সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/দুলাল পালের ছেলে

দুলাল পালের ছেলে

দুলাল পালের ছেলে ভুলাল সব কাজে তার ভুলটি—
কাল না যেতে টিকিট কিনে হাজির হ’ল কুলটি।
মাসির বাড়ি যেতে গয়ায়, কাশীর পানে ছুটলো,
মামার বাড়ি গিয়ে ভুলে চামার-বাড়ি উঠলো।
বই-বগলে এই তো সেদিন যাচ্ছিল সে ইস্‌কুল,
হারাধনের গোয়াল-ঘরে পৌছে গেল বিল্‌কুল।
মাঠের থেকে আনতে গরু ভুলাল গেল দৌড়ে,—
গলায় দড়ি বেঁধে আনে শ্যাম-গয়লার বৌ-রে।
রাতের বেলায় চোর ভেবে সে আচ্ছা করে পাকড়ে’,
অন্ধকারে দ্যায় ফাটিয়ে ঠাকুরদাদার টাক রে!
দুলাল বলে—“পুকুর থেকে মৎস্য ধরে আন্ তো।”
ভুলাল আনে মনের ভুলে কেউটে ধ’রে জ্যান্ত।
তামাক সেজে আনতে ভুলে—সপ্তাহেতে চারদিন,
মনের ভুলে হুঁকোর খোলে আনবে ঢেলে তার্পিন।
কুটুম এল,—দুলাল হেঁকে বললে তাদের সাম্‌নে—
“ছাগল কিনে আন্ তো ভুলাল, তিনটি টাকা দাম নে।”
ভুলাল গেল বাজার-মুখো,— কুটুম ব’সে থাক্ রে,
সন্ধ্যাবেলা আনলো ভুলাল কুকুর-ছানা পাকড়ে’।
খাবার সময় ঘুমায় ভুলাল, ব্যস্ত সবাই তাইতে;
ঘুমের বেলা মনের ভুলে ভুলাল চলে নাইতে।
গ্রীষ্মকালে লেপ-কম্বল জড়িয়ে রাখে গাত্রে;
ঠাণ্ডা জলে সাঁতার কাটে শীতের দিনে রাত্রে।
মনের ভুলে ঘরের চালে ভুলাল লাগায় অগ্নি,
বেড়াল ভেবে বোনকে ঠ্যাঙায়, চ্যাঁচায় ব’সে ভগ্নী।
ক্ষীরের সাথে নুন মেখে খায়, মাছের ঝোলে মিষ্টি,
পিঠের সাথে লঙ্কা মাখে,—নাই কিছুতেই দৃষ্টি।

সবাই বলে—কঠিন ব্যামো, কেমন ক’রে সারবে?
বৈদ্য হাকিম হদ্দ হ’ল; ওঝায় কত ঝাড়বে!


সেদিন ভারি মজার ব্যাপার,—দৈ ভেবে সে রাত্রে
চুনের ভাঁড়ে চুমুক দিল অন্ধকারে হাতড়ে’।
বাপ্‌,রে সে কি রাম-জ্বলুনি; উঃ কি ভীষণ তেষ্টা!
কেরোসিনের তেল নিয়ে সে ফেললে গিলে শেষটা।
রাম-ছাগলের নাচ দেখেছো? ম্যাড়ায় নাচে যেম্‌নি—
হাত-পা তুলে তিড়িং তিড়িং নাচলো ভুলাল তেম্‌নি।
সেদিন থেকে ধরলো ওষুধ, ব্যাপার হ’ল উল্টা,—
ভুলাল পালের রোগ সেরেছে, ভাঙলো মনের ভুলটা॥