স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা/তৃতীয় অধ্যায়
আজ্ জোহরা-প্রাসাদ ও উপনগরী।
ভূপাল-কুল-ভূষণ মহামতি খলিফা তৃতীয় আব্দর রহমান তাহার প্রিয়তমা রাজ্ঞী আজ্-জোহরার অভিলাষানুযায়ী মহানগরী কর্ডোভার পার্শ্বে এক অপূর্ব্ব সৌন্দর্য্যময় উপনগরের পত্তন করেন। পাত্রী-পাহাড়ের (Hill of the bride) পাদদেশে এক বিশাল ভূখণ্ডে অত্যল্প সময় মধ্যে আজ্-জোহরা নগরী সৌধমুকুট-ভূষিত শীর্ষ-দেশ উন্নত করিয়া সৌন্দর্য্য-লহরীলীলায় স্পেন সাম্রাজ্য বিমোহিত করিয়াছিল। সাম্রাজ্যের বার্ষিক রাজস্বের এক তৃতীয়াংশ জোহরা নগরীর সংগঠন এবং সৌষ্ঠব সাধনে ব্যয়িত হইত। খলিফা আব্দর রহমান পঞ্চ- বিংশতি বর্ষকাল অনবরত ইহার রমণীয়তা পরিবর্দ্ধনে সযত্ন ছিলেন। তৎপর তাহার পুত্রের রাজত্বের পঞ্চদশ বর্ষও এই নগরীর সৌন্দর্য্য এবং পরিপুষ্টি-সাধনে ব্যয়িত হয়। ফলতঃ পিতা-পুত্রে চত্বারিংশৎ বর্ষে এই ইতিহাস-বিশ্রুত আশ্চর্য্য এবং অপূর্ব্ব নগরীর নির্ম্মাণকার্য্য নিষ্পন্ন করে। প্রত্যহ দশ হাজার শিল্পী এবং ভাস্কর এই নগরের জন্য পরিশ্রম করিত। নগরের প্রাসাদাবলীর জন্য দৈনিক ছয় সহস্র খণ্ড শ্বেত প্রস্তরের টুক্রা (Block) কর্ত্তিত এবং মসৃণীকৃত হইত। তিন হাজার গো, অশ্ব, উষ্ট্র, প্রস্তরাদি বহনে প্রত্যহ নিযুক্ত থাকিত। প্রত্যহ চারি হাজার মর্ম্মরস্তম্ভ এই নগরের প্রাসাদাবলীর জন্য প্রোথিত হইত। স্তম্ভগুলি কনষ্টাণ্টিনোপল, রোম, কার্থেজ, কায়রো এবং স্ফাক্স হইতে আনীত হইত। গৃহ-নির্ম্মাণের অন্যান্য মার্ব্বেলখণ্ড তারাগোণা এবং আলমোরিয়া নগরে কর্ত্তিত এবং খোদিত হইত। আজ্ জোহরা নগরীর প্রাসাদগুলিতে পঞ্চদশ সহস্ৰ লৌহ এবং সমুজ্জ্বল কাংস্যের সুবৃহৎ দ্বার ছিল। এই নবনির্ম্মিত নগরের খলিফার দরবার-গৃহ অত্যন্ত জমকাল সৌন্দর্য্যযুক্ত ছিল। ইহার দেওয়াল ও ছাদ সমস্তই দুগ্ধফেননিভ কলঙ্কশূন্য মর্ম্মরপ্রস্তরে গঠিত এবং স্বর্ণের চুর্ণজালে রঞ্জিত এবং চিত্রিত ছিল। এই দরবার-গৃহেই কনষ্টাণ্টিনোপলের গ্রীক-সম্রাট প্রদত্ত বিচিত্র এবং সুবৃহৎ ফোয়ারার সলিলোৎক্ষেপ দেখিতে পাওয়া যাইত। গ্রীক-সম্রাট্ এই অপূর্ব্ব ফোয়ারার সহিত কুক্কুটডিম্বাকৃতি একটা অতুলনীয় বৃহৎ মুক্তা উপহার প্রদান করিয়াছিলেন। দরবার-গৃহের বিশাল