সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড)/জীবজন্তর কথা/মানুষমুখো
(পৃ. ৩৬৫)
বাঁদরের মুখের চেহারা যে অনেকটা মানুষের মতো তা দেখলেই বোঝা যায়। বিশেষত ওরাং ওটাং শিম্পাঞ্জী প্রভৃতি বুদ্ধিমান বাঁদরদের চাল-চলন আর মুখের ভাব দেখলে মানুষের মতো আশ্চর্য সাদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। কোন কোনো বাঁদর আছে তাদের মাথায় লোমগুলি দেখলে ঠিক টেরিকাটা মানুষের মাথার মতো মনে হয়, যেন কেউ চিরুনি দিয়ে চুল ফিরিয়ে সিথে কেটে দিয়েছে। এক ধরনের বাদরের যেরকম গোঁফের বাহার খুব কম মানুষেরই সেরকম আছে। তার বাড়ি আমেরিকায়। ছোট্টো আধ হাত উঁচু বাঁদরটি, কিন্তু ঐ গোঁফের জন্যে তার মুখে একটা গাম্ভীর্যের ভাব দেখা যায়। এদের রঙ কালো, হাতে লম্বা-লম্বা নখ থাকে, তাই দিয়ে কাঠবেড়ালীর মতো গাছে খাচিয়ে ওঠে। এই জাতীয় বাঁদরের নাম টামারিন্! এদের সকলের এরকম গোঁফ থাকে না; গুঁফো বাঁদরদের এপারার টামারিন্ অর্থাৎ সম্রাট টামারিন্ বলে। তা সম্রাটের মতো চেহারাই বটে। সম্রাটের প্রিয় খাদ্য হচ্ছে কলা। গুঁফো বাঁদরের পর দাড়িওয়ালা বাঁদর, তার নাম হচ্ছে কালো সাকী। তারও বাড়ি আমেরিকায়। সে দেশের লোকেরা এই বাঁদরকে শয়তান বাঁদর বলে। এরকম অন্যায় নাম দেবার কোনই কারণ পাওয়া যায় না, কারণ এদের মেজাজ যেমন ঠাণ্ডা, স্বভাবও তেমনি নিরীহ। দাড়ির বহর যতই হোক-না কেন, আসলে এরা ভীতুর একশেষ। মানুষের কোনো অনিষ্ট করা দূরে থাক কাছে কোথাও মানুষ আছে জানতে পারলে এরা তার ত্রিসীমানা ছেড়ে পালায়। এদের কোনোরকমে পোষ মানানো যায় না। ধরে আনলে অতি অল্প দিনের মধ্যে মরে যায়। আর-এক জাতের সাকী বাঁদর রয়েছে। তার গায়ের রঙ খুব হালকা তাই একে সাদা সাকী বলা হয়। তার চেহারা যেন আরো উদ্ভট গোছের। দাড়িও অন্য রকমের। এইরকমের গালপাট্টা দেওয়া চেহারা আর বিকট ধেব্ড়ানো মুখ দেখে বুঝবার জো নেই যে, বেচারার স্বভাবটি মোটেও তার চেহারার মতো নয়।
বুড়ো-ধাড়ী সিন্ধুঘোটকদের চেহারাও অনেক সময় খুব মাতব্বর গোছের মানুষের মতো মনে হয়। গোঁফ-দাড়ি, মাথায় টাক, সবই বেশ মানিয়ে যায়, কেবল হাতির মতো ঐ প্রকাণ্ড সাঁত দুটোতেই সব মাটি করে দেয়।