সেই সব শহীদেরা/এক বিস্মৃত বিপ্লবী
এক বিস্মৃত বিপ্লবী
১৯৪২ সালের জানুয়ারী মাস। প্রবল ঠাণ্ডা, শাপদ সংকুল অরণ্য, দুর্গম গিরিপথ ভেঙ্গে এগিয়ে চলেছেন কতিপয় বাঙালী তরুণ। সখের ভ্রমণ অভিযান নয়, নয় কোনো শান্ত মৌন মিছিল। জাপ সামরিক শাসনে বিপর্যস্ত বর্মা থেকে পালাবার সবকটি রাস্তা প্রায় রুদ্ধ। সমুদ্রপথ থেকে শুরু করে চতুর্দিকে কড়া প্রহরা, যাতে নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির একজন সদস্যও পালাতে না পারে।
একটি মাত্র পথ খোলা। আরাকান পর্বত অতিক্রম করে মণিপুর ও নাগাল্যান্ডের ভেতর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করা যায়। হাজার হাজার বর্মা প্রবাসী ভারতীয় ইতিপূর্ব এই পথে ফেরার চেষ্টা করেছেন। অনেকেই মারা গেছেন ভয়াবহ মারণ রোগ কলেরায়, হিংস্র পশুর আক্রমনে, ঠাণ্ডা কিংবা ক্ষুধায়, পথশ্রমে।
এই ছোট্ট দলটি সেই পথ ধরেই ধাবমান। তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন পুরোদস্তুর ডাক্তার এবং বর্মা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ডাঃ অমর নাগ। এই দুর্দান্ত যাত্রায় তাঁর সাথী বিপ্লবীরা ছিলেন গোপাল মুন্সী, গোবিন্দ ব্যানার্জী (যিনি কলেরা আক্রান্ত হয়ে পথেই মারা যান), মাধব মুন্সী প্রমুখ। এর প্রায় দু'মাস বাদে পাহাড় জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ২৯০ মাইল পদব্ৰজে এসে ইম্ফল-কোহিমা-ঢাকা হয়ে তাঁরা প্রবেশ করবেন কলকাতায়।
১৯১৭ সালের অক্টোবর বর্মা মুলুকে জন্মগ্রহণ করেন অমর নাগ। পিতা ছিলেন সে দেশের উচ্চপদস্থ রাজ কর্মচারী। ১৯৩৫ সালে রেঙ্গুনের বিখ্যাত বেঙ্গল অ্যাকাডেমী থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৪১-এ ডাক্তারি পাশ করেন কৃতিত্ত্বের সাথে। অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দুই গোষ্ঠীর বিপ্লবীদের সঙ্গেই তাঁর ছাত্রাবস্থায় যোগাযোগ ঘটে, তাঁদের প্রভাবে সশস্ত্র বিপ্লববাদে হাতেখড়ি হয় অমর নাগের। কমিউনিজমে আকৃষ্ট হন বর্মা কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব হরিনারায়ণ ঘোষালের সংস্পর্শে। ১৯৩৭ সালে ব্রহ্মদেশের অবিসংবাদিত নেতা আউং সানের (বর্তমান জননেত্রী ও নোবেল জয়ী সু-চি'র পিতা) ডাকে ডাঃ নাগ ও তাঁর সহকর্মীরা ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। খনিজ তেল শ্রমিক মহলে তাঁর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে গিয়েছিল খুব সহজেই। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে আউং সান-কে সম্পাদক নির্বাচিত করে প্রতিষ্ঠা হল কমিউনিস্ট পার্টি যা অচিরেই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ধরপাকড় ও নানারকম দমন পীড়নের মধ্যেই শ্রী নাগ সে দেশের বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নগুলিকে সংগঠিত করার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। সে সময় বর্মায় ভারতীয় শ্রমিকের সংখ্যা বেশি ছিল, বাংলা উড়িষ্যা অন্ধ্রপ্রদেশের গরীব জেলাগুলি থেকে হাজার হাজার মানুষ মজুরের কাজ নিয়ে আসতেন, তাঁদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব বিস্তার করে ফেললেন এই বাঙালী বিপ্লবী এবং প্রথম গ্রেপ্তার বরণ করলেন ১৯৪১-এর ফেব্রুয়ারী মাসে।