হলের কেন্দ্রস্থলে পারদপূর্ণ একটা চৌবাচ্চা ছিল। ইহার উভয় পার্শ্বে হস্তিদন্ত এবং আবলুস কাষ্ঠ-নির্ম্মিত মৌক্তিকভূষা-ভূষিত মণিখচিত আটটী করিয়া দরজা ছিল। প্রভাতে যখন বালার্কের লোহিত রশ্মিমালা এই সমস্ত দ্বারের মধ্য দিয়া এই পারদ-হ্রদে পতিত হইত, তখন জ্বলজ্বলায়মান পারদপুঞ্জের বিজলীগঞ্জন আলোকশিখায় সমগ্র কক্ষ উদ্ভাসিত এবং তাহা নানা বর্ণের মণিমুক্তা প্রবাল পান্না স্বর্ণ হীরকাদি-খচিত সিংহাসন এবং কাচের দর্পণ-মালায় প্রতিফলিত হইয়া কর্ব্বুর বর্ণের অপ্রকল্প্য সৌন্দর্য্যের তরঙ্গভঙ্গময় এক অপূর্ব-দৃশ্য-আলোক-সমুদ্রের সৃষ্টি করিত। পারদ-হ্রদের বিচ্ছুরিত খরতর আলোকপুঞ্জে সভাসীন পারিষদবর্গের চক্ষু ঝলসিয়া যাইত বলিয়া তাহারা হস্ত দ্বারা চক্ষু আবৃত করিতেন।
ঐতিহাসিক এবং কবিগণ বর্ণনা করিয়াছেন যে, ‘মাদিনাৎউজজোহরা’ অর্থাৎ জোহরা নগরীর সৌন্দর্য্যাগার প্রাসাদাবলী, সুশোভন উপবনাবলী বহুদূর পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ইহার দ্রুতগামী প্রবাহজাল এবং উৎসপুঞ্জ, ছাত্রপূর্ণ কলেজ এবং মাদ্রাসা, বিচিত্র পণ্যপূর্ণ আপণাবলী, রাজকীয় কর্ম্মচারীদিগের জাঁকজমকপূর্ণ গমনাগমন, সৈনিক, ক্রীতদাস এবং বালক ভৃত্যদিগের জরীর পরিচ্ছদ এবং চাকচিক্যময় উর্দ্দি, মহিলাদিগের নয়ন-শোভন পরিচ্ছদ ইত্যাদি সমস্তই সুখদৃশ্য এবং কর্ডোভার অনুযায়ী ছিল।
সম্রাজ্ঞী আজ্ জোহরার প্রিয় নিকেতন জোহরা প্রাসাদ অতীব বিরাট্ এবং অতুল বিভবময় ছিল। স্পেনের অন্যতম মহানগরী গ্রাণাডার আল্ হাম্রা প্রাসাদ ব্যতীত জোহরার ন্যায় বিরাট্ প্রাসাদ পৃথিবীর কুত্রাপি আর পরিলক্ষিত হইত না। ইহা একটী ক্ষুদ্র নগরীর তুল্য ছিল। প্রাসাদে ১৩ হাজার ৭ শত ৫০ জন পুরুষ ভূত্য ছিল। ইহাদের খাদ্যের জন্য প্রত্যহ ১৩ হাজার পাউণ্ড মাংস দেওয়া হইত। অন্তঃপুরে সম্রাজ্ঞী সখী, কন্যা, ভগিনী, সৈরিন্ধ্রী, আত্মীয়া, এবং ক্রীতদাসী ও পরিচারিকা সহ স্ত্রীলোকের সংখ্যা ছয় হাজার তিনশত চৌদ্দ জন ছিল। উহাদের আদেশ পালন এবং সেবা-শুশ্রূষার জন্য তিন হাজার তিন শত পঞ্চাশ জন বালক-ভৃত্য ও খোজা নিযুক্ত ছিল। ইহাদের জন্যও ১৩ হাজার পাউণ্ড মাংস দৈনিক বরাদ্দ ছিল। একুনে জোহরা-প্রাসাদে সর্ব্বশুদ্ধ ২৩ হাজার ৪১৪ জন নর নারী বাস