পাইয়া তৎক্ষণাৎ তাহার উত্তর প্রদান করেন।[২৯]

 ক্লাইবের প্রত্যুত্তরে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, তিনি ২২শে জুন অপরাহ্ন পর্যন্তও যুদ্ধযাত্রা করেন নাই; তখনই পত্র পাইবার পর যুদ্ধযাত্রা করিতে কৃতসংকল্প হইয়া মীরজাফরকে সংবাদ পাঠাইয়াছিলেন। মীরজাফরের উপদেশ না পাইয়া ইংরাজেরা সসৈন্যে কাটোয়ায় অপেক্ষা করিতেছিলেন; এবং তজ্জন্য সমরসভার অধিবেশন হইয়াছিল। মীরজাফরের উপদেশ পাইবামাত্রই যে আবার ইংরাজসেনাপতির শৌর্য্যবীর্য্য জাগরিত হইয়া উঠিয়াছিল, ইহাই প্রমাণীকৃত হইতেছে! ক্লাইব নিজেও স্বীকার করিয়া গিয়াছেন যে, “সমরসভার অধিবেশন শেষ হইলে, ২৪ ঘণ্টার বিশেষ গবেষণার পরে তাঁহার মতপরিবর্ত্তন সংঘটিত হয়; এবং ২২শে জুন অপরাহ্ণ ৫ ঘটিকার সময়ে সেনাদল গঙ্গাপার হয়।”[৩০] সুতরাং স্ক্রাফ্‌টন যাহা লিখিয়া গিয়াছেন তাহা সত্য হইয়া দাঁড়ায়; অথচ ক্লাইব স্পষ্টাক্ষরে বলিয়া গিয়াছেন যে, “কাহারও কথায় কি উপদেশে তাঁহার মত পরিবর্ত্তন হয় নাই।”

 এই সকল অকাট্য প্রমাণের বিরুদ্ধে অর্ম্মি ২২শে জুন প্রত্যুষে গঙ্গাপার হইবার কথা লিখিয়া স্ক্রাফ্‌টনের উক্তি খণ্ডন ও ধ্যানযোগে ক্লাবের মত পরিবর্ত্তন হইবার কথা সমর্থন করিবার চেষ্টা করিয়া গিয়াছেন। সেই জন্য তিনি লিখিয়া গিয়াছেন যে, “২১শে জুন এক ঘণ্টার ধ্যানযোগেই” ক্লাইবের দিব্য নেত্র প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিয়াছিল। মেকলে ইহারই পদানুসরণ করিয়া বাঙ্গালীর সত্যনিষ্ঠার কলঙ্করটনা করিতে লজ্জাবোধ করেন নাই।

 অর্ম্মির ন্যায় আর একজন সমসাময়িক লেখক ২১শে তারিখেই ক্লাইবের মতপরিবর্ত্তনের কথা লিখিয়া গিয়াছেন; কিন্তু তিনিও স্পষ্টই বলিয়াছেন যে, “এই দিবসেই সন্ধ্যাকালে মীরজাফরের পত্র আসিয়াছিল, এবং তাহাতেই ক্লাইব পরদিবস প্রত্যুষে গঙ্গাপার হইবার জন্য কৃতসংকল্প হইয়াছিলেন।”[৩১]

 আমরাই রাজবিপ্লব সংঘটনের মূল-কারণ। আমাদিগের মীরজাফর, আমাদিগের রায়দুর্ল্লভ, আমাদিগের জগৎশেঠ,—আমাদিগের স্বদেশীয় রাজকর্ম্মচারিগণের বিশ্বাসঘাতকতাই সিরাজদ্দৌলার সর্ব্বনাশের মূল; তজ্জন্য চিরদিন আমাদিগকে ইতিহাসের নিকট শতগঞ্জনা সহ্য করিতে হইবে। কিন্তু দেশীয় লোকের দলে উমিচাঁদ ছিল, বিদেশীয় বণিকের দলেও ক্লাইব ছিল,—এই ঐতিহাসিক সত্য স্বীকার করিলে ন্যায়ের মর্যাদা অধিকতর সুরক্ষিত হয়! আলিনগরের সন্ধিসংস্থাপিত হইলে সিরাজদ্দৌলার মনস্তুষ্টির জন্য কর্ণেল ক্লাইব এক প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করিয়াছিলেন।[৩২]

 ক্লাইব কিরূপে এই অঙ্গীকার পালন করিয়াছিলেন, সে বিষয়ে তিনি মহাসভায় সাক্ষ্যদিবার সময়ে নিজেই বলিয়া গিয়াছেন। চন্দননগর আক্রমণ করা স্থির হইলে ক্লাইব আরও অগ্রসর হওয়ার কথা সদস্যগণকে পুনঃ পুনঃ বলিয়াছিলেন।[৩৩]

