সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/অসুরের জন্ম
অসুরের জন্ম
শ্রাবণ-সাঁঝে রাবণ রাজা দশমুণ্ডু নেড়ে
তানপুরাটি বাগিয়ে ধরে গান জুড়েছেন তেড়ে।
মনে তাঁহার ভাব জেগেছে, মানছে না আর বাধা,
বারে বারে গান গেয়ে যান “রে-রে মা-মা গাধা”;
শঙ্কা জাগে তান শুনে তাঁর, লঙ্কাপুরী কাঁপে,—
তাল-কানা সব রাক্ষসেরা পালায় লাফে-ঝাঁপে।
ধুম্রবর্ণ কুম্ভকর্ণ অঘোর ছিল ঘুমে,—
চম্কে উঠে উল্টে পড়ে খাটের থেকে ভূমে।
ভীষণ গানে বিভীষণের লাগলো কানে তালা,—
ঘাব্ড়ে গিয়ে ডিগবাজি খায় রাবণ রাজার শালা।
সূর্পণখা নাকী সুরে বললে, “থামো দাদা—”
রাবণ রাজা গেয়েই চলেন, “রে-রে মা-মা গা-ধা।”
রাবণ রাজার মামা ছিল বজ্রদংষ্ট্র নামে,
“মামা গাধা” শুনতে পেয়ে দেউড়ি-ধারে থামে।
রেগে-মেগে বললে গিয়ে পাকিয়ে গোঁফ-জোড়া,—
“আমায় বলিস্ গাধা বুঝি, ওরে ফাজিল ছোঁড়া?”
তানপুরাটি ছিনিয়ে নিয়ে মামা সে খিট্খিটে,
ধাঁই-ধপা-ধপ্ মারতে থাকে রাবণ রাজার পিঠে।
আচম্কাতে এম্নি ভাবে পেয়ে মামার সাজা—
হকচকিয়ে থেমে গেলেন গায়ক রাবণ রাজা।
সুর ছেড়ে তাই অসুর হ’লেন জব্দ হয়ে মনে;
এসব কথা কেউ জানে না, নাইকো রামায়ণে॥