দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক
মুর্শিদাবাদ—নবাব-অন্তঃপুর
আলীবর্দ্দী-বেগম ও সিরাজদ্দৌলা
বেগম। |
কহ বৎস, এ কি বার্ত্তা শুনি?
প্রাচীন অমাত্যগণে করি অপমান,
উচ্চ পদে স্থাপি নীচজনে
করিতেছ রাজকার্য্য সমাধান’
ছিল যারা সিংহাসনে স্তম্ভের স্বরূপ,
বিরূপ তোমার আচরণে;
ভালমন্দ না করি বিচার,
যেই কার্য্য যেইক্ষণে উঠে তব মনে,
সেই কার্য্য সেই দণ্ডে কর সমাধান।
ভয়ে ভীত রাজ্যে যত অমাত্য প্রধান,
যোগ্য উপদেশ দানে না করে সাহস।
শুনি মতি-স্থৈর্য্য নাহিক তোমার।
আকুল অন্তর মম এ জন-প্রবাদে।
|
সিরাজ। |
মাতা, অহেতু গঞ্জনা দেহ মোরে।
কহ, হিতাকাঙ্ক্ষী কোন্ অমাত্য প্রধান,
করিয়াছি তার অপমান?
কোন্ হীন জনে উচ্চ স্থানে করেছি স্থাপন?
রাজ্যের অবস্থা তুমি জাননা জননী!
স্বার্থপর অমাত্য সকল,
করে সবে স্বার্থ উপাসনা;
কারো নাহি মঙ্গল কামনা,
চলে জনে জনে নিজ স্বার্থ অনুসারে।
সেনাপতি মীরজাফর,
দিবারাত্র মন্ত্রণা তাহার,
কি সুযোগে সিংহাসন করিবে গ্রহণ।
রাজা রাজবল্লভের জান আচরণ,
পুত্র কৃষ্ণদাসে, কলিকাতা ইংরাজ সকাশে
অর্থ সহ করেছে প্রেরণ।
সতত মন্ত্রণা যত অমাত্য মিলিয়ে
কি উপায়ে সাধিবে আমার পদচ্যুতি।
কভু বা গোপনে—
ষড়ষন্ত্র সওকতজঙ্গ সনে,
কভু দানে ইংরাজে উৎসাহ
উপেক্ষিতে নবাবী প্রভাব।
মাত্র বন্ধু মোহনলাল আর মীরমদন,
যে দোঁহারে স্বার্থপর অমাত্যনিচয়
নীচ বলি করিছে ঘোষণা।
প্রভুভক্ত কৃতজ্ঞ দু’জন,
চক্ষুঃশূল সবাকার এই হেতু।
|
বেগম। |
|
সিরাজ। |
হায়, এসময় কোথা মাতামহ!
আছিলাম মেরুর পশ্চাৎ,
ঝঞ্ঝাবাত না স্পর্শিত কায়,
এবে অসহায় জনপূর্ণ অরণ্য মাঝারে!
হাসি পাশে লুক্কায়িত অসি,
চারিদিকে নিধন কামনা মম,
বঙ্গেশ্বর একেশ্বর সংসার-কান্তারে!
|
বেগম। |
কায়মনোবাক্যে করো কর্ত্তব্য পালন,
সার কর ঈশ্বর-চরণ,
ফলাফল অর্পিয়ে তাঁহায়।
স্বর্গগত নবাবের আদর্শের পরে
স্থির দৃষ্টি করহ স্থাপন।
হায়, বালক বিরুদ্ধে হেন কুটীল মন্ত্রণা!
|
সিরাজ। |
চিন্তা দূর কর মাতা নবাব-মহিষী,
দুর্জ্জনের মনস্কাম কভু না পূরিবে।
|
বেগম। |
বিদ্রোহ সময়—
শুন বৎস উপদেশ মম—
ভূতপূর্ব্ব নবাবের জানো আচরণ,
হ’লে শত দোষে দোষী,
করিতেন মার্জ্জনা তাহারে।
দৃষ্টান্তে তাঁহার করো মার্জ্জনা সবায়;
রাজকার্য্যে পুনঃ সবে করহ স্থাপিত;
মার্জ্জনার সম উচ্চ নাহি রাজনীতি।
|
সিরাজ। |
তব আজ্ঞা হবে না লঙ্ঘন।
প্রতিগৃহে আপনি যাইয়ে
করিব সম্মান সবে।
কিন্তু তাহে না ফলিবে ফল;
কুটীলতা কুটীল না করিবে বর্জ্জন।
আদাব জননী!
|
বেগম। |
|
উভয়ের প্রস্থান