সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/কিন্তু যদি কামড়াতো?
কিন্তু যদি কামড়াতো?
বর্ষাকালের মেঘলা-করা ঝাপসা নিঝুম সন্ধ্যাকাল,
ঝিল্লী-ডাকা পথটি দিয়ে যাচ্ছে বাড়ি মাণিকলাল।
ধোঁয়াট-ভরা জমাট আঁধার, মিশকালো ঈস্ চারধারে,
চলছে মাণিক অন্ধকারে, ভয়ের নাহি ধার ধারে।
হঠাৎ পায়ে কামড়ালো কি? কেউটে না হয় গোখরো সাপ!—
‘বাপ্ রে!’ বলে প্রাণের ভয়ে লাগায় তেড়ে একটি লাফ।
চক্ষে দেখে সরষের ফুল,—ঝিম্ঝিমিয়ে উঠলো শির,—
হায় রে, বুঝি প্রাণটা গেল,—এই না ভেবে চক্ষু স্থির।
চলতে গিয়ে টলতে সুরু, হায় রে একি সর্বনাশ,—
সাম নে যেন যম দাঁড়ালো,—মৃত্যু ভয়ে লাগলো ত্রাস।
দাওয়ায় এসে মাণিক শেষে পড়লো শুয়ে ধপ্ ক’রে—
“কামড়েছে সাপ, গেলুম, গেলুম”—চক্ষু বুজে রব করে।
ঠানদি কাঁদেন ডুকরে উঠে’—“ওরে আমার মাণিক রে—
এই বয়সেই পড়লি ঝরে, বাঁচলি না আর খানিক রে!”
বাপ-মা কেঁদে কুমড়ো গড়ান—“করলি কি তুই, হায় রে হায়,
কোলের মাণিক, বুক-জোড়া ধন, আয় রে ফিরে, আয় রে আয়!”
সবার চেয়ে আবেগভরা ক্ষান্ত-পিসির কান্নাটা—
“তুই গেলে কে বাস্বে ভালো আমার হাতের রান্নাটা।
আয় ফিরে আয় মাণিক ওরে, আয় ফিরে তুই চট্ করি’—
অনেক ক’রে বেঁধেছি আজ কুমড়ো-ডগার চচ্চড়ি।”
কান্না লাগায় আন্নাকালী পান্নালালের গিন্নী গো,—
“বাঁচলে মাণিক আজকে দেব পীরের দোরে শিন্নি গো।”
আসলো তখন বৈদ্যমামা, দেখলো সবই ঠিক ক’রে
পায়ের ক্ষত লক্ষ্য ক’রে উঠলো হেসে ফিক্ ক’রে।
বললে, “কোথায় সাপের কামড়? আচ্ছা বোকা মাণিকটা—
এই দ্যাখো না আট্কে আছে শিমুল-কাঁটা খানিকটা।”
কান্না সবার থামলো তখন, হাসলো মহানন্দে গো,
বললে পিসি—“আমার মনে হচ্ছিল তাই সন্দেহ।”
আন্নাকালী হাসলো তখন সাম্লে নিয়ে কান্নাটা,
বললে “তবে যাই গো এখন, সারতে হবে রান্নাটা।”
ঠানদি বলেন, “ঠিক বলেছ, ভয় পাই নাই আমরা তো।—
মাণিক বলে চক্ষু খুলে—“কিন্তু যদি কামড়াতো?”