সিরাজদ্দৌলা (নাটক)/তৃতীয় অঙ্ক/তৃতীয় গর্ভাঙ্ক

তৃতীয় গর্ভাঙ্ক

মুর্শিদাবাদ—নবাব-অন্তঃপুরস্থ ঘসেটী বেগমের কক্ষ

ঘসেটী বেগম ও জহরা

জহরা। তোমার অর্থ আমি অপব্যয় করি নি, তোমার অর্থে সেনা সঞ্চয় করেছি। ইংরাজ-সৈন্যকে দেবার জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন, সে অর্থ ল’য়ে আমি এখনি মীরজাফরের নিকট যাবো। রাজ্যে রাজা প্রজা, আমীর ওম্‌রাও—সকলে বিরূপ।
ঘসেটী। না না—তুমি কি বল্‌ছ? দুরন্ত মোহনলাল, মীরমদন থাক্‌তে আমার শঙ্কা দূর হয় না। অনেকেই সিরাজের পক্ষ; শুন্‌ছি, রাণী ভবানীর সিরাজের বিরুদ্ধাচরণ করবার মত নাই,—সে এক জন রাজ্যের প্রধান, তার অনেক লোক বল। আর রাজা-প্রজা সকলেই বা সিরাজের বিপক্ষ হবে কেন?
জহরা। তুমি জান না—জান না, তবে আর ঘূর্ণীবায়ুর ন্যায় ঘুরে বেড়াচ্ছি কেন? তবে আর তোমার নিকট সিরাজের মোহরাঙ্কিত কাগজ নিয়েছি কেন? রাণী ভবানীর কন্যা তারাকে সিরাজের মোহরাঙ্কিত প্রেমলিপি দিয়েছি, সিরাজের তস্‌বীর তাকে দিয়ে এসেছি, তারা প্রাণত্যাগ কর্‌তে চেয়েছে; রাণী ভবানী আর সিরাজের পক্ষ নয়। রাজা, প্রজা—সকলের ঘরে, ঐরূপ সিরাজের মোহর-অঙ্কিত কাগজ দেখিয়েছি। তাতে লেখা আছে’ যে সিরাজ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবে, যে তার পাপ-তৃষা নিবারণ জন্য কুলকামিনী ল’য়ে আস্‌বে। সকলে অগ্নিবৎ হ’য়ে আছে। ক্লাইবকে সিরাজের নামাঙ্কিত পত্র দিয়েছি! সে পত্রে লেখা—সিরাজ, ফরাসী সেনাপতি বুসী সাহেবকে, ইংরাজ বিরুদ্ধে আস্‌বার জন্য আহ্বান কর্চ্ছে। দাও দাও, তোমার মুক্তার মালা দাও, অনেক অর্থের প্রয়োজন; জগৎশেঠ কৃপণ, অধিক অর্থ ব্যয় কর্‌তে চায় না; বিস্তর অর্থের প্রয়োজন। সে নগদ অর্থ, তোমার গুপ্ত ধনাগার হ’তে ল’য়ে যাওয়া বড় কঠিন, সেখানে নবাব সন্দেহ ক’রে পাহারা বসিয়েছে। আজই প্রয়োজন, বিলম্ব করো না, মুক্তার মালা দাও।
ঘসেটী। আন্‌ছি।
জহরা। যাও যাও—ল’য়ে এসো।

ঘসেটী বেগমের কক্ষান্তরে প্রবেশ

হোসেন হোসেন, ক্ষমা করো, আর বিলম্ব নাই, সিরাজের রক্ত আকণ্ঠ পান ক’রো, আমি এনে তোমার কবরে দেব। যেখানে তোমার রক্তপাত হয়েছে, সেইখানে সিরাজের রক্তপাত হবে, হস্তীপৃষ্ঠে তোমার ন্যায় সিরাজের দেহ নগর ভ্রমণ কর্‌বে,—যেমন তোমার মৃতদেহের পশ্চাৎ পশ্চাৎ কেঁদে কেঁদে ফিরেছিলেম, তেম্‌নি উল্লাসে নৃত্য কর্‌তে কর্‌তে সিরাজের দেহের পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাবো! আর বিলম্ব নাই—আর বিলম্ব নাই!

ঘসেটী বেগমের পুনঃ প্রবেশ

ঘসেটী। এই নাও। (মুক্তার মালা লইয়া জহরার গমনোদ্যম) শোনো—শোনো—
জহরা। না—না—তিলমাত্র অবসর নাই!
প্রস্থান
ঘসেটী। ওঃ কবে এ পুরে হাহাকার উঠ্‌বে, কবে আমিনা বুক চাপ্‌ড়ে কাঁদবে, কবে লুৎফউন্নিসার চক্ষের জলে—আমার প্রাণ শীতল হবে, ওঃ শিরায় শিরায় অগ্নি—শিরায় শিরায় অগ্নি।
প্রস্থান