সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/কেলেঙ্কারি

কেলেঙ্কারি

বিয়ে-বাড়ি গিয়ে সেদিন মোদের পাড়ার কেষ্টা,
খেতে বসে কেলেঙ্কারি করলে রে ভাই শেষটা।
লুচির পালা শেষ করে ভাই, (ছিলাম মোরা সাক্ষী)
সাবড়ে’ দিল রাবড়ি সে যে পাঁচটি পোয়া পাক্কি।
কেষ্টা ছোঁড়া এমন পেটুক কেই বা সেটা জানতো?
করলো সাবাড় যতেক খাবার, ছানার গজা, পান্তো!
শেষে এমন হাল হ’ল তার, যতই করে চেষ্টা,
আসন ছেড়ে উঠতে নারে, পাড়ার পেটুক কেষ্টা।
নাক দিয়ে তার শ্বাস বহে না, মুখেতে নাই শব্দ,
বিয়ের ভোজে এসে এবার বেজায় হ’ল জব্দ।
ওজন বুঝে ভোজন নাহি করতে গিয়ে হায় রে,
কেষ্টা বুঝি শেষটা এবার যমের বাড়ি যায় রে!
পেটটা হ’ল ঢাকাই জালা, দম হ’ল তার বন্ধ,
শরীর যেন এলিয়ে এল, চক্ষু হ’ল অন্ধ।
ছাদ্‌না-তলায় বর বসেছে, হচ্ছে শুভদৃষ্টি,
এমন সময় হায় রে একি বাধলো অনাসৃষ্টি!
সবাই এল দৌড়ে ছুটে,—সবাই করে জট্‌লা,
বিয়ে-বাড়ির আসর জুড়ে উঠলো দারুণ হল্লা।

পুরুৎ-ঠাকুর চমকে উঠে’ থামায় বিয়ের মন্ত্র;
ঘামলো ভয়ে বরের বাবা, বরের দফা অন্ত।
রসুই-ঘরে বন্ধ হ’ল পোলাও লুচি রান্না,
মেয়ে-মহল শাঁখ থামিয়ে ডাক ছেড়ে দেয় কান্না।
থামলো উলু, হুলুস্থুলু লাগলো চারিপার্শ্বে,
কেষ্টা বুঝি মরলো এবার, বাঁচবে না কো আর সে।
হতাশ হয়ে মাথায় তাহার বাতাস করে লোকরা,
সবাই বলে, “তাই তো, বুঝি বাঁচলো না আর ছোকরা।”
গলির মোড়ে বৈদ্য ছিল প্রাচীন এবং বিজ্ঞ,
সল্লা ক’রে সবাই তারে আনলো ডেকে শীঘ্র।
দাড়ি নেড়ে, নাড়ী টিপে বলেন তিনি, “তাই তো,
দুইটি বড়ি খাইয়ে দিলে, আর কোনো ভয় নাই তো!”
কনের বাবা ভূষণবাবু ভীষণ রকম ঘাবড়ে’
বলেন,“ওহে কেষ্টপদ, ওরে আমার বাপ রে,
খাও তো যাদু ওষুধ দুটো, এক্ষুনি রোগ সারবে—
সহজভাবে হাঁটা-চলা করতে আবার পারবে।”
কোনো কথাই কেষ্টপদ-র কানেই নাহি যায় রে,
চোখ মেলে না, মুখ খোলে না, শ্বাস ছাড়ে না হায় রে!
নন্দরতন নন্দী সেথায় বন্ধু ছিল ওর সে,
কানের কাছে মুখটি নিয়ে বললে হেঁকে জোর-সে—
“ছোট্ট দু’টি মিষ্টি বড়ি খাও-না ভায়া, লক্ষ্মী,
বাঁচবে তুমি, বাঁচবো মোরা, ঘুচবে সকল ঝক্কি।”
কেষ্টপদ চক্ষু চেয়ে হাসলো এবার মুচকে,
বললে ধীরে ফিস্‌ফিসিয়ে কপাল ভুরু কুঁচকে,
“বড়ি খাবার জায়গা যদি থাকতো পেটে ভাই রে—
আরো দুটো পান্তা খেতাম, সন্দেহ তার নাই রে।”