 ক্লাইবের এইরূপ অসরল ব্যবহার সর্ব্বথা নিন্দনীয় তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু ক্লাইব বাইবেলভক্ত সাধু খৃষ্টীয়ানের ন্যায় এক গণ্ডে চপেটাঘাত সহ্য করিয়া অন্য গণ্ড ফিরাইয়া দিলে; কিম্বা এদেশের লোক—হিন্দু এবং মুসলমান—“দিল্লীশ্বরো বা জগদীশ্বরো বা” বলিয়া মুসলমান সিংহাসন রক্ষা করিলে, ইংরাজ রাজশক্তি প্রতিষ্ঠা লাভ করিত না। চরিত্রহীনতায় রোমকসাম্রাজ্যের অধঃপতন হইয়াছিল, চরিত্রহীনতায় ভারত সাম্রাজ্যের অভ্যুদয় হইয়াছে; ভগবানের ইচ্ছায় হলাহল হইতেও অমৃতের উৎপত্তি হয় বলিয়া যাঁহাদের বিশ্বাস, তাঁহারা আমাদের ইতিহাসে সে বিশ্বাসের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রত্যক্ষ করিতে পারেন!

  1. It consisted of 650 European infantry, 150 artillary men, including 50 Seamen, 2100 Sepoys, and a small number of Portuguese, making a total of something more than 3000 men.—Thornton's History of the British Empire, vol i. 233.
  2. The Nawab entertaining supicions of Nun Coomar, had lately sent a new Governor to Hoogly, who threatened to oppose the passage of the boats, but the twenty gunship coming up and anchoring before his fort, and a menacing letter from Colonel Clive, deterred him from that resolution.—Orme, vol, ii. 164. এই ভয়প্রদর্শনপূর্ণ পত্রখানি বর্ত্তমান নাই। সেই ক্লাইব, সেই উমাচরণ এবং সেই পত্র;—পূর্ব্বের ন্যায় এবারও যে সহজে কার্য্যোদ্ধার হয় নাই, তাহা কে বলিবে।
  3. Thornton's History of the British Empire vol.i. 232.
  4. At the same time several of the Nabob's Officers, on whose friendship Jaffier relied, were exhorting him to reconciliation; to which he seemingly agreed, but, either through suspicion or scorn, refused to visit the Nabob.—Orme, vol. ii. 167.
  5. This interview was on the 15th June-Orme, ii. 167.
  6. “The Koran was introduced, the accustomed pledge of their falsehood.” -Scrafton's Reflections, p. 85.
  7. If the Subah erred before in abandoning the French, he doubly erred now, in admitting a suspicious friend.- Ive's Journal.
  8. The Nawab's troops seeing in the impending warfare no prospect of plunder, as in the sacking of Calcutta, and much more danger, clamorously refused to quit the city until the arrears of their pay were discharged; this tumult lasted three days; nor was it appeased until they had obtained a large distribution of money. Orme, vol. ii. 169,
  9. The Governor of this fort had promissed to surrender after a little pretended resistance. Orme, vol. ii. 168.
  10. Orme vol. ii. 169.
  11. Before him lay a river over which it was easy to advance, but over which, if things went ill, not one of his little band would ever return. On this occasion, for the first and for the last time, his dauntless spirit, during a few hours, shrank from the fearful responsibility of making a decision. - Macaulay's Lord Clive.
  12. Had a defeat ensued, “not one man would have returned to tell it.” - First Report of the Select Committee of the House of Commons, 1772, p. 149
  13. মীরজাফরের বিশ্বাসী অনুচর উমরবেগ জমাদার প্রতিভূ-স্বরূপ ক্লাইবের শিবিরেই অবস্থান করিতেছিলেন।
  14. Much confounded by this perplexity, as well as by the danger of comming to action without horse, of which the English had none, he wrote the same day to the Raja of Burdwan who was discontented with the Nabob, inviting him to join them. with his cavalry, even were they only a thousand. - Ormc, Vol. ii. 170. বাস্তবিক অশ্বসেনার অভাবে এরূপ চিন্তাকুল হওয়াই স্বাভাবিক। কেবল ‘পলাশির’ যুদ্ধকাব্যে কবিকল্পনা এই চিন্তা দূর করিয়া লিখিয়াছে যে,—

    “যদি ডুবি একা নাহি ডুবিবে সকল
    কি পদাতি, অশ্বারোহী, আমার সহিত।”