ইতিমধ্যে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে দেশজোড়া বিক্ষোভের মাঝে আউং সান চেষ্টা চালাচ্ছিলেন জাপানি সরকারের সাথে যোগাযোগ করার। জাপানিরা বর্মার নেতাদের সাহায্যের আশ্বাসবাণী শোনায়। অমর নাগ তখন ইনসিন জেলে বন্দী। প্রথমে সকলকেই সেখানে বন্দী করে রাখা হয়েছিল কিন্তু বন্দী কমিউনিস্ট নেতৃবর্গ ও সদস্যেরা যখন জেলকমিটি গড়ে তোলেন ও জেলের ভেতর থেকেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর হন তখন প্রমাদ গোনে ব্রিটিশ শাসক, তাঁরা বিভিন্ন জেলে বিপ্লবীদের হস্তান্তরিত করতে থাকে। নিউইয়াং লোবিন জেলে পাঠানো হয় নাগকে। ততদিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। ১৯৪১-এর শেষাশেষি জাপান আক্রমণ শানালো ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। পরের বছরই ইংরেজরা বর্মা ছেড়ে পালাতে আরম্ভ করে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বর্মার মানুষদের এই স্বাধীনতা সংগ্রামে আউং সান জাপানিদের সহায়তা চেয়েছিলেন, তাঁর আশা পূর্ণ হল। বর্মী জনসাধারণ স্বাগত জানালো জাপানিদের। যদিও দূরদর্শী নাগ ভালই বুঝতে পেরেছিলেন জাপানিদের আসল রূপ প্রকাশ পেতে দেরি হবে না এবং কমিউনিস্ট পার্টিসহ সমস্ত গনতন্ত্রপ্রিয় মানুষের ওপর অচিরেই নেমে আসবে জাপ সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ। একঝাঁক বাঙালি তরুন তখন গোপনে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা নিলেন যদিও সে ফিরে যাওয়া ছিল সাময়িক, আসল যুদ্ধ তখনও বাকি। জাপানিরা যখন রেঙ্গুন দখল করে অমর নাগ তখন কলকাতায়। তাঁর অন্য সহযোগীরা, হরিনারায়ণ ঘোষাল, অমর দে, সাধন ব্যানার্জীরাও জেল থেকে পালান। জাপ বোমাবর্ষণে জেল ভেঙ্গে গেছিল। আশ্চর্যজনকভাবে তাঁরা বেঁচে যান! এবং পুর্বল্লিখিত পথ ধরে তাঁরাও ফিরে আসেন ভারতে।
ডাঃ নাগ এদেশে ফিরে আরামে আয়েশে জীবন কাটাবার পরিবর্তে আত্মনিয়োগ করলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (অবিভক্ত) কাজে। দুর্ভিক্ষ ও মহামারী কবলিত বাংলায় ত্রান কমিটি গড়ে অগণিত চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন তিনি। সাথী হিসেবে পান ডাঃ কোটনিসের সহকর্মী ডাঃ বিজয় কুমার বসুকে। বিধানচন্দ্র রায়ের পরিচালনায় গড়ে ওঠা Bengal Medical Relief Co-ordination Committee-এর ডাক্তার হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চলে ক্যাম্প করে দিনের পর দিন কাজ চালিয়ে যান এই ক্লান্তিহীন বিপ্লবী। পার্টির অন্যতম শীর্ষনেতা রনেণ সেনের পরামর্শে ট্রামওয়ে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পার্কসার্কাস সেকশনে সংগঠকের কাজ করতে থাকেন। এ প্রসঙ্গে '৪৬ এর দাঙ্গা প্রতিরোধে ট্রাম শ্রমিকদের অসামান্য বীরগাথা' শীর্ষক রচনায় সুবোধ ব্যানার্জী তার সাথী শ্রী নাগের নাম সশ্রদ্ধ চিত্তে উল্লেখ করেছেন।
ওদিকে বার্মার রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত গতিপথ বদলায়। বাঙালী বিপ্লবীদের আশঙ্কা সত্যি হল। আউং সানের কাছে দেরীতে হলেও জাপানিদের সাম্রাজ্যবাদী চেহারা প্রকট হয়ে পড়ে এবং গোটা দেশজুড়ে নয়া বিদেশী হানাদারদের বিরুদ্ধে মাথাচাড়া দেয় মুক্তি আন্দোলন, ইতস্তত গেরিলা সংগ্রাম। ইংরেজ শৃঙ্খল থেকে রেহাই পেয়ে জাপানিদের ফ্যাসিস্ট শাসন কখনোই কাম্য ছিল না বর্মিজ জনগণের, তাঁরা কমিউনিস্ট পার্টির দেশজোড়া গণ অভ্যুত্থানের ডাকে সাড়া দিল। রেঙ্গুনের বুকে প্রকাশ্যে জাপানিদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলেন প্রধান জাতীয়তাবাদী নেতা আউং সান। ফলত সাম্রাজ্যবাদীদের ভাড়াটে ঘাতকবাহিনীর হাতে নিহত হতে হল তাঁকে কিছুকাল পরেই। ততদিনে অবশ্য যুদ্ধে জাপানের পরাজয় ঘটেছে।
