সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/বিয়ে-বাড়ির বিভ্রাট
বিয়ে-বাড়ির বিভ্রাট
জমিদারের বাড়ি গিয়ে ভেট্কিলোচন খুড়ো
গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে এক ঘণ্টা পূরো।
জমিদারের মেয়ের বিয়ে, লোক জমেছে মেলা,
জট্লা করে দাঁড়ায় সবে, সাম্নে পিছে ঠেলা।
বড়বাবুর কড়া হুকুম, লাইন দিতে হবে,—
একে একে ভোজ-আসরে পারবে যেতে তবে।
গাঁট্টা খেয়ে-রদ্দা খেয়ে—গোঁত্তা খেয়ে পরে—
ভেট্কিলোচন খুড়ো এবার ঢুকলো এসে ঘরে।
বাসে-ট্রামে করেন যাঁরা নিত্যি আসা-যাওয়া
তাঁদের কাছে নতুন কি আর এ সব জিনিস খাওয়া।
যা-হোক এখন আসল খাবার পেলেই খুড়ো বাঁচে,
সত্যি এবার আসলো খুড়ো ভোজ-আসরের কাছে।
হঠাৎ এ কি—থামলো দেখি ভিড়টা হেথায় এসে,—
ব্যাপারটা কি? খ্যাঁটের ব্যাপার ভেস্তে না যায় শেষে!
এমন সময় টেকো নায়েব বললে এসে সবে—
“আঙুল তুলুন, আঙুল তুলুন, ছাপ লাগাতে হবে।
হাতে কালির ছাপ লাগালেই বসতে পাবেন খেতে;—
তা না হ’লে ভোজ-আসরে পাবেন না আর যেতে।
আবার এসে খেয়ে যাবেন? ধূলো দেবেন চোখে?—
কালি দেখেই ধরবো মোরা দুবার কা’রা ঢোকে।”
খুড়ো এবার বেজায় চ’টে মুখ-ভেংচে বলে
“চাই না খেতে এমন খাওয়া—যাচ্ছি আমি চ’লে,—
ভোটের কালি শুকায়নিকো,—ইয়ার্কি ফের করো,—
ন্যাংলাফ্যাচাং চ্যাংড়া যত হেথায় হ’লে জড়ো!
হাতের কালি রেখে এখন চুন-কালি দাও মুখে—
গলায় দড়ি দিয়ে মরো—আপদ যাবে চুকে।”
এমনি খানিক বক্বকিয়ে বলল খুড়ো তাকে;
হাতের কালি কেড়ে নিয়ে ঢাললো তাহার টাকে।
ব্যাপার দেখে’ ভিড়ের মাঝে গোল লেগে যায় ভারি;
চট্পটিয়ে চটি জুতো ফিরলে খুড়ো বাড়ি।