সেঁজুতি/পরিচয়
একদিন তরীখানা থেমেছিল এই ঘাটে লেগে,
বসন্তের নূতন হাওয়ার বেগে।
তোমরা সুধায়েছিলে মোরে ডাকি’
পরিচয় কোনো আছে না কি,
যাবে কোন্খানে।
আমি শুধু বলেছি, কে জানে।
নদীতে লাগিল দোলা, বাঁধনে পড়িল টান
একা বসে গাহিলাম যৌবনের বেদনার গান।
সেই গান শুনি’
কুসুমিত তরুতলে তরুণ তরুণী
তুলিল অশোক,
মোর হাতে দিয়ে তা’রা কহিল, এ আমাদেরি লোক।
আর কিছু নয়,
সে মোর প্রথম পরিচয়।
তারপরে জোয়ারের বেলা
সাঙ্গ হোলো, সাঙ্গ হোলো তরঙ্গের খেলা,
কোকিলের ক্লান্ত গানে
বিস্মৃত দিনের কথা অকস্মাৎ যেন মনে আনে
কনকচাঁপার দল পড়ে ঝুরে,
ভেসে যায় দূরে,—
ফাল্গুনের উৎসব রাতির
নিমন্ত্রণ লিখন পাঁতির
ছিন্ন অংশ তা’রা।
অর্থহারা।
ভাঁটার গভীর টানে
তরীখানা ভেসে যায় সমুদ্রের পানে।
নূতন কালের নব যাত্রী ছেলেমেয়ে
সুধাইছে দূর হতে চেয়ে
সন্ধ্যায় তারার দিকে
বহিয়া চলেছে তরণী কে।
সেতারেতে বাঁধিলাম তার,
গাহিলাম আরবার-
–মোর নাম এই ব’লে খ্যাত হোক,—
আমি তোমাদেরি লোক।—
আর কিছু নয়-
এই হোক শেষ পরিচয়॥
শান্তিনিকেতন
১৩ মাঘ, ১৩৪৩