সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/ঘুর্নি হাওয়ার গান

ঘূর্নি হাওয়ার গান

বন জুড়ে বন্ বন্ উড়ে চলে ঘূর্নি,
ঘুর ঘুর ঘুর-পাকে সব যায় চূর্ণি’;
ধুলোটের উৎসবে
মাতে ঝোড়ো ভূত সবে,
দিকে দিকে ওড়ে ঐ ধূলোময় উড়্‌নি;
উড়ে’ চলে ঘূর্নি।


বাঁশের ঝাড়ে শাঁই শাঁই শাঁই, কাঁপছে রে কার ধাক্কায়?
মাঠের ফাঁকায় ঝাউএর শাখায় কোন্ সে চপল পাক খায়?
ওলোট-পালট বনের বেণী, ঝরছে পাতা ঝুর ঝুর।
কাতার দিয়ে পাতার ঘুড়ি চলছে উড়ে’ দূর দূর।
এলোমেলো ডাল-পালা সব, ঘূর্নি ঝড়ের ঝট্‌কায়,
পল্‌কা যত শালের কলি আল্‌গা হয়ে ছট্‌কায়।
কৃষ্ণচূড়ার পাপ্‌ড়ি যত ছিট্‌কে পড়ে চারধার,
সজ নে গাছে ‘ঝুম্ ঝুম্ ঝুম্’ বাজনা বাজে বারবার;
উজাড় হ’ল আজকে যেন ফজলী আমের জঙ্গল,
উল্লাসে আজ ছুটল সেথায়, জুটল ছেলের দঙ্গল।


দুপুর বেলার আকাশখানা
তপ্ত যেন তাওয়া,
বন্‌বনিয়ে, শন্‌শনিয়ে
ছুটছে ঝোড়ো হাওয়া।
ছুটছে হাওয়া, ঝড়ের পথিক,
বুঝি না তার ভাব ও গতিক,—

সারা দুপুর ধ’রে কেবল
কোথায় আসা-যাওয়া?
কোন্ খেয়ালীর কোন্ সে খেলা,
কোন্ সে গীতি গাওয়া?

ঘূর্নি ঘুরে
দিন-দুপুরে মাঠটি জুড়ে’ জোর,
কেবল ঘোরে
খেয়াল ভরে, নাই কোনো কাজ ওর?
বাসার থেকে
উঠছে ডেকে উদাস কবুতর,
আসছে ভেসে
মাঠের শেষে ঝোড়ো কাকের স্বর।
কাঠ-বিড়ালী
ঘুমায় খালি, লাগল ঝড়ের ধুম,—
দম্‌কা বায়ে
গাছের ছায়ে ভাঙল এবার ঘুম।
প্রজাপতি
চপল অতি, হাল‍্কা ডানা তার,—
হাওয়ার তোড়ে
ছট্‌কে পড়ে, পথ মেলে না আর।
ফুলের ঝুরো
রেণুর গুঁড়ো হাওয়ায় ঝ’রে যায়,—
ঝাপটা-ঝড়ে
উপ্‌চে পড়ে মধুর কণা, হায়!
জলার কাছে
কলার গাছে আজকে সারাক্ষণ

দুপুর জুড়ে’
ঘুঘুর সুরে উদাস করে মন।
মাঠের পারে
ঘাটের ধারে  তাল-সুপারির সার,
ঝাঁক্‌ড়া মাথা
কোঁকড়া পাতা  নাড়ছে অনিবার।

হাওয়ায় কাঁপা চাঁপার ছায়ায় কঁপছে সবুজ ঘাস,
তারই পাশে ডাকছে ঝিঁঝি, শুনতে কি তা পাস?
থোপা-থোপা শ্বেতকরবী ঝরছে রে টুপ টুপ,
ছাতিম গাছের শুক্‌নো ডালে কাঠ-ঠোক রা চুপ।
বৈশাখী কোন্ বৈরাগী আজ গৈরিক-বাস গায়,
ঘূর্নি-পাকের ঘুরপাকেতে দিক্ কাঁপিয়ে যায়॥