সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/অসম্ভব কাজ
অসম্ভব কাজ
কর্তাবাবু বেজায় রেগে বলেন ডেকে চাকরে
—“যখন তখন অমন কেন তাকিয়ে থাকিস্ হাঁ ক’রে?
বিদ্ঘুটে তোর মূর্তিখানা দেখতে নারি দু’চোখে,
বাড়াবাড়ি করবি তবে তাড়িয়ে দেব ছুঁচোকে।
ব্যাটা যেন রাজ-পুত্তুর, বাদশাহী চাল বড় যে,—
ইচ্ছা মতন কাজ করবি কেবল নিজের গরজে?
শুয়ে ব’সে মাইনে খাবি, হতচ্ছাড়া, বেয়াড়া,
যেম্নি স্বভাব, তেম্নি ব্যাটার ভুতের মত চেহারা।
গরুর গোয়াল নোংরা থাকে, হাত দিস না ঝাড়ুতে;
সাত-সকালে উঠে কেন জল দিস্ না গাড়ুতে?
ছাদের উপর ফাট ধরেছে, পারিস না তা সারাতে;
তোর মত ছাই হদ্দ-কুঁড়ে কে আছে এই পাড়াতে?
আগাছাতে ভর্তি বাগান, পড়ছে না কি নজরে?
চটাং ক’রে গালের উপর চড় লাগাব সজোরে,
তখন ব্যাটা বুঝবি মজা, ঠ্যালার নামটি বাবাজি,
কাজ করতে ইচ্ছা না হয়, সমুখ থেকে যা পাজি।
বাসন মাজা, কাপড় কাচা, একটু যাওয়া বাজারে,
দুইটি বেলা রান্না শুধু, তামাকটুকু সাজা রে,
এই কাজেতেই দিন কেটে যায়? কেবল ফাঁকি, চালাকি?
দিন-রাত্তির আড্ডা মারিস্, শুন তে পাই না কালা কি?
হাজারো বার আজকে আমি বলেছিলাম দুপুরে—
ডিম পেড়ে আন্, ঝুড়ির মাঝে আছে তাকের উপুরে;
পাড়লি না ডিম লক্ষ্মীছাড়া, শুনলি না তা কিছুতে,
বল্ ব্যাটা কী জবাব দিবি? তাকাস কেন নীচুতে?
বল্ কেন ডিম পাড়লি নাকো, ছাড়ব নাকো এবারে,
খড়ম-পেটা করব ব্যাটা, রুখতে দেখি কে পারে!
কাঁচুমাচু মুখটি ক’রে বলে চাকর তারিণী,
“সব করেছি এই জীবনে, ডিম কখনো পাড়ি নি;
আমি তো আর হাঁস-মুর্গীর মতন কোনো প্রাণী না,
মানুষ হয়ে কেমন ক’রে ডিম পাড়ব জানি না॥”