  15. একথা কি সত্য? চন্দননগর আক্রমণের সময়ে এবং পলাশির আম্রবণে আরও দুইবার সমরসভার অধিবেশনের কথা ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায়।
  16. Whether they should cross the river and attack Soorajoo Dowla with their own force alone, or wait for furtlier intelligence? Clive's Evidence, First Report p. 149.
  17. Whether in our present situation, without assistance, and on our own bottom, it would be prudent to attack the Nabob, or whether we should wait till joined by one country power? —Sir John Malcolm.
  18. Whether in those circumstances it would be prudent to come to an immediate action with the Nabob, or fortify themselves (English) where they were, and remain till the monsoon was over. and the Marhattas could be brought into the country to join us. Coote's Evidence, First Report, p. 153.
  19. Whether the army should immediately cross in to the island of Casimbazar, and at all risks attack the Nabob; or whether, availing themselves of the great quantity of rice, which they had taken at Kutwa, they should maintain themselves there during the rainy season, and in the meantime invite the Marhattas to enter the Province to join them?—Orme vol. ii. 170.
  20. This differs from the accounts given by Coote and Orme, principally in the substitution of a general reference to the aid of some native power in place of the particular to the Marhattas; but it differs materially from Clive's own statement to the Select Committee of the House of Commons. —Thornton's History of the British Empire, vol. i. 239.
  21. Contrary to the forms usually practised in councils of war, of taking the voice of the youngest officer first and ascending from this to the opinion of the president, Colonel Clive gave his own oppinion first.- Orme, ii. 170.
  22. On the same side voted Majors Kilpatrick. Archibald Grant, Captains Waggoner, Corneille, Fischer, Gaupp, Rumbold, Palmer, Molitor, Jennings and Parshaw. Major Eyre Coote took a view totally opposed to theirs. He was supported in his view by captains Alexander Grant, Cudmorc Muir, Carstairs Campbell and Armstrong. Col. Malleson's Decisive Battles of India. p. 58. Ibid
  23. Ibid
  24. His Lordship observed, this was the only Council of war that he ever held and if he had abided by that Council, it would have been the ruin of the East India Company. —Clive's Evidence.
  25. Macaulay's Lord Clive.
  26. He retired alone into the adjoining grove, where he remained near an hour in deep meditation, which convinced him of the absurdity of stopping where he was. - Orme, ii. 171.
  27. চিন্তা অবসন্ন মনে কিছুক্ষণ পরে,
    নিমীলিতনেত্রে পুনঃ বসিলা আসনে;
     * * *

    সবিস্ময়ে সেনাপতি দেখিলা তখনি,
    জ্যোতির্বিমণ্ডিতা এক অপূর্ব্ব রমণী।

  28. In this doubtful interval the majority of our officers were against crossing the river and everything bore the face of disappointment; but on the 22nd. of June, the Colonel received a letter from Meer Jaffier, which determined him to hazard a battle; and he passed the river at five in the evening-Scrafton.
  29. মীরজাফরের পত্র।

    That the Nabob had halted at Muncara, a village six miles to the south of Cossimbazar, and intended to entrench and wait the event at that place, where Jaffir proposed that the English should attack him by surprise, marching round by the inland part of the island.

    ক্লাইবের উত্তর।

    That he should march to Plassey without delay, and would the next morning advance six miles further to the village of Daudpoor; but if Meer Jaffier did not join him there, he would make peace with the Nabob.
  30. After about twenty-four hours mature consideration, his Lordship said, he took upon himself to break through the opinion of the Council, and ordered the army to cross the river; and what he did upon that occasion, he did without receiving any advice from any one.—First Report.
  31. However, the same evening Colonel Clive recived a second message from Meer Jaffir, assuring him of his due performance of the articles mentioned in the treaty, but informing him that he was so surrounded with spies, as to be obliged to act with greatest caution. The intelligence soon determind the Colonel to push on.—Ive's Journal.
  32. I, Colonel Clive, Sabut Jung Bahauder, Commander of the English Land-Forces in Bengal, do solemnly declare in the presence of God and our Saviour, that there is peace between the Nabob Serajah Dowla, and the English. They, the English will inviolably adhere to the Articles of the Treaty made with the Nabob: That as long as he shall observe his Agreement, the English will always look upon his enemies as their enemies, and whenever called upon will grant him all the assistance in their power.-12 February, 1757.Treaties, Engagements and Sunnds,vol. i. 10.
  33. That after Chandernagore was to be attacked, he repeatedly said to the Committee, as well as to others, that they could not stop there, but must go further: that having established themselves by force, and not by the consent of the Nabob, he would endeavour by force to drive them out again. That they had numberless proofs of his intention; and his Lordship said, he did suggest to Admiral Watson and Sir George Pocock, as well as to the Committee, the necessity of a revolution.-Clive's Evidence —First Report, 1772.