পালের নৌকা


তীরের পানে চেয়ে থাকি পালের নৌকা ছাড়ি’,
গাছের পরে গাছ ছুটে যায়, বাড়ির পরে বাড়ি।
দক্ষিণে ও বামে
গ্রামের পরে গ্রামে
ঘাটের পরে ঘাটগুলো সব পিছিয়ে চলে যায়
ভোজবাজিরি প্রায়।


নাইছে যারা তারা যেন সবাই মরীচিকা
যেমনি চোখে ছবি আঁকে মোছে ছবির লিখা।
আমি যেন চেপে আছি মহাকালের তরী,
দেখছি চেয়ে যে খেলা হয় যুগযুগান্ত ধরি’।
পরিচয়ের যেমন শুরু তেমনি তাহার শেষ,
সামনে দেখা দেয়, পিছনে অমনি নিরুদ্দেশ।
ভেবেছিলুম ভুলব না যা, তাও যাচ্ছি ভুলে,
পিছু-দেখার ঘুচিয়ে বেদন চলছি নতুন কূলে।

পেতে পেতেই ছাড়া
দিনরাত্তির মনটাকে দেয় নাড়া।
এই নাড়াতেই লাগছে খুশি, লাগছে ব্যথা কভু,
বেঁচে-থাকার চলতি খেলা লাগছে ভালোই তবু।
বারেক ফেলা, বারেক তোলা, ফেলতে ফেলতে যাওয়া-
এ’কেই বলে জীবন তরীর চলন্ত দাঁড় বাওয়া।
তাহার পরে রাত্রি আসে, দাঁড়টানা যায় থামি,
কেউ কারেও দেখতে না পায় আঁধার-তীর্থগামী।
ভাঁটার স্রোতে ভাসে তরী, অকূলে হয় হারা
যে সমুদ্রে অস্তে নামে কালপুরুষের তারা॥