১৯৪৬-৪৭ সালে ভারতবর্ষের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে যুদ্ধপীড়িত বিপদসংকুল বার্মায় একে একে প্রবেশ করেছেন ডাঃ নাগ ও তাঁর সাথীরা, যে বর্মা হবে তাঁদের শেষ রণক্ষেত্র। যোগ দিয়েছেন Anti Fascist Liberation Front এ। আউং সানের মৃত্যুর পর কমিউনিস্ট পার্টির সংকটের দিনে তাঁদের এই প্রত্যাবর্তন নতুন করে আশা জাগালো সেদেশের হাজারো মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে। ৪৮ সাল থেকে শুরু হল গোটা দেশজুড়ে গণ আন্দোলন। শাসকের দমনপীড়ন, জেল, গুপ্তহত্যা, বিচারের প্রহসনাতে খুন, কিছুই আটকাতে পারেনি সেদিনের অকুতোভয় ফ্যাসিবিরোধী সৈনিকদের। মুক্তিফৌজের দখলে এল দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। রেঙ্গুন জেনারেল হাসপাতালের সুখের চাকরি ছেড়ে এক শহর থেকে অন্য শহর, গ্রাম-নগর, পাহাড় জঙ্গল বন্দর তোলপাড় করে বেড়াচ্ছেন পার্টির মেডিক্যাল বাহিনীর প্রধান তথা পলিটব্যুরো মেম্বার দুর্ধর্ষ বিপ্লবী অমর নাগ। জীবিত বা মৃত যার মাথার দাম শাসকের কাছে তখন অনেক। ইতিমধ্যেই বিপ্লবী সরকারের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ১৯৪৮-এর ৪ঠা এপ্রিল প্রোম শহর দখল করে জেল ভেঙ্গে বন্দীদের বের করে এনেছেন সাধারণ মানুষ। রেঙ্গুন ছাড়া দেশের প্রায় সবকটি বন্দীশালা চুরমার হয়ে গেছে! গ্রামের কৃষকসভা ও গনমুক্তি কমিটি যৌথভাবে দখলিকৃত অঞ্চলগুলির শাসনভার তুলে নিয়েছিল সেই ক্রান্তিকালে!
তবে এ জয় ছিল সাময়িক। এরপরের ইতিহাস আশাভঙ্গের। বেদনার এই গৌরবময় মুক্তিসংগ্রাম তথাকথিত সাফল্যের মুখ দেখেনি। শাসকের কূট চক্রান্ত, পাশাপাশি প্রবল দমননীতির সামনে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হল বিপ্লবী সরকার। পার্টির কৌশলগত ত্রুটিও কিছুটা দায়ী ছিল এই পরিণতির জন্য।
ডাঃ নাগ সহ যে পাঁচজন বাঙালী বিপ্লবী বার্মা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন তাঁরা আর কেউই ফিরে আসেননি ভারতবর্ষে। ১৯৬০ সালের মধ্যেই ডাঃ নাগের সব সাথীরা এঁকে এঁকে মৃত্যুবরণ করেছেন বর্মার মাটিতে। হরিনারায়ণ ঘোষালের মৃত্যু রহস্যাবৃত, অনেকেই মনে করেন দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন হন তিনি। অমর দে মারা যান দুর্ঘটনায়, গোপাল মুন্সি ও সুবোধ মুখার্জি দুজনেই সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। ফেরেননি অমর নাগও! হাল ছাড়েননি তিনি। একা কুম্ভের মতো লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন অ্যান্ট ফ্যাসিস্ট লিবারেশন ফ্রন্টের এই অদম্য যোদ্ধা। সাথীহারা হয়ে টানা আটটি বছর! শেষ পর্যন্ত ১৯৬৮-এর ৯ই নুভেম্বর বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি সেনাবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়। সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হন অমর নাগ এবং যুদ্ধ শেষে বীরের মৃত্যু বরণ করেন।
তাঁর সংগ্রামী জীবনচর্যা প্রমাণ করে যে হাত মানুষের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা করতে পারে, প্রয়োজনে সেই হাত রাইফেলও তুলে নেয়। একজন সাধারণ ডাক্তার বৃহত্তর মানবসমাজের স্বার্থে জীবন দিয়ে লিখে যান অসামান্য জীবনেতিহাস।
তোমায় অনেকে জিগ্যেস করতো
তোমার দেশ কোথায়?