করিত। পাঠক চিন্তা করুন, ইহা কিরূপ বিরাট্ প্রাসাদ ছিল। এই বিপুল-সংখ্যক অধিবাসীর জন্য প্রত্যহ ২৬ হাজার পাউণ্ড মাংস ব্যতীত আরও প্রচুর পরিমাণে পক্ষিমাংস, মৎস্য ও বিবিধ প্রকারের তরী-তরকারী, শাকসব্জী এবং সুস্বাদু ফল মূল সরবরাহ করা হইত। পানের জন্য পিরিণীজ পর্ব্বত হইতে শতশত মণ বরফ প্রত্যহ আনীত হইত। সিরীয়ার বেদানা, আরবের খর্জ্জুর, তায়েফের মধু, ইটালী এবং সিসিলী দ্বীপের আঙ্গুর এবং তদ্ব্যতীত স্পেনের রাজকীয় উদ্যানাবলী হইতে প্রত্যেক ঋতুতে অপর্য্যাপ্ত ফল মূল সংগৃহীত হইত। প্রতি শুক্রবারে জোহরা-প্রাসাদ হইতে নানাপ্রকারের উপাদেয় খাদ্য, ফল মূল এবং মিষ্টান্ন প্রভূত পরিমাণে অনাথ-আশ্রমে, পান্থশালায় এবং দরিদ্রদিগের মধ্যে বিতরিত হইত।
প্রাতঃস্মরণীয়া সম্রাজ্ঞী আজ্ জোহরা যেমন অতুলনীয় রূপবতী, তেমনি গুণবতী এবং বুদ্ধিমতী ছিলেন। দীন-দরিদ্রে তাঁহার অসাধারণ দয়া এবং অনুগ্রহ ছিল। পবিত্র রমজান মাসে তিনি দীন দরিদ্রের আহার এবং পারণার জন্য প্রচুর অর্থব্যয় করিতেন। জোহরা-প্রাসাদের বিরাট্ দীর্ঘিকায় মৎস্যকুলের আহারের জন্য দ্বাদশ সহস্র পাঁউরুটী এবং শস্য বিতরিত হইত। পাঁউরুটীগুলি জলের উপর ভাসিতে থাকিত এবং দীর্ঘিকার অসংখ্য মৎস্য সেইগুলি আহারের জন্য কুর্দ্দন এবং উল্লম্ফন করিয়া আনন্দোল্লাস প্রকাশ করিত। সকালে এবং বৈকালে এই বিরাট্ দীঘিতে রুটী নিক্ষেপকালে এক সুন্দর চিত্তরঞ্জন দৃশ্য প্রতিভাত হইত।
প্রাসাদের উদ্যানে বিভিন্ন প্রকারের বন্যজন্তু, নানাবর্ণের ময়ূর, পারাবত, হংস, টীয়া, ময়না, পাপিয়া, নাইটিংগেল, ক্যানারী, বুলবুল, কাকাতুয়া, নুরী, খঞ্জন, গুঞ্জনপক্ষী, কোকিল, উটপক্ষী, তিত্তির, পেরু, অসংখ্য প্রকারের বন্যহংস এবং আফ্রিকার নিবিড় অরণ্যানী এবং ভারতসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের বিচিত্রদর্শন, মধুরকণ্ঠ বিহঙ্গমশ্রেণীতে পরিপূর্ণ ছিল। বসন্তকালে নবপত্র-পল্লব-বিমণ্ডিতবাসন্তী-শোভা-বিচ্ছুরিত বিহঙ্গ-কণ্ঠস্বর-নিনাদিত উদ্যানের দৃশ্য নিতান্তই মনোমদ বলিয়া বোধ হইত। শত শত আরব ঐতিহাসিক এবং বৈদেশিক পরিব্রাজকগণ জোহরা-প্রাসাদের এই বিপুল এবং অনুপম ঐশ্বর্য্য এবং সৌন্দর্যচ্ছটায় বিমুগ্ধ হইয়া মুক্তকণ্ঠে ইহার গুণকীর্ত্তন করিয়াছেন। আল্মেকারি বলেন, পৃথিবীর নানাদেশের পরিব্রাজক, রাজপুত্র, আমীর, বণিক্, দরবেশ, শিল্পী, ঐতিহাসিক এবং কবিগণ জোহরা প্রাসাদ দর্শন করিয়া সকলেই একবাক্যে সবিস্ময়ে ইহার অতুলনীয়তা, বৈচিত্র্য, দৃঢ়তা, বিশালতা এবং গঠনকৌশলের প্রশংসা কীর্ত্তন করিতেন।