আর তুমি হেসে জবাব দিতে,
সেখানেই, যেখানে আমি বিপ্লবের লড়াইতে।
-চে হুই কান (ভিয়েতনামী কবি)
পন্ডিতেরা বলেন, আন্তর্জাতিকতাবাদী কমিউনিস্টদের নিজস্ব কোনো দেশ থাকে না। তাহলে ডাঃ নাগ ও তাঁর সাথীদের ক্ষেত্রেও এ কথাটি ভীষণভাবে প্রযোজ্য। পৃথিবীর যেখানে যে প্রান্তে নিপীড়িত মানুষের কান্না আর দীর্ঘশ্বাস গুমরে মরে সেখানেই তাঁরা ছুটে যান, সেটাই হয়ে ওঠে তাঁদের মহান মাতৃভূমি। সাত্রের ভাষায় “মাতৃভূমি তাঁকে পরিত্যাগ করে না, যেখানেই সে যায়, যেখানেই তাঁর অবস্থান, সেখানেই মাতৃভূমি। মাতৃভূমি তাঁকে অনুসরণ করে কারণ তাঁর মুক্তি ও মাতৃভূমি অভিন্ন। এক।“
“The Nation does not shrink from him, wherever he goes, wherever he may be she is.... she follows, and is never lost to view for she is one with his Liberty"
বিশিষ্ট বামপন্থী চিন্তাবিদ ও প্রাবন্ধিক গৌতম চট্টোপাধ্যায় চমৎকার মূল্যায়ন করেছেন এই বিপ্লবীদের সম্পর্কে-
“কৃতী ছাত্র, আরামের জীবন ছেড়ে তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন বর্মার গরীব কৃষকের স্বার্থকেই নিজেদের স্বার্থ বলে। ২০ বছর ধরে তাঁদের ঘরবাড়ি ছিল বর্মার জঙ্গলে, বর্মার পাহাড়। রাজনীতির ভুলভ্রান্তি যাই হোক মুহুর্তের জন্যেও তাঁরা বর্মার মেহনতি জনতার সঙ্গে বেইমানি করেননি এবং শেষ পর্যন্ত বরণ করেছেন শহীদের মৃত্যু। “
ব্রহ্মদেশ তাঁকে মনে রেখেছে কিনা আমাদের জানা নেই অন্তত এদেশের ঠাণ্ডা ঘরে বসা কমিউনিস্টরা (!) বা হালফিলের সখের বিপ্লবীরা যে ডাঃ নাগের জীবনাদর্শে বিন্দুমাত্র প্রাণিত হননি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সেই দেশ বড়ো দুর্ভাগা যে দেশে কোনো বীর নেই।
সেই দেশেও দুর্ভাগা যেখানে কেবলই বীরের প্রয়োজন হয়!
কিন্তু সেই দেশে সবচেয়ে দুর্ভাগা নয় কি যে দেশে বীরদের ক্রমাগত
ভুলে যায় দেশবাসী?
কারা ভুলে যাবে আর কারাই বা মনে রাখবে সে ভবিষ্যত চিন্তা করে অমর নাগের মতো সর্বস্বত্যাগী যোদ্ধা রণভূমিতে পদার্পণ করেন না। তাঁদের প্রানের বিনিময়ে প্রাপ্ত সুফল পরবর্তী প্রজন্ম ভোগ করে। মানুষের মৃত্যু ঘটে, বেঁচে থাকে আদর্শ। শহীদের অপাপবিদ্ধ অস্থি দিয়ে তৈরি হয় অস্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে ভাবীকালের বিপ্লবীদের হাতের আয়ুধ।
পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে, প্রতিটি দেশে, প্রত্যেকটি পরাধীন মানুষের মুক্তি না হওয়া অবধি অমর নাগদের পথ চলা ফুরোয় না। তাঁরা অসীম দুঃসাহসের রাষ্ট্রশক্তিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। শাসকের রক্তচক্ষু, শোষকের বাহুবল তাঁকে ভয় দেখাতে পারে না। ঘাতকের বুলেট, ফাঁসির দড়ি, গ্যাস চেম্বার তাঁকে শেষ করতে পারে না কারণ তাঁর মরণের ভারে হার মানে স্বয়ং পাহাড় হিমালয়।
তাঁর খোলা চোখে এলো আস্তে আস্তে ভোরের আকাশ
সেই চোখে চোখে রাখে এত সাধ্য ছিল না খুনির
ও যেখানে শুয়ে আছে সেখানেই জয়ের সম্মান
সেখানেই সূর্য ওঠে, সেখানেই জেগে থাকে ধান
--রাম বসু
অক্টোবর, ২০১৩