জোহরার অনুপম উদ্যান, মূর্ত্তিময় আশ্চর্য্য ফোয়ারা সকল, স্তম্ভাবলীর মসৃণতা এবং খোদাই-কৌশল, গম্বুজবিশিষ্ট অঙ্গুরীয়ক কুঠরী গুলি, স্বর্ণবর্ণ বিরাট কক্ষ, সমুচ্চ চূড়াচয়, প্রস্তরখণ্ড সমূহের সম্মিলনের অলক্ষ্যতা, কারুকার্য্যের বিচিত্রতা এবং সূক্ষতা, দ্বারসমূহের প্রকাণ্ডত্ব এবং দৃঢ়ত্ব, জানালাগুলির জাফরীর কার্য্য, অতুল বৈভবের পরিচায়ক সাজসজ্জা, দ্বিরদ-রদ-রচিত রম্য আসন, মৌক্তিক ঝালর, মণিদাম-খচিত ক্ষৌম এবং কোঁষেয় চন্দ্রাতপ ও জ্যোতিতিরস্করিণী পরস্পর স্বর্ণ ও রৌপ্য-শৃঙ্খল-সংবদ্ধ বেল্লর ও ধাতব ঝাড়, লণ্ঠন, ফানুস, বেল এবং প্রজাপতি সমূহ, রজত-কাঞ্চন-মণি-মুক্তা-প্রবাল-পান্না-হীরক-মরকতাদি নির্ম্মিত এবং খচিত কৃত্রিম ফলফুলময় বৃক্ষাবলী এবং লতাবিতান, প্রস্তরমূর্ত্তি দর্পণশালা, সুন্দর জলাশয় প্রভৃতি, মানবীয় কল্পনার অতীত শোভায় এবং সৌন্দর্য্যে বিভূষিত ছিল। কামিনী-কাঞ্চন-সংশ্রব-রহিত ভোগবিলাস-শূন্য খেলকা-পরিহিত দরবেশ এবং উদাসীনগণ পর্য্যন্ত এই প্রাসাদ দর্শন করিয়া ভক্তিপ্লুত অন্তরে মুক্তকণ্ঠে বলিতেন “ধন্য সেই বিশ্বপতি! যিনি মানবকে এতাদৃশ ঐশ্বর্য্য এবং সমৃদ্ধি প্রদান করিয়াছেন।”
এই মহাপ্রাসাদ নির্ম্মিত হইলে এখানেই খলিফা নাভেরী এবং সানকোর রাণীদ্বয়কে সাদরে অভ্যর্থনা করিয়াছিলেন। এই প্রাসাদেই কন্ষ্টাণ্টিনোপলের গ্রীক সম্রাটের দূতকে সাদরে গ্রহণ করিয়াছিলেন। ৩৩৮ হিজরী (৯৫৯ খ্রীষ্টাব্দ) এগারই রবি-অল-আউয়াল শনিবার জোহরা প্রাসাদের গম্বুজহলে গ্রীক রাজদূতের অভ্যর্থনার দিন নিৰ্দ্ধারণ করিয়া রাজ্যের যাবতীয় উচ্চপদস্থ রাজকর্ম্মচারিবৃন্দকে আহ্বান করেন। তদুপলক্ষে দরবারমন্দির বহুমূল্য মণিমাণিক্যময় এবং আশ্চর্য্যদর্শন সাজসজ্জায় সজ্জিত এবং ভূষিত হয়। স্বর্ণসূত্রে মুক্ত-গ্রথিত ঝালরসমূহ এবং কৌষেয় যবনিক সমূহ দ্বারে দ্বারে দোদুল্যমান হয়। মুক্তামালা সহ সদ্য প্রস্ফুটিত পুষ্পমালা এবং অপূর্ব্ব বর্ণের পতাকারাজিতে স্তম্ভাবলীর শোভা সম্পাদন করা হইয়াছিল। বিচিত্রবর্ণের বিচিত্র চিত্রের বহুমূল্য গালিচা এবং মখমল ও কিঙ্ক্ষাপে গৃহতল বিমণ্ডিত এবং তদুপরি সূর্য্যরশ্মি প্রতিঘাতী বহুরত্ন সংযুক্ত বহুযত্নবিনির্ম্মিত এক অপূর্ব্ব সিংহাসন স্থাপিত করা হয়। সিংহাসনের উভয় পার্শ্বে শাহজাদাগণ, তৎপর উজার ও ওমারাহগণ, তৎপর সেনাপতি ও শাসন-কর্ত্তাগণ, তৎপর সর্দ্দার ও সামন্তগণ, ঝলঝলায়মান মণি-খচিত স্বর্ণময় পরিচ্ছদ এবং বহুমূল্য উষ্ণীষে বিভূষিত হইয়া যথাস্থানে পদগৌরবানুযায়ী দণ্ডায়মান হইয়াছিলেন। খলিফা সিংহাসনে মধ্যাহ্ন মিহিরের ন্যায় প্রতাপচ্ছটায় উপবেশন করিলে সকলেই আসন পরিগ্রহ করিয়াছিলেন। তৎপর কনষ্টাণ্টিনোপলের গ্রীকরাজ-দূতগণ আহূত হইয়া দরবারে প্রবেশ করিয়াছিলেন। দূতগণ দরবারে প্রবেশ করিয়াই দরবারের অপূর্ব্ব দৃশ্য অসীম জাকজমক এবং খলিফার অতুল প্রতাপমহিমা দর্শন করিয়া বিস্মিত এবং স্তম্ভিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। তৎপর তাহার কয়েকপদ অগ্রসর হইয়া লীওর পুত্র গ্রীক সম্রাট কনষ্টাণ্টাইনের নীলবর্ণ কাগজে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত ‘শাহীনামা’ খানি সোলতানের হুজুরে পেশ করিয়াছিলেন। খলিফা আব্দর রহমান এই দরবার উপলক্ষে তাঁহার সভার সর্ব্বপ্রধান বক্তাকে বক্তৃতা প্রদানের জন্য আহ্বান করেন। বক্তা দরবারে প্রবেশ করিয়া কল্পনাতীত আড়ম্বর এবং ঐশ্বর্য্য ও সমৃদ্ধির জাঁকজমক এবং খলিফার অপরিসীম প্রতাপ ও ক্ষমতায় এমনি বিমোহিত এবং বিত্রাসিত হইয়া পড়িয়াছিলেন যে, তিনি বাক্শূন্য অবস্থায় সংজ্ঞাহীন হইয়া ভূপতিত হইয়াছিলেন। অনন্তর অপর একজন খ্যাতনামা বক্তা বক্তৃতার জন্য দণ্ডায়মান হইয়া সবিস্ময় অন্তরে ২।৪টী কথা উচ্চারণ করিয়া গৃহতলে বসিয়া পড়িয়াছিলেন।
খলিফা জোহরা প্রাসাদ নির্ম্মাণে এমনি উন্মত্ত হইয় পড়িয়াছিলেন যে, তিনি ক্রমাগত তিন শুক্রবার মস্জেদের সামাজিক প্রার্থনায় অনুপস্থিত হন। চতুর্থ শুক্রবারে মস্জেদে উপস্থিত হইলে ধর্ম্মাচার্য্য তাঁহাকে তিরস্কার করেন এবং নরকের কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেন। সোলতান সাশ্রুনয়নে দীনভাবে তাঁহার অপরাধ মার্জ্জনার জন্য ঈশ্বর-সমীপে প্রার্থনা করেন।